কাম ও ভালোবাসা – ধারাবাহিক বাংলা চটি – পর্ব ৫ – ভাগ ১

ধারাবাহিক বাংলা চটি – পর্ব ৫ – ভাগ ১

খুব সকালে উঠে পরে দেবায়ন। অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে থাকে, কিছুতেই যেতে দেবেনা। দেবায়ন ওকে নিরস্থ করে আস্বাস দেয় যে ডাক দিলেই আসবে, রাত হোক, দুপুর হোক, যেকোনো সময়ে চলে আসবে। কিন্তু এখন বাড়িতে থাকলে বিপদ হতে পারে। বাড়ির সবাই হোক না কলঙ্কিত, কিন্তু অনুপমার চরিত্রে কলঙ্কের দাগ লাগাতে চায় না। অনুপমাকে বুঝিয়ে আসে যেন নিজের আচার ব্যাবহারে বাড়ির কাউকে বুঝতে না দেওয়া হয়, যে অনুপমা সব কিছু জেনে গেছে। ওর ব্যাবহারে যেন কোন পরিবর্তন না আসে। অনুপমা বাধ্য মেয়ের মতন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে দেবায়নের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। যথাযথ চেষ্টা করবে নিচের আচরন আগের মতন রাখতে। অনুপমা ওকে বলে যে দেবায়ন যেন নিজের মায়ের সাথে ঠিক ভাবে আচরন করে, মনে থাকে যেন মায়ের কথা। দেবায়ন মিচকি হেসে জানিয়ে দেয় যে, নিজের মাকে ধিরে ধিরে বদলে দেবে দেবায়ন, শুষ্ক মরুভূমির মতন মায়ের বুকে আবার বারি সিঞ্চনে প্রেমের মরূদ্যান জাগিয়ে তুলবে। তার ফলে মা, নিশ্চয় কারুর ভালোবাসার পাত্রী হবে, আর সেই কারযে সফল হলে ওদের বিয়ে দিয়ে দেবে। অনুপমার ঠোঁটে ভালোবাসার গভীর চুম্বন এঁকে ঠিক যে পথে বাড়িতে ঢুকেছিল ঠিক সেই পথে সবাই জেগে ওঠার আগে বারি থেকে বেড়িয়ে যায়।

ভোরের আলো মিষ্টি রোদ মাখিয়ে দেয় দেবায়নকে। রাস্তায় কিছু লোক চলাচল শুরু হয়ে গেছে, রাস্তার ধারে একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খায় দেবায়ন। একটা সিগারেট ধরিয়ে পন্ডিতিয়া থেকে বালিগঞ্জ ফাড়ি পর্যন্ত হেঁটে যায় দেবায়ন। দিনটা শনিবার মায়ের অফিস ছুটি, ওর কলেজের ছুটি। ভাবে এবারে কি করে মায়ের সামনে দাঁড়াবে। মন থেকে মুছে দিতে চেষ্টা করে মায়ের নগ্ন রুপ, সেই খানে দেখতে চেষ্টা করে মাকে এক অন্য রুপে, প্রিয় বান্ধবী দেবশ্রী রুপে। অনুধাবন করতে কষ্ট হয় এই রুপে নিজের মাকে দাঁড় করাতে। কিন্তু না করাতে পারলে সূর্য কাকু মায়ের শরীর নিয়ে খেলবে আর মন ফুরিয়ে গেলে এক সময়ে ছেড়ে যাবে। দেবায়ন চায় মায়ের জীবনে কেউ আসুক যে মাকে আবার ভালবাসবে, মায়ের সুখ দুঃখের সাথি হবে, ঠিক যেমনটি অনুপমা ওর কাছে।

রাস্তায় বাস চলাচল শুরু হয়ে গেছে। বাস ধরে সোজা লেক্টাউন চলে আসে দেবায়ন। রাতে বিশেষ ঘুম হয়নি, ঘুম ঘুম পায় দেবায়নের। মা বেশ সকালে উঠে পরে, ছুটির দিনেও মা সকাল সকাল উঠে স্নান সেরে পুজো দেয় তারপরে রান্না ঘরে ঢুকে চা জলখাবার বানায়। ছুটির দিনে দেবায়নের ব্যায়ামের ছুটি, কিন্তু মা প্রতিদিন সকাল বেলা নিজের ঘরেই একটু আধটু নিঃশ্বাস প্রস্বাসের ব্যায়ামের সাথে একটু আধটু শারীরিক ব্যায়াম করে। বয়সের ভারে খানিক মেদ জমলেও মায়ের দেহের গঠন এতদিন পড়েও বেশ সুন্দর।

কলিং বেল বাজাতেই মা দরজা খুলে জিজ্ঞেস করে যে রাতে সব ঘুম হয়েছিল কিনা? দেবায়ন মায়র চোখের দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে ইশারায় জানায় যে রাতে বিশেষ ঘুমতে পারেনি। মায়ের পাশ দিয়ে যাবার সময়ে নাকে ভেসে আসে, মায়ের সদ্য স্নাত গায়ের মিষ্টি গন্ধ। মাথা নিচু করে নিজের ঘরে ঢুকে পরে।

মা পেছন থেকে ডাক দেন, “কি হল? শরীর খারাপ নাকি?”

দেবায়ন উত্তর দেয়, “না সব ঠিক আছে, ঘুম পাচ্ছে তাই ঘুমাতে চললাম।”

মা বলেন যে পরে তাহলে জাগিয়ে দেবে। বিছানায় শুয়ে মাথার জটলা পরিষ্কার করতে শুরু করে। মায়ের সাথে কথাবার্তা কি করে শুরু করবে।

এমন সময়ে মায়ের গলা শুনতে পায়, কারুর সাথে ফোনে কথা বলছে, কান পেতে শোনে কথা। মা বলছেন, “এত সকালে?” “না না, এসে গেছে।” একটু হেসে, “ইসসস, সখ দেখ। না যেতে পারব না রে, দেবু বাড়িতে।” “এই ধ্যাত, সবসময়ে সূর্যর এক কথা।” “সাত সকালেই শুরু, ছিঃ এই আমি ফোন রাখলাম, এই তোদের সাত সকালের প্রেমালাপের গল্প আমাকে শুনাতে যাস না।” কথোপকথন শুনে বুঝে গেল যে সূর্য কাকুর ফোন, মাথায় রক্ত চড়ে গেল দেবায়নের। ঘুম ঠিক হল না, চোয়াল শক্ত করে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে দেখে মা, একা একা বসার ঘরে বসে চা খাচ্ছে। মায়ের উদাসিন হাসি হাসি মুখ দেখে বড় কষ্ট হয়। পরনে কচি কলাপাতা রঙের একটা সুতির শাড়ি, গাড় সবুজ রঙের ব্লাউস। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ গায়ের রঙ, মাথার চুল বেশ লম্বা। ভিজে চুল পিঠের উপরে মেলে ধরা। শরীরের কোথাও প্রসাধনের লেশ মাত্র নেই, তবুও ত্বক যেন মাখনের মতন চকচক করছে। বাম হাতের কব্জিতে একটা সোনার বালা, কানে সোনার দুল, রূপসী মা একাকী বসে।

দেবায়ন কে দেখতে পেয়ে মা জিজ্ঞেস করলেন, “কি রে দেবু, কি হল ঘুম হল না?”

দেবায়ন মাথা তুলে তাকাল না মায়ের চোখাচুখি হয়ে যাবার আশঙ্কায়, মাথা নিচু করে বাথরুমে ঢুকে পরল প্রাতরাশ সারতে। বাথরুম থেকে বেড়িয়ে দেখল মা ওর জন্য চা বানিয়ে রেখেছে। পাশের ছোটো সোফার উপরে বসে পরে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে টিভি চালিয়ে দেয়। বাড়ি যেন খুব নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। অন্য সব ছুটিরে দিনে, সকাল থেকে মা ছেলের লড়াই লেগে যায়, দেবায়নের নোংরা জামা কাপড়, ঘর পরিষ্কার ইত্যাদি কথা নিয়ে। এক চোট বাকবিতন্ডের পরে দেবায়ন নিজের ঘর পরিষ্কার করে, নিজের জামাকাপড় অয়াশিং মেসিনের মধ্যে রেখে দেয়। স্নান সেরে কোনদিন আড্ডা মারতে বেড়িয়ে যায়, অথবা অনুপমার সাথে বেড়াতে যাবার থাকলে বেড়িয়ে যায়। ফেরে দেরি করে, সারাদিন মায়ের কেমন কাটল জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠে না।

অস্বাভাবিক রকমের চুপ থাকতে দেখে মা জিজ্ঞেস করেন, “কি হয়েছে রে তোর? কাল কি বন্ধুদের সাথে ঝগড়া করেছিস তুই?”

দেবায়ন টিভির দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “না সেই রকম কিছু হয় নি। আমি ঠিক আছি।”

মা প্রতিবারের মতন শুরু করেন, “নিজের রুম’টা দেখেছিস, সারা সপ্তাহ ধরে হেগে মুতে রেখে যাস মনে হয়। কাজের লোক কি করে জানি না। আর তোর জামাকাপড় গুলো দিয়ে দে, অয়াশিং মেসিনে কেচে ফেলি।”

দেবায়ন ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দেয়, “ঠিক আছে।” চায়ের কাপ নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে, পড়ার টেবিল, আলমারি সব ঠিক করে গুছিয়ে ফেলে। দরজার পেছনের হুক থেকে সপ্তাহের জামা কাপড় গুলো হাতে নিয়ে দরজা খুলে দেখে মা সামনে দাঁড়িয়ে। হটাত করে মাকে সামনে দেখে দেবায়ন হকচকিয়ে যায়। মা ওর গায়ে হাত দিয়ে দেখতে যায় যে জ্বর হল কিনা। দেবায়ন দু’পা পেছনে সরে জানিয়ে দেয় যে কিছু হয়নি, শরীর ঠিক আছে। মা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, যে ছেলের হটাত কি হল। যে ছেলে পারলে যুদ্ধ করে সেই ছেলের একরাতে এমন কি হল যে বদলে গেল? মা ওর কাছে এসে পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি করে বলত কি হয়েছে।” মায়ের নরম হাতের স্পর্শে কেমন হয়ে যায় দেবায়ন। মুখ ঘুড়িয়ে দেখতেই মায়ের সাথে চখাচুখি হয়ে যায়। সেই টানাটান চোখ, টিকালো নাক, হাল্কা গোলাপি ঠোঁট, গা থেকে ভেসে আসা একটা মিষ্টি গন্ধ।

হাল্কা হাসি দিয়ে মাকে বলে দেবায়ন, “আচ্ছা মা, তুমি ছুটির দিনে, সারাদিন বাড়িতে কি কর?”

দেবশ্রী বলেন, “কেন, অনেক কাজ থাকে। বাড়ির কাজ থাকে, তোর ত ছুটির দিন বলে কিছু নেই। বাড়িতে পা টেকে না, আমি একা একা থাকি, সংসারের কাজ নিয়ে। কোনদিন মণি আর সূর্য আসে, কোনদিন আমি ওদের বাড়ি চলে যাই, গল্প গুজব করে সময় কাটিয়ে দেই।” উফফফফ, আবার সূর্য কাকু। দেবায়ন মাথা চুলকায়, কি যে করে। মা বলেন, “আজ তুই কোথায় যাচ্ছিস, বলে দে। তাহলে আমি বিকেলের দিকে মণির বাড়িতে যাব।” কথাটা বলার সময় মনে হল মায়ের গালে একটু লালচে ভাব দেখা দিল, না ওটা দেবায়নের চোখের ভুল।

দেবায়ন মায়ের গভীর কালো চোখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “মা এবার থেকে আমি কোন ছুটির দিনে কোথাও যাবো না। বাড়িতেই থাকব, বাড়ির কাজ করব, তোমার কাজ করে দেব।”

দেবশ্রী হেসে বলেন, “কি ব্যাপার রে, হটাত এত বোধোদয় হল কি করে? কোন মেয়েবন্ধু মতিগতি ফিরিয়েছে নাকি?” দেবায়ন মাকে তখন বলেনি অনুপমার কথা, তাই মা জানত না যে ছেলে প্রেমে হাবুডুবু আর অনেক দূর এগিয়ে গেছে ওদের সম্পর্ক।

দেবায়ন লাজুক হেসে বলে, “বলতে পার, কথা টা অনেক সত্যি।”

দেবশ্রী অবাক চোখে প্রশ্ন করে, “কে রে, কি নাম, কবে দেখা করাবি, কেমন দেখতে?”

দেবায়ন হেসে জানায়, “অনুপমা সেন, মাস আটেকের মতন ছোটো আমার চেয়ে। ফিসিক্সে আছে, খুব ব্রিলিয়ান্ট আর ভালো মেয়ে।”

দেবশ্রী গালে হাত দিয়ে বলে, “আমার ছেলে অনেক বড় হয়ে গেছে তাহলে। দেখা করাবি না আমার সাথে?”

দেবায়ন, “করাব করাব, নিশ্চয় করাব।”

দেবশ্রী, “তাহলে আজ তোর মতিগতি ভালো আছে? কি খাবি, কোন ছুটির দিনে বাড়ি থাকিস না, যা ইচ্ছে করে বাজার থেকে কিনে নিয়ে আয়, বানিয়ে দেব।”

দেবায়ন বাজারের থলে নিয়ে বাজারে বেড়িয়ে পরল। বুকের মাঝে এক খুশির হাওয়া, সকালের বদ্ধ ভাব অনেকটা কেটে গেছে, এবারে নিশ্চয় মায়ের সাথে একটু মন খুলে কথা বলা যাবে, মা নিশ্চয় আর ছুটির দিন গুলোতে সূর্য কাকুর বাড়ি গিয়ে ওদের সাথে সঙ্গমে রত হবে না। খুলতে একটু দেরি হলেও প্রথম পদক্ষেপে দেবায়ন খুব খুশি। পরের দু’দিন বেশ ভালো কাটে, বাড়ি ছেড়ে মা কোথাও যায় না দেবায়ন বাড়ি থেকে আর বের হল না। বার কয়েক, পরাশর, শুভ্র, প্রদীপ এদের ফোন এসেছিল, কিন্তু সেই গুলো কাটিয়ে দিয়েছে কোন এক আছিলায়। দুই দিন শুধু মায়ের পেছন পেছন ঘুরেছে। মাকে নিজের বান্ধবী হিসাবে দেখতে চেষ্টা করেছে, কিন্তু মায়ের সামনে মুখ খুলতে পারেনি। দেবায়ন ঠিক করে নেয় যে সম্পর্ককে সময় দেওয়া উচিত।

রোজ রাতে শোয়ার আগে, অনুপমার ফোন আসে। রবিবার রাতে ওর বাবা, মিস্টার সোমেশ সেন, বাড়ি ফিরেছেন। অনুপমার মা রাতে খাওয়ার সময়ে অনুপমার বাবাকে দেবায়নের কথা বলে দেয়। মায়ের মুখে দেবায়নের ব্যাপারে শুনে অনুপমা প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেছিল, কিন্তু মিসেস সেন জানিয়ে দেন যে দেবায়ন কে তাঁর পছন্দ। বাবা অবশ্য জানিয়েছেন যে বুধবার দেখা করার পরে সিদ্ধান্ত নেবেন। দেবায়ন সব শুনে এক দীর্ঘ শ্বাস নেয়, জীবনের এক নতুন অধ্যায় অচিরেই শুরু হয়ে যাবে। সোমবার যথারীতি অনুপমার সাথে কলেজে দেখা হয়। অনুপমা জানায় যে বুধবার যেন তাড়াতাড়ি কলেজ থেকে সোজা বাড়ি পৌঁছে যায়। বাকি বন্ধু বান্ধবীদের নিমন্ত্রন করা হয়েছে বাড়িতে। তারা সব নিজেদের মতন পৌঁছে যাবে, কিন্তু দেবায়নের কথা আলাদা। বাবা মা আলাদা করে কথা বলতে চায় দেবায়নের সাথে, একটু উদ্ভিঘ্ন সেই কারনে। দেবায়ন অনুপমার কপালে চুমু খেয়ে আসস্থ করে সব ঠিক হয়ে যাবে। কলেজের পরে বাজু জড়িয়ে ধরে ট্যাক্সি স্টান্ড পর্যন্ত হেঁটে আসে।

দেবায়ন ফিসফিস করে অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “পুচ্চি, জন্মদিনের উপহার কিন্তু তুই নিজে চেয়েছিস, মনে আছে ত?”

অনুপমা লজ্জায় লাল হয়ে মাটির দিকে চোখ নামিয়ে আলতো মাথা নেড়ে জানায় যে মনে আছে। প্রেয়সীর ঠোঁটে লাজুক হাসি দেখে পুলকিত হয়ে ওঠে দেবায়নের মন। বাঁ হাতে জড়িয়ে ধরে কাঁধ, অনুপমার মন ছটফট করে ওঠে, মনে হয় এই রাস্তার মাঝে দেবায়ন কে জড়িয়ে ওর বুকে লুকিয়ে যায়। ট্যাক্সিতে ওঠার সময়ে দেবায়নের কলার ধরে টেনে গালে ছোটো চুমু খেয়ে বলে, “আমি আই পিল খেতে শুরু করে দিয়েছি, গিফট কিন্তু ভালো মতন চাই।” দেবায়ন হাঁ করে থাকে, অনুপমার ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি। দেবায়ন কোন প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই ট্যাক্সি ছেড়ে দেয়। অনুপমা ট্যাক্সির জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ঠোঁটের চুমু হাওয়ায় ছুঁড়ে দেয়।

কলেজ সেরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে দেবায়ন। বাড়ি ফেরার কিছু পরেই মা ফিরে আসেন অফিস থেকে। দেবায়নের খুশি খুশি মুখ দেখে মা জিজ্ঞেস করে তার কারন। লাজুক হেসে দেবায়ন উত্তর দেয় যে অনুপমার জন্মদিন বুধবার, বাড়িতে ডেকেছে আর সেইদিনে ওদের সম্পর্কের সব কিছু পাকা হয়ে যাবে। দেবায়ন সেই সময়ে চেপে যায় যে অনুপমার বাড়ির লোকের সাথে কথা বলতে যাচ্ছে। মা ভেবে নেন যে, দেবায়ন আর অনুপমার ভালোবাসার সম্পর্ক পাকা হয়ে যাবে।

বুধবার মধ্যরাত্রে অনুপমাকে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। অনুপমা জেগে ছিল আর সেই আশা দেবায়ন পূরণ করে। অনুপমা জানিয়ে দেয় যে কলেজ যাবে না। বাড়িতে কিছু স্পেসাল তৈরি হচ্ছে ওর জন্য। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে যে অনুপমা জন্মদিনের স্পেসাল উপহারের জন্য তৈরি কি না। ওদিকে অনুপমা সেই কথা শুনে দুষ্টুমি করে বলে যে অনেক কিছু রাখা আছে সযত্নে, নিজে হাতে যেন খুলে নেয়। রাতে আর ঘুম হল না দেবায়নের, সারা রাত ধরে শুধু অনুপমার ছবি দেখে কাটিয়ে গেল। মনের মধ্যে জল্পনা কল্পনা করতে লাগে, কি করে প্রেয়সীকে রাগ অনুরাগে ভরিয়ে তোলা যায়।

বুধবার সকালে কলেজে বের হবার আগে মাকে জানিয়ে দেয় যে বাড়ি ফিরতে দেরি হতে পারে, অনুপমার জন্মদিন, বেশি দেরি হলে বাড়ি না ও ফিরতে পারে। দেবায়ন ঠিক মতন জানেনা, অনুপমা যে উপহারের কথা বলেছে সেটা কি করে দেওয়া যায়, নিশ্চয় কিছু মাথায় আছে দুষ্টু মিষ্টি রূপসী ললনার। মা দেবায়নের কথা শুনে হেসে বলে, রাতে বাড়ি না ফিরলে ধরে নেবে অনুপমার সাথে আছে। দেবায়নের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

দুপুরের পর থেকে ফোনের বন্যা, “কখন আসছিস, আমার আর তর সইছে না তোকে দেখার জন্য।” দেবায়নের আর তর সয় না অনুপমার বাড়ি যাবার জন্য। মন আনচান করে সারাটা সময় ধরে, কিন্তু ক্লাসে নোটস না পেলে একটু মুশকিল। পায়েল বারবার জিজ্ঞেস করে কখন যাবে, দেবায়ন জানায় যে সময় হলেই যাবে। বাকিদের নিয়ে পায়েল যেন ওর বাড়ি পৌঁছায়, দেবায়ন হয়ত আগেই অনুপমার বাড়ি পৌঁছে যাবে। পায়েল জিজ্ঞেস করে যে কি প্রেসেন্ট দিচ্ছে দেবায়ন। দেবায়ন মিচকি হেসে পায়েল কে বলে, তাঁর চাই নাকি? পায়েল কিছু বুঝতে না পেরে বলে দেয় হ্যাঁ। ঠোঁট শয়তানির হাসি মাখিয়ে জানিয়ে দেয় যে উপহারটা যদি অনুপমার ভালো লাগে তাহলে যেন নিজে চেয়ে নেয় অনুপমার কাছ থেকে।

দেবায়ন কলেজ থেকে বেড়িয়েই অনুপমার জন্য একটা ফুলের তোড়া কেনে, সেই সাথে জমানো টাকা দিয়ে অনুপমার জন্য একটা সুন্দর ক্রিস্টালের লকেট কেনে। ট্যাক্সি ধরে অনুপমার বাড়ি সন্ধ্যের আগেই পৌঁছে যায়। বুক ধুকপুক করতে শুরু করে দেয় দেবায়নের, মিস্টার সেনের সামনে যেতে হবে, কি জিজ্ঞেস করতে পারে? কি উত্তর দেবে শত চিন্তা মাথায় ভর করে আসে। একে গ্রীষ্ম কাল, তায় ঘাম, উৎকণ্ঠায় বেশি ঘামিয়ে যায় দেবায়ন। অনুপমাকে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ফোন করে যে এসে গেছে। অনুপমা ফিসফিস করে জানিয়ে দেয় যে বাড়িতে অনেক লোক, সরাসরি বাড়ির ভেতর চলে আসতে।

দেবায়ন বাড়িতে ঢোকে, অনুপমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে বেশ কয়েক জন আত্মীয় সজ্জন এসেছেন। বন্ধুরা কেউ তখন আসেনি। দেবায়ন দেখল যে বসার ঘর লোকে ভর্তি, কিন্তু অনুপমার দেখা নেই। মিসেস সেনের দিকে চোখ গেল দেবায়নের। আজ যেন মিসেস সেনকে আরও সুন্দরী দেখাচ্ছে। পরনে হাল্কা নীল রঙের পাতলা শাড়ি আর গাড় নীল রঙের হাত কাটা ব্লাউস। ব্লাউসের বুকের কাছে বেশ গভীর কাটা। দুই বড় বড় নরম স্তনের উপরের ফোলা অংশ দেখা যায় সেই সাথে বুকের খাঁজ পরিস্ফুটিত। ফর্সা ত্বকের সাথে নীল রঙ্গে বেশ মানিয়ে গেছে। মাথার চুল একপাসে করে আঁচড়ান, ঠোঁটে গাড় বাদামি লিপস্টিক। শাড়ির গিঁট নাভির কিছু নিচে, ফর্সা নরম তুলতুলে পেটের সাথে সুগভীর নাভি ভালো ভাবে দেখা যায়। শাড়ির আঁচল কোমর থেকে পাতলা হয়ে বুকের পরে কোনোরকমে যেন মেলে ধরা। মিসেস সেন যেন তাঁর তীব্র আকর্ষণীয় শরীর দেখাতে ব্যাস্ত। দেবায়নকে দেখেই হেসে কাছে এসে দাঁড়ায়। মিসেস সেনের গাঁ থেকে এক মিষ্টি মাতাল সুবাসে দেবায়নের মস্তিষ্ক বিচলিত হয়ে যায়। না চাইতেও চোখের দৃষ্টি পাশে দাঁড়ান মিসেস সেনের গভীর স্তনের খাঁজে চলে যায়।

দেবায়নের হাত ধরে মিসেস সেন বলে, “তোমার জন্য আমার মেয়ে হত্যে দিয়ে পরে আছে। এস ভেতরে এস, হ্যান্ডসাম।”

দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “অনুপমা কোথায়? পায়েল এখন আসেনি।”

মিসেস সেন, “তুমি বস, আমি অনুকে ডেকে দিচ্ছি।”

একটু পরে সিঁড়ি বেয়ে অনুপমা নিচে নামে। দেবায়নের চোখ আটকে যায় রূপসী প্রেয়সীর দিকে। পরনে হাতাবিহীন ছোটো গোলাপি রঙের পার্টি ড্রেস। বুক থেকে পাছা পর্যন্ত ঢাকা, কাঁধে ফাইবার স্ট্রাপ লাগানো তাই দেখা যায় না। সামনের দিকে অনেক খানি কুঁচি দেওয়া। পিঠের দিক অনেকখানি উন্মুক্ত। মাথার চুল একপাসে করে আঁচড়ান, চোখের কোনে কাজল, দুই ঠোঁটে লাল রঙ মাখা। ফর্সা রঙের সাথে সেই গোলাপি পোশাক দারুন মানিয়ে গেছে। দেবায়ন কে দেখে, গজ দাঁতের মিষ্টি হাসি দেয়। বাড়িতে লোক ভর্তি তাই মনের ভেতরের চাপা উত্তেজনা প্রবল ভাবে চেপে ধির পায়ে দেবায়নের পাশে এসে দাঁড়ায়। দেবায়নের চাহনি ওকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঝলসে দেয়। অনুপমা নিচের ঠোঁট চেপে ধরে লজ্জায়, ওর সামনে একবার ঘুরে যায় গোল করে, দেখায় নিজের পরনের জামা। ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন লাগছে?

দেবায়ন ওর বাজুর ওপরে আলতো ঠেলে দিয়ে বলে, “তোকে দারুন দেখাচ্ছে, পুচ্চি।” অনুপমার হৃদয় যেন এইবারে ফেটে পরবে খুশিতে। দেবায়ন ওর হাতে ফুলের তোড়া আর লকেটের ছোটো বাক্স ধরিয়ে দেয়। অনুপমা ওকে একপাসে টেনে নিয়ে যায়, দেবায়ন আলতো ঝুঁকে ওর গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে, “লকেট পছন্দ?”

অনুপমা, “লকেট দিয়ে কি হবে, তুই পাশে আছিস সেটাই অনেক।”

দেবায়ন, “কি ব্যাপার বাড়িতে এত লোক কেন?”

অনুপমা ম্লান হেসে বসার ঘরের লোকেদের দিকে চোখ ঘুড়িয়ে বলে, “বাঃ রে, এত বড়লোকের মেয়ের জন্মদিন, তাও আবার কুড়িতে পা রাখল। জানাতে হবে না, আত্মীয় সজ্জন দের? বাবার বন্ধুরা এসেছে মায়ের বন্ধুরা এসেছে। আমি’ত কাল রাতে এক দারুন খবর পেয়েছি।”

দেবায়ন, “কি খবর?”

অনুপমা, “বাবার এক বন্ধু নাকি তার ছেলের জন্য আমাকে পছন্দ করেছে। ছেলে জার্মানিতে এম.বি.এ ফাইনাল ইয়ার, ইটালির এক বড় কম্পানিতে ইন্টারনশিপ পেয়ে গেছে।”

অনুপমার কথা শুনে দেবায়নের বুক ধুক করে ওঠে, “তো, তুই কিছু বলিস নি?”

অনুপমার চোখের কোন চিকচিক করে ওঠে, “তুই বাবার সাথে কথা বলিস, দেখা যাক কি হয়।”

দেবায়ন, “কি করে, কখন হবে সে কথা? বাড়ি ভর্তি লোক, তাঁর মধ্যে কি তোর বাবা আমার সাথে কথা বলবেন?”

অনুপমা, “জানি না ঠিক, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি নারে। বাড়িতে এত লোক হবে আমি আগে বুঝতে পারিনি রে। আমি ভেবেছিলাম শুধু মাত্র আমার বন্ধু বান্ধবীরা আর তুই ব্যাস।”

এক অজানা আশঙ্কায় দেবায়নের বুক দুরুদুরু করে কেঁপে ওঠে, শেষ পর্যন্ত কি ভালোবাসা হারাতে হবে? চাকরি পেতে অনেক দেরি, কিন্তু মেয়েদের বিয়ে সাধারণত ছেলেদের আগেই হয়ে যায়। দেবায়ন চোয়াল শক্ত করে জিজ্ঞেস করে, “কি বলতে চাইছিস তুই?”

অনুপমা বুক ভরে এক নিঃশ্বাস নেয়, “ধর যদি বাবা না মানেন, তাহলে? ছেলেটা নাকি বেশ ভালো, বাবার খুব কাছের বন্ধু।”

দেবায়ন এক দৃষ্টে অনুপমার চোখের দিকে তাকায়, চোখের কোন চিকচিক করছে। বুঝতে দেরি হয়না দেবায়নের যে প্রেয়সী খুব আহত, কিন্তু নিরুপায়। দেবায়ন বলে, “এক বার তোর বাবার সাথে কথা বলে দেখি। সেটার সুযোগ ত দেবে নাকি? না কোন মতামত না নিয়েই তোর বিয়ে দিয়ে দেবে?”

এমন সময়ে ঠিক পাশ থেকে মিসেস সেনের গলা শোনা যায়, “কি হল তোমরা দুজনে এখানে দাঁড়িয়ে কেন? যাও ওদিকে যাও। অনু, তোর বন্ধুদের একটু তাড়াতাড়ি আসতে বল, কেক কাটতে দেরি হয়ে যাবে। অনেকেই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চায়, কাল সবার অফিস স্কুল আছে।” মিসেস সেনের দিকে থমথমে চাহনি নিয়ে তাকায় দেবায়ন। মিসেস সেন জিজ্ঞেস করে দেবায়নকে, “কি হল, তোমার? আচ্ছা, অনু তোমাকে সেই ছেলেটার কথা বলে দিয়েছে?” মা মেয়ের কথা শুনে দেবায়নের সেখানে আর দাঁড়াতে ইচ্ছে করে না, মনে হল যেন প্রেম ভালোবাসা সব মিথ্যে। এতদিন অনুপমা শুধু মাত্র ভালোবাসার মরিচকা দেখিয়ে গেছে। মিসেস সেন মাথা দুলিয়ে আহত সুরে বলে, “দেখ দেবায়ন, সব কিছু ভবিতব্য। মিস্টার সেনের খুব ভালো বন্ধু আর ছেলে খুব ভালো। ছেলে এমবিএ করছে, ইটালিতে চাকরি পেয়ে যাবে। সত্যি কথা বলতে, তোমার চাকরি পেতে এখন অনেক দেরি। আর ফিসিক্স পাশ করে এখানে কি চাকরি পাবে তুমি?” দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে, একবার অনুপমার মুখের দিকে তাকায়। অনুপমার চেহারায় এক আহত ভাব ফুটে উঠেছে। একবার মিসেস সেনের মুখের দিকে তাকায়। মিসেস সেনের চেহারায় সেই আহত ভাব। মাথা নিচু করে নেয় দেবায়ন, মুখে রক্ত জমে ওঠে, কান গরম হয়ে যায়, চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।

অসমাপ্ত ……