Site icon Bangla Choti Kahini

আধুনিকা হতে গিয়ে এক সাধারণ মার সর্বনাশ

আমাদের ফ্ল্যাটে এক বছর হলো নতুন প্রতিবেশী এসে উঠেছে—সোমা কাকিমা। বয়স হবে আটচল্লিশ, সিঙ্গেল মাদার, ডিভোর্সী। আশেপাশের অনেকেই ওঁকে একটু “অতিরিক্ত আধুনিক” বলে এড়িয়ে চলে, কিন্তু আমার মা লাবনী দাশগুপ্তর জীবনে উনি যেন নতুন হাওয়ার ঝড় বইয়ে দিলেন।

মা সবসময় ছিলেন সাধারণ গৃহবধূ। বাবা ব্যাংকের চাকরির দায়িত্ব আর গ্রুপ থিয়েটারের রিহার্সালে এতটাই ডুবে থাকেন যে মাকে সময় দেওয়ার সুযোগ পান না। মা এতদিন নিজের জীবনকে শুধু সংসার আর আমাকে ঘিরেই দেখেছেন। কলেজে ফিজিক্স নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমি আস্তে আস্তে স্বাধীন হচ্ছিলাম, আর মাও হঠাৎ করেই নিজের ভেতরে একটা শূন্যতা টের পাচ্ছিলেন—যেটা সোমা কাকিমা চমৎকারভাবে চিনে ফেললেন।

প্রথমে কাকিমা সোজাসুজি বলেছিলেন—
“লাবনী, তুমি এখনও ৩৯। এই যে একঘেয়ে সংসার আর রান্নাঘরের মধ্যে ডুবে আছো, এটা একেবারেই অর্থহীন। নিজের জন্য বাঁচতে শেখো।”

সেই কথাগুলো মাকে ভেতর থেকে নাড়া দিয়েছিল। শুরুতে ছোটখাটো পরিবর্তন—স্লিভলেস ব্লাউজ, নতুন ডিজাইনের কুর্তি, স্টাইলিশ নাইট ড্রেস। এরপর কাকিমার সঙ্গে জিমে যোগ দিলেন, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরের প্রতি নতুন করে নজর দিতে শিখলেন।

সেই জিমে যাওয়া, পার্টিতে যাওয়া—এসব যেন মায়ের মধ্যে অন্য এক লাবনীকে জাগিয়ে তুলল। আগে যিনি পর্দার আড়ালে থাকতেন, তিনি এখন আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনে আসছেন।

একদিন কাকিমার বাড়ির ঘরোয়া পার্টিতে আলাপ হলো এক প্রো-ফটোগ্রাফারের সাথে। লোকটা মায়ের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়েই বলল—
“আপনার চেহারাটা একদম ক্যামেরার জন্য। যদি চান, একটা ফটোশুট করি। পাবলিক প্ল্যাটফর্মে দিলে দারুণ রেসপন্স পাবেন।”

মা প্রথমে রাজি হননি। তখন কাকিমাই মাঝখান থেকে এসে বোঝালেন—
“দেখো লাবনী, এখনকার দুনিয়ায় মানুষ নিজের সৌন্দর্য, নিজের স্টাইলকে শেয়ার করছে। তুমিও পারো। নিজের সৌন্দর্যকে সঠিকভাবে ব্যবহার করো।”

শেষমেশ মা রাজি হলেন।

রাজারহাটের এক পাঁচতারা হোটেলের রুমে শুটের দিন, কাকিমা নিজে গাড়িতে করে মাকে পৌঁছে দিলেন। ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি, স্লিভলেস ব্লাউজ পরে মা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন। লাইটের ঝলকানিতে, কাচের মতো স্বচ্ছ পর্দার আড়ালে দাঁড়ানো এক নতুন লাবনীকে যেন দেখতে পেলাম আমি—যিনি আর শুধু আমার মা নন, বরং নিজের ভেতরে এক ভিন্ন শক্তি আবিষ্কার করছেন।

শুট শেষ হলে মা ভেবেছিলেন—এটাই প্রথম আর শেষ। কিন্তু ছবিগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়ার পর সাড়া এমন হলো যে, ফটোগ্রাফারের লোভ আরও বাড়ল। আবার শুটের প্রস্তাব এলো।

মা শুরুতে না করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আশেপাশের প্রশংসা, কাকিমার চাপ আর সেই ভিউ সংখ্যার মোহ—সব মিলিয়ে আবারও রাজি হয়ে গেলেন। এভাবেই একে একে রাতগুলো দীর্ঘ হতে লাগল। বাড়ি ফেরার সময় দেরি হচ্ছিল। বাবার থিয়েটারের দুনিয়ায় কোনও খেয়াল নেই, আর আমি চুপচাপ কলেজ থেকে ফিরে মায়ের বদলে যাওয়া দেখছিলাম।

মায়ের চোখে এক অদ্ভুত আলো জ্বলতে শুরু করেছে। যেন তিনি আর আগের গৃহবধূ নন—বরং এক নতুন যাত্রায় পা রেখেছেন।

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেল—এই যাত্রা তাঁকে কোথায় নিয়ে যাবে? আত্ম-আবিষ্কারের উজ্জ্বল আলোয়, নাকি এক অদৃশ্য অন্ধকারের দিকে?

ফটোগ্রাফারের সঙ্গে শুট করার পর থেকেই মা যেন অন্য এক মানুষ হয়ে উঠতে লাগলেন। আগের সাদামাটা সেলাই-কাটা ব্লাউজ, সুতির শাড়ির বদলে এখন তিনি নিয়মিত অনলাইন থেকে নতুন নতুন পোশাক অর্ডার করতেন—গর্জিয়াস স্লিভলেস গাউন, বোল্ড কুর্তি, এমনকি শর্ট ড্রেসও। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নতুন লিপস্টিকের শেড পরীক্ষা করা, চুলকে আলাদা স্টাইলে বাঁধা—এসব যেন মায়ের প্রতিদিনের রুটিনে ঢুকে পড়ল।

ফটোগ্রাফার একদিন বলেই ফেলল—
“লাবনী দি, আপনার মধ্যে একটা রেয়ার চার্ম আছে। শুধু ট্র্যাডিশনাল নয়, আপনি ওয়েস্টার্ন আউটফিটেও দারুণ লাগবেন। আজ সন্ধ্যেয় একটু আউটিং করবেন? আমার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করাব।”

মা ইতস্তত করলেও শেষে রাজি হয়ে গেলেন।

সেদিন সন্ধ্যায় ফটোগ্রাফার মা’কে নিয়ে গেল শহরের এক অভিজাত বারে। ঝলমলে আলো, নরম সুরের স্যাক্সোফোন বাজছে পেছনে, চারদিকে ফ্যাশনেবল ভিড়। সেখানে ফটোগ্রাফারের বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল।

সবাই প্রথমেই মায়ের রূপ নিয়ে প্রশংসার ঝড় তুলল—
“আপনাকে তো একেবারে মডেলের মতো লাগছে।”
“এই বয়সে এত গ্লো রাখেন কীভাবে!”
“আপনার হাসিটা একেবারে কিলার।”

মা একেবারে ভেসে গেলেন সেই প্রশংসায়। যতটা সংকোচ নিয়ে বারে ঢুকেছিলেন, ততটাই নির্ভার হয়ে গেলেন কয়েক পেগ হার্ড ড্রিঙ্কসের পর। তাঁর মিষ্টি ব্যবহার, সরল অথচ আকর্ষণীয় কথাবার্তা সবাইকে মুগ্ধ করল।

ফটোগ্রাফার হেসে ফিসফিস করে বলল—
“দেখলেন তো, আপনি কীভাবে সবাইকে কনকুইস্ট করেন? এবার ভাবুন, যদি একটু সাহসী ফটোশুট করি, তাহলে রেসপন্স কেমন হবে। শাড়ি-ব্লাউজ ছেড়ে অন্য আউটফিটে চেষ্টা করবেন?”

মা এবার আর ‘না’ বলতে পারলেন না। চারদিকে সবার চোখে প্রশংসা, ফটোগ্রাফারের আত্মবিশ্বাসী হাসি, আর নিজের ভেতরের নতুন উদ্দীপনা—সব মিলিয়ে তিনি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন।

এরপর থেকে শাড়ির পাশাপাশি শর্ট ড্রেস, অফ-শোল্ডার গাউন, এমনকি বোল্ড ককটেল ড্রেসেও ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে শুরু করলেন মা। প্রতিটি শুট যেন তাঁকে আরও উন্মুক্ত করছিল, আরও আলোয় টেনে আনছিল।

কিন্তু এই আলো-আঁধারির খেলায় কোথাও একটা অদৃশ্য টানাপোড়েন জন্ম নিচ্ছিল—
একদিকে সংসার, বাবা আর আমি; অন্যদিকে সোমা কাকিমা আর ফটোগ্রাফারের হাত ধরে তৈরি হওয়া নতুন জগৎ।

মা কি জানতেন, এই জগৎ যতই ঝলমলে হোক, তার ছায়ার দিকটা আরও গভীর, আরও অদৃশ্য অন্ধকারে ভরা?

বারে যাওয়ার সেই রাতের পর থেকেই মা যেন ভিতরে ভিতরে অন্যরকম হয়ে গেলেন। তাঁর ড্রেসিং টেবিল ভরে উঠল নতুন নতুন মেকআপ কিট, হেয়ার স্টাইলিং টুল, আর অনলাইনে অর্ডার করা বিদেশি পোশাকে। সোমা কাকিমা প্রায়ই এসে বলতেন—
“ভেরি গুড লাবনী, তোমার মধ্যে অবিশ্বাস্য পটেনশিয়াল আছে। এখন শুধু সাহসী হওয়ার দরকার।”

অবশেষে ফটোগ্রাফার পরের শুটের জন্য বুক করল সাউথ কলকাতার একটি বিলাসবহুল স্টুডিও। এদিন আর শাড়ি নয়, বরং কয়েকটি ওয়েস্টার্ন ড্রেসের আয়োজন ছিল—একটা অফ-শোল্ডার ব্ল্যাক গাউন, একটি শর্ট রেড ড্রেস, আর শেষে কিছুটা সাহসী ককটেল পোশাক।

শুরুতে মা অস্বস্তি বোধ করছিলেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লিপস্টিকের শেড ঠিক করতে করতে বারবার বলছিলেন—
“আমি কি ঠিক করছি? আমার বয়সে এসব মানাবে?”

ফটোগ্রাফার হাসল—
“লাবনী দি, বয়স মানসিকতার ব্যাপার। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই আপনি অন্য এক মানুষ হয়ে যাবেন। দেখবেন সবাই মুগ্ধ হবে।”

আলো জ্বলে উঠল, ক্যামেরা ক্লিক করতে লাগল। মায়ের চোখে প্রথমে এক ধরনের অস্বস্তি থাকলেও কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেটি বদলে গেল আত্মবিশ্বাসে। লাইটের ঝলকানিতে, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের তালে, তাঁর চোখে-মুখে এক অদ্ভুত জেল্লা ছড়িয়ে পড়ল।

ফটোগ্রাফারের বন্ধুরাও পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে প্রশংসা করতে লাগল—
“একেবারে ন্যাচারাল মডেল।”
“ওফ, কী গ্রেস!”

মা শুনে লজ্জায় হেসে উঠলেন, কিন্তু ভেতরে ভেতরে সেই প্রশংসা তাঁকে আরও সাহসী করে তুলল। তিনি গাউন থেকে শর্ট ড্রেসে বদলালেন, শর্ট ড্রেস থেকে আরও বোল্ড পোশাকে এলেন। একসময় যেন ভয় আর সংকোচ সব মিলিয়ে উবে গেল।

শুট শেষে সবাই মিলে আবার এক বারে আড্ডা। এবার মা নিজে থেকে ড্রিঙ্ক হাতে নিলেন। হাসলেন, মজার গল্প করলেন, আর সকলের মনোযোগের কেন্দ্রে রইলেন।

সেই রাতে আমি খেয়াল করলাম মা অনেক রাত করে ফিরলেন। চোখে-মুখে যেন এক অদ্ভুত উজ্জ্বলতা, আর ঠোঁটে হালকা হাসি। আমাকে দেখে শুধু বললেন—
“আজকে দিনটা খুব ভালো গেল।”

কিন্তু আমি তাঁর চোখের গভীরে অন্য কিছু খুঁজে পেলাম—
হয়তো নতুন এক নেশা, হয়তো নতুন এক আসক্তি।

সেই সাহসী ফটোশুটের পর মায়ের মধ্যে যেন একটা বাঁধ ভেঙে গেল। ঘরে ফিরে প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সাজাতেন, নতুন নতুন ড্রেস ট্রাই করতেন। আগে যে মা কখনও নিজের জন্য এতটা সময় দিতেন না, এখন তিনি প্রতিদিন নিজের রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

ফটোগ্রাফারের কাছ থেকেও প্রতিদিন ফোন আসতে শুরু করল।
“লাবনী দি, আপনার ছবি অনলাইনে ভাইরাল হচ্ছে। কয়েকজন ইনভেস্টর আগ্রহ দেখিয়েছেন। কিছু প্রাইভেট ক্লায়েন্টও আছেন, যারা চান আপনাকে তাদের ব্র্যান্ড শ্যুটে দেখতে।”

মা অবাক—
“প্রাইভেট ক্লায়েন্ট মানে?”

ফটোগ্রাফার হেসে বলল—
“এরা সব বড়লোক, নামী ব্যবসায়ী বা পলিটিশিয়ান। ওরা নতুন মুখ খোঁজেন। শুধু ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো না, কখনও কখনও পার্টি, গেট টুগেদার—এমনকি পার্সোনাল প্রেজেন্সও চান।”

মা দ্বিধায় পড়লেন। কিন্তু সোমা কাকিমা তখন পাশে এসে বললেন—
“ভয় পেয়ো না লাবনী। এরা তোমাকে খারাপ ব্যবহার করবে না। বরং তোমার ভ্যালু আরও বাড়বে। এখনকার দুনিয়ায় এগুলো খুব নরমাল। তুমি যদি সত্যিই বদলাতে চাও, নিজের জন্য নতুন কিছু করতে চাও, তবে পিছিয়ে গেলে চলবে না।”

ধীরে ধীরে মা রাজি হয়ে গেলেন।

প্রথমবার ফটোগ্রাফার তাঁকে নিয়ে গেল একটি প্রাইভেট পার্টিতে, শহরের এক পাঁচতারা হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটে। ঝলমলে আলো, দামি সুগন্ধি, হাতে গ্লাসে ওয়াইন নিয়ে হাসিখুশি মানুষজন—সবই যেন মায়ের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা।

সেখানে পরিচয় হল কিছু বড়লোকের সঙ্গে।
একজন ব্যবসায়ী মা’কে দেখে মুগ্ধ হয়ে বলল—
“মিসেস দাশগুপ্ত, আপনার মধ্যে একটা অদ্ভুত চার্ম আছে। আমাদের ফ্যাশন শো-এর স্পেশাল গেস্ট হতে চান?”

মা লজ্জায় হেসে বললেন—
“আমি তো এসবের কিছুই জানি না।”

ফটোগ্রাফার কানে কানে বলল—
“তোমার কাজ শুধু সুন্দর হয়ে উপস্থিত থাকা। বাকিটা আমিই দেখব।”

সেই রাতটা যেন মায়ের জীবনের এক মোড় ঘোরানো রাত। বাড়ি ফিরলেন অনেক রাত করে, চোখে এক ধরনের ঝলমল আলো, ঠোঁটে হালকা ওয়াইনের গন্ধ। আমি খেয়াল করলাম, মা যেন অন্য এক পৃথিবীর টান অনুভব করছেন।

এরপর থেকে একটার পর একটা নিমন্ত্রণ—নতুন পোশাক, নতুন পার্টি, নতুন আলাপ। সংসারের কাজ, বাবার প্রতি টান—এসব যেন দূরে সরে যাচ্ছে।

আর আমি, একা বসে ভাবছি—
আমার মা কি সত্যিই বদলে যাচ্ছেন?
না কি এই পরিবর্তনই তাঁর আসল রূপ, যা এতদিন লুকিয়ে ছিল?

এক সন্ধ্যায় মা বললেন—
“আজ আমার একটু দেরি হবে। তুমি পড়াশোনা করো, দরকার হলে ডিনার গরম করে খেয়ো।”

বাবা তখন অফিস শেষে সোজা রিহার্সালে গেছেন। আমি বুঝতে পারলাম, মা আবার বাইরে যাচ্ছেন। তবে এদিন তাঁর সাজগোজে আলাদা একটা ব্যাপার ছিল। গাঢ় লাল গাউন, হালকা মেকআপের ওপর ঝলমলে হাইলাইটার, হাতে চিকন সোনার ব্রেসলেট—এমন সাজ আগে কখনও দেখিনি।

ফটোগ্রাফার গাড়ি নিয়ে এসে মা’কে নিয়ে গেল। আমি জানতাম না সেদিন গন্তব্য কোথায়। পরে জেনেছিলাম, সেটি ছিল শহরের এক পাঁচতারা হোটেলের রুফটপ লাউঞ্জ। সেখানে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর সঙ্গে। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, পরিপাটি স্যুট, মুখে আত্মবিশ্বাসী হাসি।

লোকটা মাকে দেখেই বলল—
“লাবনী, আপনার ছবি আমি দেখেছি। সত্যি বলতে কী, ফটোগ্রাফারকে বলেছিলাম—আমাকে এই মহিলার সঙ্গে একবার দেখা করাতেই হবে।”

মা একটু হেসে বললেন—
“আমি তো এসবের সঙ্গে একেবারেই নতুন।”

ব্যবসায়ী গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে মাকে দিলেন।
“নতুন হলেও আপনি আলাদা। আপনার মধ্যে একটা মাধুর্য আছে, যা ট্রেনিং দিয়ে পাওয়া যায় না।”

রাত বাড়তে থাকল। মৃদু আলো, গানের সুর, টেবিল ভরা দামি খাবার আর পানীয়—সব মিলিয়ে পরিবেশটা ধীরে ধীরে ব্যক্তিগত হয়ে উঠল। ফটোগ্রাফার সযত্নে আড়াল হয়ে গেল, যেন সব কিছুই পরিকল্পিত।

কিছুক্ষণ পর ব্যবসায়ী মাকে প্রস্তাব দিলেন—
“আমি চাই, আগামী সপ্তাহে একটি প্রাইভেট ডিনারে আপনি আসবেন। কোনও ক্যামেরা থাকবে না, কোনও ভিড় থাকবে না, শুধু আপনি আর আমি।”

মা এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন। চোখে-মুখে দোটানার ছাপ। তারপর গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন—
“ঠিক আছে।”

সেই রাতটা মায়ের জীবনে যেন প্রথম স্পষ্ট সীমানা অতিক্রমের রাত।

বাড়ি ফিরলেন গভীর রাতে। আমি অপেক্ষা করছিলাম। মা দরজা খুলতেই চমকে গেলেন—
“এত রাতে জেগে আছো কেন?”

আমি শুধু বললাম—
“ঘুম আসছিল না।”

মা তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন। কিন্তু আমি তাঁর চোখের ভেতর সেই ঝলকানিটা স্পষ্ট দেখলাম—
ভয়, দ্বিধা, আনন্দ আর এক অদ্ভুত নেশার মিশ্রণ।

পরদিন মা ঘরে ফিরেছিলেন এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে—শরীর যেন ক্লান্ত, মুখে অনিচ্ছার ছাপ, চোখে অস্বস্তি। সোজা নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি ডাইনিং টেবিলে অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু মা ডিনার পর্যন্ত খেতে বেরোলেন না।

বাবা তখন অফিসের কাজে বাইরে, দু’দিনের ট্রিপে। ফলে মায়ের এই হঠাৎ পরিবর্তনটা শুধু আমিই খেয়াল করলাম।

দুদিন মাকে একেবারেই বাড়ির বাইরে বেরোতে দেখিনি। রান্নাঘর, বারান্দা, এমনকি লিভিং রুমেও তেমন আসতেন না। বেশিরভাগ সময় দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকতেন।

তৃতীয় দিনের দুপুরে সোমা কাকিমা এলেন। স্বাভাবিকভাবেই হাসি মুখে এসেছিলেন, কিন্তু মায়ের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলেন। আমি তখন নিজের পড়ার ঘরে ছিলাম। হঠাৎ কৌতূহল হলো—ওরা কী নিয়ে কথা বলছে? আস্তে আস্তে কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম।

ভেতর থেকে কাকিমার কণ্ঠ ভেসে এল—
“এইভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ কেন লাবনী? Mr. চৌধুরী তোমাকে নিয়ে একেবারে পাগল হয়ে আছে। ওর প্রস্তাব মেনে নিলে তোমারই তো ভালো হবে। প্রথমে একটু অস্বস্তি লাগে, তারপর সবই ন্যাচারাল মনে হয়।”

মা ধীরে বললেন—
“সোমা, আমি এটা পারব না। ওইদিনের পর থেকে আমার ভেতরে একধরনের অপরাধবোধ কাজ করছে।”

কাকিমা হেসে উঠলেন—
“আরে বোকা মেয়ে, অপরাধবোধ কেন? এত বড় একজন ব্যবসায়ী তোমাকে পছন্দ করেছে, এ তো গর্বের ব্যাপার। একবার গেলেই দেখবে, সব সহজ হয়ে যাবে। তুমিও তৃপ্ত হবে, শরীর-মন দুটোই। আর বিশ্বাস করো, তুমি না বললেও শেষমেশ ফিরবেই ওর কাছে। তাতে তোমারই ক্ষতি।”

মা চুপ করে রইলেন। আমি শুনতে পাচ্ছিলাম, তাঁর শ্বাস ভারী হয়ে আসছে। হয়তো লড়াইটা তাঁর ভেতরেই চলছে—সংসারের লাবনী আর নতুন জীবনের লাবনী একে অপরকে টেনে ধরে আছে।

কাকিমার শেষ কথা কানে এলো—
“Don’t waste time, লাবনী। জাস্ট রিল্যাক্স অ্যান্ড হ্যাভ ফান।”

তারপর ঘরের ভেতর নীরবতা।

আমি বিছানায় শুয়ে কাঁপতে লাগলাম। নিজের কানে শোনা কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মা সত্যিই কি এই পথে এগোবেন? নাকি এখনও ফিরে আসার সুযোগ আছে?

সোমা কাকিমার চাপ আর বোঝানোর পর অবশেষে মা রাজি হলেন Mr. চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে। সেদিন সন্ধ্যেবেলা মাকে সাজতে দেখেছিলাম অন্যরকমভাবে। মেহগনি রঙের সিল্ক শাড়ি, হালকা গাঢ় লিপস্টিক, কানে লম্বা ঝোলানো দুল। মা যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শেষবার ঠোঁটে লিপগ্লস মাখছিলেন, তাঁকে যেন আমার পরিচিত লাবনী দাশগুপ্ত বলে মনে হচ্ছিল না—একটা নতুন মানুষ, যিনি এখন এক অন্য পৃথিবীতে প্রবেশ করতে চলেছেন।

বাবা তখনও শহরের বাইরে ট্রিপে। মা আমাকে শুধু বললেন—
“আমি কাকিমার সঙ্গে একটা পার্টিতে যাচ্ছি, ফিরতে রাত হবে। চিন্তা কোরো না।”

আমি মার কথার জবাবে কিছু বলিনি, শুধু মাথা নাড়লাম।

মাকে নিয়ে গেল একটি নীল রঙের গাড়ি। জানতাম, গন্তব্য পার্ক স্ট্রিটের এক বিলাসবহুল হোটেল। এরপর সারাদিন-সারারাত আমি অস্থির হয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম।

রাত বাড়তে লাগল, ঘড়ির কাঁটা একটার দিকে এগোল। হঠাৎ বারান্দা থেকে দেখলাম—আমাদের ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাঁড়াল একটি নীল রঙের মার্সিডিজ। আলো নিভিয়ে আমি আড়াল থেকে তাকিয়ে রইলাম।

গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন মা। তাঁর শাড়ির আঁচল এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল, যা তিনি বারবার ঠিক করার চেষ্টা করছিলেন। মুখে ক্লান্তি, কিন্তু চোখে এক অদ্ভুত ঝলক।

গাড়ি থেকে নামলেন Mr. চৌধুরীও—গাঢ় স্যুট পরা, আত্মবিশ্বাসী ভদ্রলোক। বিদায় নেওয়ার আগে মা হেসে তাঁকে আলতো করে হাগ করলেন। মুহূর্তটা আমার চোখে যেন ছুরি চালানোর মতো ছিল।

তারপর মা ভেতরে ঢুকে পড়লেন। ঘর নীরব, শুধু তাঁর হাই হিলের শব্দ অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আমি বুক ধড়ফড় করতে করতে দাঁড়িয়ে রইলাম বারান্দায়।

সেদিন রাতে ঘুম আসেনি। ভেতরে ভেতরে একটা দোটানা—আমি যা দেখলাম, সেটা কি সত্যিই আমার মায়ের জীবন? নাকি তিনি এমন এক পথে হাঁটতে শুরু করেছেন যেখান থেকে ফেরা আর সম্ভব নয়?

পরদিন ভোরে মা ঘুম থেকে উঠে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বাড়ির কাজ শুরু করলেন, যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু তাঁর চোখের নিচে হালকা কালো দাগ, ঠোঁটে শুকনো লিপস্টিকের দাগ আর শরীরের ক্লান্ত ভঙ্গি সবকিছুই বলে দিচ্ছিল গত রাতের গল্প।

পরদিন আমার টিউশন ফিস এর জন্য টাকা দরকার ছিল। বাবা মার কাছে রেখে যেত সংসার খরচের টাকা। মা ফোনে একটা ওয়েব সিরিজ দেখছিল, মার কাছে সেই টাকা চাইতে মা ওর কাধের ব্যাগ থেকে যত টাকা প্রয়োজন সেটা নিয়ে নিতে বলল, আমি মার ব্যাগ এর চেন খুলে অবাক হয়ে গেলাম, ভেতরে 4 টে 500 টাকার নোট এর বান্ডিল। এত টাকা মা পেলো কথা থেকে বুঝতে পারছিলাম না।

এমন সময় বেল বেজে গেল। মা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, অনিরুদ্ধ এসে গেছে। দরজাটা খুলে ওকে আমার রুমে নিয়ে এসো।অনিরুদ্ধ একজন pro fashion photographer এর নাম। আমি জিজ্ঞ্যেস করলাম, বাড়ির মধ্যে ফটো শুট হবে?

মা বলল, হ্যা আজ বাইরে বেরোতে ইচ্ছে করছে না, তাই ওকে ঘরে ডেকে নিলাম। আমি মার ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে দরজা খুলে অনিরুদ্ধ বাবু কে ভেতরে নিয়ে এলাম। মা ফ্রিজ থেকে বিয়ার এর বোতল আর দুটো গ্লাস বের করে আনল। তারপর অনিরুদ্ধ বাবু কে নিজের বেড রুমে ঢুকিয়ে, দরজা টা বন্ধ করে দিল। আমি দরজায় কান লাগিয়ে গ্লাসে বিয়ার ঢালার শব্দ, হা হা হি হি শুনতে পাচ্ছিলাম।

আমি সেদিন টিউশন নিতে গেলাম না। আমাদের ড্রয়িং রুমে একটা ম্যাগাজিন হাতে বসে থাকলাম, কখন এই photo shoot শেষ হয়, দরজা খোলার পর মার অবস্থা দেখার জন্য, 2 ঘণ্টা 20 মিনিট পর দরজা খুলল, অনিরুদ্ধ বাবু কাধে ব্যাগ নিয়ে জামার বোতাম আটকাতে আটকাতে আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি হেসে বেরিয়ে গেল, আমি ছুটে এসে মার রুম এর দরজায় এসে ভেতরে তাকালাম। যা দৃশ্য দেখলাম তাতে আমার পায়ের তলায় মাটি সরে যাচ্ছিল।।আমার মা সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় কোনো রকমে একটা সাদা bed sheet দিয়ে নিজের বুক আর কোমর এর নিচ পর্যন্ত ঢেকে, বিছানায় আধ সওয়া অবস্থায় সিগারেট খাচ্ছে, চুল অবিন্যস্ত, কপাল এর সিদুর এর টিপ লেপ্টে গেছে। Ac চলছিল তার পরেও মা ঘেমে গেছিল।

আমি ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণের জন্য। চোখ ফিরিয়ে নিতে চাইলেও পারছিলাম না। মায়ের দেহভঙ্গি, সেই মুহূর্তের ক্লান্তি আর অদ্ভুত প্রশান্তির মিশ্রণ—সব কিছু যেন এক অচেনা ছবির মতো চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।

মা একটুখানি চমকে উঠলেন আমাকে দেখে। তাড়াতাড়ি বেডশিট টেনে শরীর ঢাকতে গিয়ে বললেন—
“এই সময় তুই এখানে কেন এলি? টিউশনের জন্য রেডি হোসনি?”

আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম—
“আমি… আমি শুধু দেখতে এলাম… দরজা খোলা ছিল।”

মা ভুরু কুঁচকে সিগারেটের টান শেষ করে অ্যাশট্রে ফেলে দিলেন। তাঁর চোখে তখন এক অদ্ভুত দৃঢ়তা।
“তুই কিছুই দেখিসনি, বুঝলি? বাইরে যা।”

কিন্তু আমি আর বেরোতে পারছিলাম না। কৌতূহল, হতভম্বতা আর ভিতরের কষ্ট একসাথে আমাকে আটকে রেখেছিল। বিছানার পাশে টেবিলে পড়ে ছিল কয়েকটা খোলা কনডমের প্যাকেট, কিছু কসমেটিক্স আর একটা আধভর্তি বিয়ারের গ্লাস।

আমি মৃদু স্বরে বললাম—
“এত টাকা… ওই ব্যাগে… সব কি এভাবেই আসছে?”

মা হঠাৎ চুপ হয়ে গেলেন। তাঁর চোখেমুখে অপরাধবোধের ছাপ ফুটে উঠল, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে তিনি আবার সেই শক্ত মুখোশ পরে নিলেন।
“এগুলো বড়দের ব্যাপার। তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। তোকে পড়াশোনা করতে হবে, বুঝলি? বাকিটা আমি সামলে নেব।”

আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভেতরে একদিকে মায়ের জন্য ভয়ঙ্কর কষ্ট হচ্ছিল, অন্যদিকে এক অদ্ভুত ক্ষোভ জমতে শুরু করেছিল।

হঠাৎ মা আমার দিকে এগিয়ে এলেন, বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। বেডশিট আঁকড়ে ধরে বুক ঢেকে রেখেছেন, কিন্তু চেহারায় একরকম দৃঢ়তা।
“তুই যা দেখলি, যা ভাবছিস, সব ভুলে যা। আমি খারাপ কিছু করছি না, শুধু একটু আলাদা রাস্তায় হাঁটছি। তুই এটা বুঝবি একদিন।”

তারপর তিনি আমার কাঁধে হাত রাখলেন। গরম, ঘামে ভেজা সেই হাত যেন আমার শরীর জুড়ে শিহরণ ছড়িয়ে দিল। আমি ভয় আর দ্বিধার মধ্যে দাঁড়িয়ে রইলাম, কোনো উত্তর দিতে পারলাম না।

আমি ধীরে ধীরে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। দরজা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে আবার লাইটারের শব্দ, সিগারেটের টান আর জানালার পাশে মায়ের দীর্ঘশ্বাস কানে আসতে লাগল।

সেই রাতটা আমার জন্য অসহ্য দীর্ঘ হয়ে উঠল। মনে হচ্ছিল—আমি যেন আমার নিজের মাকে হারাতে বসেছি, অথচ কাউকে কিছু বলার মতোও অবস্থায় নেই।

সেই রাতে আমি ঘুমোতে পারিনি। ল্যাপটপে পড়াশোনার নাম করে বসেছিলাম, হঠাৎ এক ফোল্ডারে ঢুকে গেলাম—যেটা আসলে অনিরুদ্ধর দেওয়া লিংক ছিল। আমি ক্লিক করতেই স্ক্রিনে উঠে এলো কিছু এক্সক্লুসিভ ছবি।

আমার মা—লাবনী দাশগুপ্ত।
কিন্তু যেন সম্পূর্ণ অচেনা এক নারী।

সিল্কের বেডশিটে আধশোয়া অবস্থায়, স্লিপ ড্রেস কাঁধ থেকে নেমে আসা, ঠোঁটে লিপস্টিকের গাঢ় ছাপ, চোখে কামনামিশ্রিত দৃষ্টি—মা সেখানে শুধু একজন গৃহবধূ ছিলেন না, বরং একদম অন্যরকম, সাহসী, প্রলুব্ধকর নারী হয়ে উঠেছিলেন।

আমার বুকের ভেতর ধকধক শুরু হলো। কেমন করে সম্ভব! এই কি সেই মা, যিনি সারাজীবন আমাকে পড়াশোনায় উৎসাহ দিয়েছেন, সংসারে চুপচাপ থেকেছেন, বাবার ব্যস্ততাকে মুখ বুজে মেনে নিয়েছেন?

কিন্তু ছবিগুলো একটার পর একটা দেখে বুঝতে পারলাম—এটা আর শুধুই ফটোশুট নয়। এটা মাকে ধীরে ধীরে অন্য এক জগতে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র।

পরদিন বিকেলবেলা আমি হঠাৎ করেই সাহস করে কাকিমার ফ্ল্যাটে গেলাম। সোমা কাকিমা তখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মেকআপ করছিলেন। আমাকে দেখে একটু অবাক হলেও হেসে বললেন—
“কি রে, হঠাৎ এসেছিস? নাকি আবার তোর মাকে নিয়ে চিন্তা?”

আমি দাঁত চেপে বললাম—
“আমি আমার পুরোনো মা কে ফেরত চাই। আপনি ওনাকে বদলে দিচ্ছেন। উনি যেরকম ছিলেন, তাতেই ভালো ছিলেন।”

কাকিমা থেমে আমার দিকে তাকালেন, ঠোঁটে এক রহস্যময় হাসি।
“তুই এখন ছোট, তুই বুঝবি না। তোর মা কষ্টে বেঁচে ছিল, নিজের অস্তিত্বটাই ভুলে গিয়েছিল। আমি ওকে শিখিয়েছি—নারী মানেই শুধু সংসার আর ত্যাগ নয়। নারী নিজের রূপ, শরীর আর স্বাধীনতাও ভোগ করতে পারে। একটু বড় হলে তুইও বুঝবি।”

আমি গলা কাঁপিয়ে বললাম—
“কিন্তু উনি তো ভেঙে যাচ্ছেন… ওনাকে কষ্ট দিচ্ছেন।”

কাকিমা এবার হেসে উঠলেন,
“কষ্ট নয়, এটা রূপান্তর। একটা শুঁয়োপোকা যেমন কোকুন ছেড়ে প্রজাপতি হয়, তোর মা ও তাই হচ্ছে। তুই ওকে আটকাস না।”

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। বুঝলাম, এই নারী—সোমা কাকিমা—আমার মাকে একেবারে নতুন এক দিকের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন।

কয়েকদিন পর আবার সেই অনিরুদ্ধ বাবু এলেন। এবার আর শুধু ক্যামেরা নয়, সঙ্গে আনলেন red wine এর বোতল। আমি লুকিয়ে দেখছিলাম—মা সেজেগুজে ওনাকে অভ্যর্থনা করলেন, তারপর দুজনে একসাথে ঢুকে গেলেন মায়ের রুমে। দরজা বন্ধ।

ভেতর থেকে ভেসে আসছিল হাসি, গ্লাসে ওয়াইন ঢালার টুংটাং শব্দ, আর ফ্ল্যাশের ক্লিক ক্লিক।

প্রায় দুই ঘণ্টা পর দরজা খুলল।
অনিরুদ্ধ কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসছেন, মুখে পরিতৃপ্ত হাসি। আর মা… শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ, কিন্তু কেবল টাওয়েল জড়ানো শরীরে দরজা পর্যন্ত ওনাকে ছাড়তে এলেন।

আমি অবাক চোখে দেখছিলাম। সেই দৃশ্যের প্রতিটা মুহূর্ত আমার মনে গেঁথে যাচ্ছিল।

সেদিন রাতেই আবার আমি ছবিগুলো হাতে পেলাম—এক্সক্লুসিভ boudoir photo shoot।
মা নামমাত্র পোশাকে—কখনো লেসি লিঞ্জারি, কখনো কেবল শাড়ির আঁচল সামান্য খসিয়ে। ক্যামেরার সামনে ওনার হাসি, ভঙ্গি, দৃষ্টি—সবকিছুতেই এক অচেনা মাতৃত্বের বাইরের নারীসত্তা।

আমি মনেই মনেই ফিসফিস করে বললাম—
“এটা আমার মা নয়… এটা একদম অন্য কেউ…।”

পরদিন বাবা ফিরল, কদিন আবার সব স্বাভাবিক, কিন্তু দুদিন যেতে না যেতেই বাবা যখন অফিসে, দুপুর বেলা আবার ও অনিরুদ্ধ বাবু এলেন। এবার সাথে করে নিয়ে এলেন তার এক বন্ধু কে। তাকে মার কাছে রেখে অনিরুদ্ধ বাবু একটা কাজ আছে বলে বেরিয়ে গেল। মা ঐ অপরিচিত ভদ্রলোক কে নিয়ে বেড রুমে ঢুকে দরজা দিল। ভেতর থেকে মার গলায় শিৎকার এর আওয়াজ ভেসে আসছিল। তাই শুনে মনে হচ্ছিল, ঐ ভদ্রলোক খুব হার্ড কোর ইন্টারকোর্স করছিলেন। 2 ঘণ্টা পর দরজা খুলল, আমি দরজা খোলার শব্দ পেয়ে এগিয়ে এসে উকি দিলাম। যা দৃশ্য দেখলাম তাতে আমার গা গুলিয়ে উঠলো। ভদ্রলোক দাড়ানো অবস্থায় শার্ট প্যান্ট পড়ছিলেন, আর বিছানায় মা সেই সাদা বেড শিট বুকের কাছে খামচে ধরে নগ্নতা আড়াল করে, টাকার নোট গুনছিলেন। ভদ্রলোক এর shirt প্যান্ট পড়া হয়ে গেলে, ভদ্রলোক মা কে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। ভদ্রলোক বলল, পরশুদিন আবার দেখা হচ্ছে , সোমা দির সাথে কথা হয়ে আছে।”

মা হেসে মাথা নাড়ল, টাকা গুলো কাধের ব্যাগে রেখে সিগারেট ধরলো। মার বুকের কাছে দুর থেকে টাটকা লাভ বাইট মার্ক দেখতে পেলাম। এই দৃশ্য দেখে খুব অসহায় বোধ হচ্ছিল। সেদিনই ডিসিশন নিলাম, এই বাড়িতে আমার পক্ষে থাকা আর possible না। আমি হোস্টেল এর জন্য এপ্লাই করব। আমি বাড়ি থেকে চলে গেলে মা আর খোলাখুলি ভাবে তার নতুন জীবন টা উপভোগ করতে পারবে।

সমাপ্ত…..

( এই কাহিনী কেমন লাগলো, কমেন্ট করুন।)

Exit mobile version