Site icon Bangla Choti Kahini

এন্ট্রান্সের পর পর্ব ৩

আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি বাইরে বিকেলের আলো। মোবাইলে চোখ রাখতেই দেখি বাজে প্রায় পাঁচটা। ঘরের চারপাশে তাকিয়ে দেখি—অনিসা নেই। চিপসের খালি প্যাকেট, আধখালি কোকের বোতল গড়িয়ে আছে মেঝেতে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। হাফ প্যান্টটা খুঁজে পরে নিলাম। এরপর চোখে পড়ল—ওর পার্স। মানে, অনিসা এখনও এখানেই কোথাও আছে। আর one piece টাও গোড়া হয়ে পড়ে আছে খাটের একদিকে।

আমি ডাকতে শুরু করলাম,
“অনিসা?”
কোনো সাড়া নেই।

ঘরের আলো নিভে আছে, শুধু বাথরুম থেকে হালকা একটা আলো এসে পড়ছে দরজার ফাঁক গলে। দরজাটা পুরো বন্ধ নয় । আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম, কানের কাছে নিয়ে শুনলাম—

জলের শব্দ নয়। নিঃশ্বাসের।
কিন্তু সেই নিঃশ্বাসটা ছেঁড়া ছেঁড়া। যেন কেউ কাঁদছে।

আমি দরজায় ধাক্কা দিলাম।
“অনিসা?
কি হয়েছে? কাদছ কেনো?

ভেতর থেকে একটা গলা এলো।
ঠান্ডা। শুকনো।
“তুই কেনো ওদের মত নয়?”
আমি এক ধাক্কায় পেছনে সরে এলাম।

আমি হা করে জিজ্ঞেস করলাম,
“ওদের মানে কে?”

দরজা খুলে গেল।

ভেতরে দাঁড়িয়ে অনিসা।
সম্পূর্ণ নগ্ন। চোখে জল, গালে লালচে ছাপ।

ওর চোখে কষ্ট নেই—রাগ নেই—শুধু ভীষণ একটা ভাঙা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।

“বাকিদের মত অবহেলা না করে কেনো জড়িয়ে রাখলি আমায়?,”
ওর গলা শান্ত, অথচ ধ্বংসাত্মক।
“আমাকেতো কেউ মানুষ হিসেবে দেখেই না রে ভাই আমার এটার অভ্যেস নেই! …”
আমি নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলাম।
ওর গায়ে কোনো কাপড় নেই। ওর গায়ে একটা টাওয়েল দিয়ে আমি ওকে জড়িয়ে টেনে ধরলাম আমার বুকে।
কেনো জানিনা, বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
প্রন্তিকার সাথে যখন প্রেম করতাম, তখন আমি খুব কেয়ারিং ছিলাম। খুব…….
তাকে ছেড়ে আসার পর ইমোশন ব্যাপারটা সেভাবে আমায় জড়াতে পারেনি।

কিন্তু তারপর?
তারপর জীবন আমার থেকে আমার নরম দিকগুলো কেটে নিয়ে গেছে।
আর রেখে গেছে কেবল ঠান্ডা, বীর্য ভরা শরীর।
আমি অনিসাকে শক্ত করে ধরে বললাম,
“ভুল হয়ে গেছে … আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। বিশ্বাস কর। আমি সত্যিই চেয়েছিলাম শুধু একটু মানুষ হয়ে থাকতে তোমার সাথে থাকতে।”
কিন্তু আজ, কাম বাদে যদি কিছু থাকে আমাদের মধ্যে… সেটার দায় আমি নিতে রাজি।”
অনিসা আস্তে করে ফিসফিস করল—
“আমি আসলে চাইনি তোকে চুদতে… আমি চেয়েছিলাম তোকে বিশ্বাস করতে।”
আমার চোখ জ্বালা করতে লাগল।
অবাক লাগছে—একটা ল্যাংটো মেয়ে, যাকে আমি কিছুক্ষণ আগেও কামনার ফ্যান্টাসিতে ভরিয়ে রেখেছিলাম, এখন বুকের ভেতর এমন একটা কিছু ঢুকিয়ে দিচ্ছে, যেটা আমার সিগারেট খাওয়া ফুসফুস পুড়িয়ে দিচ্ছে।
অনিসা আমার বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে বলল—
“তুই একটু আমাকে ধরে থাক, ঠিক এইভাবে।”
আমি কিছু বললাম না।
ওকে নিয়ে বেডে এলাম।
ওর শরীরে একটা চাদর জড়িয়ে দিলাম।
আমরা দু’জনেই চুপচাপ শুয়ে রইলাম।
ও আমার বুকে মাথা রেখেছিল।
একটা সময় ও ফিসফিস করে বলল—
“তুই জানিস, আমি কেন এতো easily ভেঙে পড়ি?”

আমি কেবল মাথা নাড়লাম।

“আমার শৈশব মানে ছিল কেবলই অপেক্ষা
একটা জন্মদিনেও আমি পুরো কেকটা কাটতে পারিনি সময়মতো।
আমি অপেক্ষা করতাম—টুপি পরে, কেকের সামনে দাঁড়িয়ে, জ্বলন্ত ক্যান্ডলের সামনে।
আর মা-বাবা… ওরা অন্য ঘরে ঝগড়ায় ব্যস্ত।
চিৎকার, মারপিট, ভাঙা বাসন, মাটিতে পড়ে থাকা মা।”
আমি শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকলাম অন্ধকারে।

“একবার আমার বাবা মাকে এমন মারছিল… আমি কাঁপতে কাঁপতে খাটের নিচে ঢুকে পড়েছিলাম।
মা কাঁদছিল, কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল।
আমি বালিশে কান চেপে ধরি যেন কিছু না শুনি।
কিন্তু শোনার থেকেও খারাপ হল ‘না শোনাটাই’।
কারণ তখন আমি বুঝতে পারতাম—এই নীরবতাতেই আমি বড় হচ্ছি।”

ওর হাত কাঁপছিল আমার বুকে।

“তুই বুঝবি না… মা ছিল একঘরে আবদ্ধ মোমবাতি, যেটা কেউ নিভিয়ে দেয়ার আগেই জ্বলে জ্বলে নিঃশেষ হয়ে গেছিল।
আর বাবা? উনি কেবল একজন লোক যে বুঝতেই পারেনি মেয়ে মানে শুধু খরচ না, ভালোবাসার দাবিদারও।”

আমি ধীরে ধীরে বললাম—
“তোর জীবনে কেউ আদর করে জিজ্ঞেস করেনি, ‘তুই কেমন আছিস?’…”

ও হেসে ফেলল।
ফাটা, ফাঁকা হাসি।

“না রে ভাই, কেউ করে না।
সবাই ভাবত, আমি strong. মা বলতো—তুই একজন মেয়ে, ভাঙবি না।
আর আমি মাকে দেখেই শিখেছি কীভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাওয়া যায়, কোনো চিৎকার চেঁচামেচি ছাড়াই।

আমি এবার ওর মুখটা নিজের হাতে তুলে ধরলাম।

“আমি তোর সব কষ্ট মুছে ফেলতে পারব না, অনিসা।
কিন্তু যদি তুই চাস…..”

ওর চোখে এবার জল নয়, একফোঁটা বিশ্বাস।

“তুই থাকবি?” ও জিজ্ঞেস করল, শিশুর মতো করে।

আমি বললাম—
“আমি যাব না।
অনিসা মাথা রেখে শুয়ে থাকলো। আমিও ওকে হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখলাম নিজের বুকের কাছে। জানি না কেনো তবে প্রচুর প্রান্তীকার কথা মনে পড়ছিল। আমার চোখটা আবার বুজে এলো।

____________

চোখ আবার খুলল বেশ একটু পরেই। দেখলাম আনিশা ওভাবেই আমার ওপর শুয়ে আছে। একদম বাচ্চাদের মত শক্ত করে ধরে। যেন কোনো স্বপ্নে ও বুঝেছে যে সে আমায় হারাতে চায় না।
আমি এক হাতে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিলাম।
সেই শীতল, একটানা চুলে আঙুল চালাতে চালাতে আমার বুকের মধ্যে ধীরে ধীরে জমে থাকা একটা ভার যেন গলে গেল।

একটু পর ও চোখ খুলল।

ফিসফিস করে বলল,
“ঘুমিয়েছিলি?”

আমি হাসলাম,
হ্যাঁ। এরকম ছেলেমানুষের মত ধরে শুয়েছ না ঘুমিয়ে উপায় আছে?
ও একটু মুচকি হেসে বলল,
“অনেক কিছু বলে ফেললাম না….. ?
আমি বললাম তুমি বলার যোগ্য বলে মনে করেছ আমায় সেটার থেকে বড় উপহার আমার কাছে কিছু হতে পারে না।
অনিসা চুপ করে রইল। তারপর হালকা গলায় বলল—

“তুই থাকবি তো, নীর?”
আমি মৃদু ভাবে হ্যাঁ বললাম। অনিসা এগিয়ে এসে আমার সিগারেট খাওয়া ঠোঁটগুলো চেপে ধরলো নিজের নরম গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট দিয়ে।
Yes we kissed. আমিও বিলীন হয়ে চুমু খেলাম। ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট থেকে লাভার্স এর দিকে আমার এক পা এগিয়ে গেলো।
এরপরের কিছু সপ্তাহের ঘটনা সমূহ আমার কাছে ছবির মত স্পষ্ট। ওর হাতে হাত রেখে খড়গপুর মেদিনীপুরে এপার থেকে ওপার ঘোরা, মোমো খাওয়া, সিনেমা দেখা, গন্ধিঘাটে বসে রীতিমত ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করা। ও বলতে থাকতো আর আমি যেন ওর কথাগুলো শোনার জন্য এতদিন পর্যন্ত ক্ষুধার্ত ছিলাম। আমি হা করে ওর দিকে চেয়ে বসে ওর কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকতাম। প্রান্তিকার পরে তাহলে জীবনে আবার একটা প্রেম এল!!

সময়টা আমার স্পষ্ট মনে নেই তবে সেটা চতুর্থ বা পঞ্চম সপ্তাহ হবে আমাদের সেক্স এর পর। আমি ওকে সারপ্রাইজ দেবো বলে, মেদিনীপুর মেডিকেলের সামনে বাইক নিয়ে দুপুরে হাজির। প্ল্যানটা খানিকটা এরকম ছিল যে ওখান থেকে ওকে পিক আপ করে ডমিনোজে লাঞ্চ করে ওকে আবার ড্রপ করে আমি বাড়ি আসবো।

কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি যা দেখলাম তা আমাকে ভেঙ্গে ফেলল। সেই বানচোদ সৌরভের হাত অনিসার কাঁধে। দুজন হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসছে। আনিসা যেমনি আমাকে দেখলো ওর হাসি থেমে গেল। চারিদিকের কোলাহল এর মাঝে সেই মুহূর্তটা যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল আমার কাছে। চোখের সামনে কেবল দেখতে পাচ্ছি সেই কাঁধে রাখা হাতটা আর তাদের চোখে মুখে লেগে থাকা হাসির ছাপ।

আমি বাড়ি ফিরে এলাম। এই নিয়ে হৃদয় দুবার ভাঙলো। আমি কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে উপুর হয়ে পড়ে রইলাম আমার বিছানার উপর। চাদর ফোঁটা ফোটা জলে ভিজে গেল। ফোনটা ৭ থেকে ৮ বার মতো রিং করল। আমি স্পষ্টভাবেই বুঝলাম কে ফোন করতে পারে তাই আর দেখারও আগ্রহ পেলাম না।

বাইরে সন্ধ্যে নামছিল ধীরে ধীরে। ঘরের জানালা দিয়ে গলিয়ে আলো ঢুকছিল নরম হলুদে রঙ মাখানো হয়ে।

আমি দরজা খুলতেই ও দাঁড়িয়ে।

চোখে ক্লান্তি, মুখে সেই চেনা খামখেয়ালি অভিব্যক্তি—যেটা দেখে একসময় আমি সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে যেতাম।

কিছু না বলে ও ঘরে ঢুকে পড়ল। আমি দরজাটা লাগিয়ে দিলাম।

দু’জনেই কিছু বললাম না। শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ, আর একটু নরম স্যান্ডেলের খসখসে চলাফেরা।

একটা সময় ও ধীরে ধীরে বলল,
“আমি সৌরভকে নিয়ে একটু ভাবছি আবার…”

আমি থেমে গেলাম। ঠোঁট শুকিয়ে এল।

ও বলল, গলা একদম সোজা,
“আমার recently বুঝতে পারলাম—আমি ওকে এখনো ভালবাসি। I mean, I thought I was over it. But maybe I’m not.”

আমি কিছু বললাম না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।

ও একটু এগিয়ে এসে বলল,
“তুই তো খুব ছোট রে… বোঝার চেষ্টা কর। আমার থেকে অনেকটাই ছোট। তুই আর আমি… মানে—it’s sweet, but it’s not real. আমার উচিত তোকে মিসলিড না করা।”

আমি হঠাৎ এক ঝটকায় মুখ তুললাম। চোখে রাগ নেই, কিন্তু অভিমান আছে। নিঃশব্দে গলা নামিয়ে বললাম—

“ছোট হলেই কি feelings থাকে না?”

আমি সরাসরি ওর চোখে তাকিয়ে বললাম।

“আমার বয়স হয়তো কম, কিন্তু আমি তোমাকে কামনার জন্য না, ভালোবাসার জন্য জড়িয়ে ধরেছিলাম।
তুমি ভাবলে আমি তোমার দেহ পাওয়ার জন্য আছি। কিন্তু আমি তো শুধু থাকতে চেয়েছিলাম।”

ও মুখ তুলে আমার দিকে তাকাল।

আমি এক ধাক্কায় পেছনে সরে এলাম,
“তুমি একবারও ভাবলে না যে আমি মানুষ, আমারও বুকের ভেতরে কিছু জমে আছে?
আমি প্রান্তিকার পরে কারোর জন্য কাঁদিনি, কিন্তু আমাকে জড়িয়ে যখন তুমি কাঁদছিলে আমিও মনে মনে কেঁদেছিলাম।
আর তুমি আজ এসে বলছ—তুমি আরেকজনকে ভালোবাস? আমি ছোট?
ভালোবাসার জন্য কি বয়সের প্রমাণ লাগে নাকি?”

আমার গলা এবার খানিক চড়ে গেল।
অনিসা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল—গলাটা কাঁপছিল তার।
আমি হঠাৎ গর্জে উঠলাম।

“চুপ কর! একটাও শব্দ শুনবো না!
তুই কে রে আমায় শেখাবি কার প্রেম সত্যি, কারটা খেলা?”

ও থমকে গেল। চোখ দুটো গোল হয়ে গেল ভয়ে।
আমি আগুনে জ্বলছি তখন—চোখে রক্ত, মনে বিষ।
ওর চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে, ঠোঁট কাঁপছে, ও ফিসফিস করে বলল,
“আমি… আমি ভুল করেছি। আমি জানি। তুই যা চাস, আমি দেবো। শুধু… প্লিজ, আর রাগ করিস না।”

আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম—ধীরে, ধীরেই, কিন্তু পায়ের শব্দে যেন কামরা কেঁপে উঠল।

অনিসা দেয়ালের দিকে সরে গেল। ওর পিঠ গিয়ে ঠেকলো দেয়ালের সাথে।
কান্নাভেজা চোখে হাত জোড় করে বলল,
“Please… আমায় ক্ষমা কর… যা চাস আমি দেবো… আমি তোর ছিলাম, তোরই আছি… ভুল হয়ে গেছে রে… প্লিজ…”

আমি ওর কান ঘেঁষে মুখ নিয়ে গিয়ে গলার নিচু স্বরে বললাম—

“জামা খোল।”

ও স্তব্ধ হয়ে গেল। চোখে জল। কিন্তু এবার ভয়ে নয়—আত্মসমর্পণের গ্লানিতে
আমি তাকিয়ে রইলাম—ঠান্ডা, নিঃশব্দ, পোড়া চোখে।
ও নিজেই জামার বোতাম খুলতে লাগল—হাত কাঁপছিল, বুক ধুকপুক করছিল।
আমি পিছিয়ে এসে বিছানায় বসলাম।

Exit mobile version