Site icon Bangla Choti Kahini

রসাভাস / প্রথম পর্ব

আমি সোম, সোমকান্তি বিশ্বাস।
গোপালপুরে আমার বাড়ি। আমার মা-বাবা আজ আর কেউই নেই। থাকার মধ্যে আছে কেবল একটি  বৌদি। দাদাও ছিলো, তিন মাস আগেও, হঠাৎ ডেঙ্গু জ্বরে প্রাণ হারাতে হলো তাঁকে। আর বৌদি হয়ে গেলো বিধবা। বৌদির সিঁদুরশূন্য সিঁথি দেখতে ভালো লাগে না আমার।
নিয়তির খেলা বোঝা বড়ো কঠিন। সৎ চরিত্রের এমন অপূর্ব সুন্দরী এই যুবতীকে এভাবে বিধবা যে কেনো হতে হলো তা ভগবানই জানেন।
মা-বাবা মারা যাওয়ার পর দাদাই তো আমাকে মানুষ করেছে। দাদা আমার থেকে বয়সে প্রায় চৌদ্দ বছরের বড়ো। তাই প্রকৃতি নিয়মে দায়িত্ব তার কাঁধে পড়েছিলো।    মা কেমন ছিলো, তা আর কিছুই মনে পড়ে না। মায়ের আদর যে কী জিনিস, তাও বুঝিনি কোনোদিন। কিন্তু যেদিন দাদা বৌদিকে বিয়ে করে ঘরে আনলো, সেদিন থেকে বৌদিই হয়ে উঠলো আমার দ্বিতীয় মা। মায়ের স্নেহ, মায়া-মমতা দিয়ে বৌদি ভরিয়ে দিলো আমার শূন্য শৈশব।
ভালোই চলছিল দিনগুলো। দাদা-বৌদির স্নেহ ও শাসনে ছোট্ট আমি হয়ে গেলাম বড়ো। স্কুল পেড়িয়ে পা দিলম কলেজের গন্ডির ভেতর। কিন্তু কলেজে ভর্তি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই দাদার আকস্মিক মৃত্যু সবকিছু ওলোটপালট করে দিলো।দাদার দশ বছরের বিবাহিত জীবনেও কোনো সন্তান আসেনি। আজ এই বাড়িতে রয়েছি কেবল আমি আর বৌদি।
এখন বৌদি হয়তো আমাকেই নিজের জীবনের একমাত্র আশ্রয় ভেবে নিয়েছে। আজকাল তাঁর ভালোবাসায় যেন অন্যরকম এক আবেশ দেখি। সে চাই আমি সবসময় তাঁর পাশে থাকি। আমি পড়াশোনা করি — বৌদি পাশে বসে থাকে, কখনও গল্পে মেতে ওঠে, কখনও নিঃশব্দে আমার পড়ার সঙ্গী হয়।
একদিন সন্ধ্যাবেলায় বৌদি সন্ধে দেখাচ্ছিলো। বৌদি তখন একবস্ত্রা অর্থাৎ,  পরনে কেবল একটি সাদা কাপড় — সায়া কিংবা ব্লাউজের চিহ্নমাত্রও নেই।  আমি বইয়ের পাতায় চোখ রেখেছিলাম, হঠাৎ চোখের কোণে ধরা দিলো এক স্বপ্নময় দৃশ্য।
উঠানের জোৎস্না আর প্রদীপের মৃদু আলোয় যেন দেখলাম এক অপার্থিব দেবী — অর্ধনগ্ন, তপ্ত সোনার মতো দীপ্ত শরীর, হালকা ঘামে সিক্ত হয়ে চকচক করছে তার কোমল অঙ্গ। আর সেই পবিত্র মুখশ্রী, সেই ভক্তিভাবনার গভীরতা — যেন কোনো উপমা দিয়েও ব্যাখ্যা করা যায় না।
বৌদি তুলসীতলায় পুজো শেষ করে ঘরের দিকে এলো। আলো-ছায়ার কারুকার্যে ভরা তাঁর শরীরের বিভা যেন আমার শ্বাসরোধ করছিলো।
বাল্বের তীব্র আলোয় আসতেই বৌদির মুর্তি স্পষ্ট  হলো — খোলা পিঠের মোহনীয় রেখা, স্তনের আংশিক দৃশ্য, কোমরের কাছে দুটি মেদভাজ। যেন সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে পরিমিত অনুপাতে গড়েছেন এই নারী-শরীর — ঠিক যতটুকু মেদ থাকলে নারীর সৌন্দর্য পরিপূর্ণ হয়, ততটুকুই। চুলে বাঁধা খোপা থেকে কিছু চুল খুলে গড়িয়ে পড়েছে কাঁধ আর গলায়। সে এক অনির্বচনীয় দৃশ্য! কি এমন আছে এই দেহে? কে জানে! কিন্তু একটিবার চোখে পড়ামাত্রই মন জোয়ারের ঢেউয়ে ভেসে গেলো।
আমি তো বহুবার দেখেছি এই নারীকে— স্নেহের পরশে জড়িয়ে ধরা বৌদি, বুকের আশ্রয়ে আদর করা বৌদি। কিন্তু এভাবে, এত রূপবতী, এত লাস্যময়ী রূপ আগে কখনও দেখি নি। আর এও লক্ষ্য করলাম — পেছন থেকে এই রূপ এক অদ্ভুত মাদকতা ছড়িয়ে দেয়, সামনের রূপ কেমন হবে তা ভাবতেই দমবন্ধ লাগে।
বৌদি উঠান থেকে ঘরে ঢুকে ঠাকুরঘরে প্রবেশ করলো। আমি তখনও সেই এক ঝলক দৃশ্য নিয়ে অভিভূত হয়ে বসে আছি।
হঠাৎ মনে হলো, এই সুধাস্নিগ্ধ রূপ দ্বিতীয়বার দেখা চাই। চিন্তায়-চিন্তায় উত্তেজিত আমি বই সরিয়ে রেখে নিঃশব্দে এগিয়ে গেলাম ঠাকুরঘরের দিকে। দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে তাকালাম।
বৌদির কাছে আমার ব্যবহার সবসময়ই সহজ। ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু ছিলো না। তবু আজ নিজেকে চোরের মতো মনে হলো । মনে হলো বৌদিকে কোনোমতেই জানতে দেওয়া চলবে না যে আমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছি।
বৌদি ঠাকুরের দিকে মুখ করে, নিষ্ঠার সঙ্গে পূজায় মগ্ন। ঘরের মৃদু আলোয় আবারও উদ্ভাসিত সেই সোনালী পিঠ, নরম মেদভাজের মাধুর্য, আর স্তনের অর্ধেক উঁকি দেওয়া দৃশ্য! এক মুহূর্তে যেন সমগ্র দেহের রক্ত মাথায় উঠে এলো। মন চাইল — একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়ি বৌদির ওপর, চুমুতে ভরিয়ে দিই পিঠের কোণে কোণে, হাতের মুঠোয় পুরে নিই সেই নরমতম স্তনযুগল, দারুণ মসৃণ সেই ত্বক  চিরদিনের জন্য আমার হয়ে যাক।
তৎক্ষণাৎ নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। আমি দ্রুত সরে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। কল্পনার কুন্ডলীতে বৌদিকে কাঁপন তোলা আবেশে জড়িয়ে ধরলাম — পেছন থেকে স্তনে স্তনে হাতের স্পর্শ, ঘাড়ে লেপ্টে থাকা চুম্বনের ধারা। হস্তমৈথুনের মধ্যে দিয়ে যেন কল্পনায় বৌদিকে পুরোপুরি নিজের করে নিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই রোমাঞ্চের শিখরে পৌঁছলাম।
তৎক্ষণাৎ জলে ধুয়ে নিয়ে ঘরে ফিরে এলাম।
এবার আমার মধ্যে অপরাধবোধ জেগে উঠলো। যেসব ভাবনার তরঙ্গ আমার মনে আগেই উঠার কথা ছিলো সেগুলো একের পর এক উদিত হয়ে মনসমুদ্রে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করলো। কোনো নারীর প্রতি কুদৃষ্টি দিই না আমি। আর আজ নিজের বৌদির প্রতি এমন ভাব আমার মনে জাগলো কিভাবে? আর বৌদি বলে ডাকলেও সে তো ঠিক বৌদি নয় আমার। সে একরকম মা-ই বলা চলে। সেই মাতৃতুল্যা বৌদিকে আমি লোলুপ দৃষ্টিতে দেখলাম! ছি! কি যে হয়েছিলো আমার!  বৌদির শরীরটাকে ছিড়ে খেয়ে ফেলতে চেয়েছিলাম আমি। বৌদির প্রতি এতো উগ্র কাম আমার মনে এলো কোথা থেকে?
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এতক্ষণে বৌদিও পুজো সেরে ঠাকুর ঘর থেকে বেড়িয়েছে। আমি বৌদিকে বললাম -“আমি একটু বিলের ধারে বেড়াতে যাচ্ছি। একঘন্টার মধ্যে ফিরবো।”
কথাটা বলার সময় বৌদির চোখার দিকে তাকাতে পাড়লাম না। বৌদি হয়তো কিছু বলতে যাচ্ছিলো। আমি কোনো সুযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলাম।
বিলের ধারে গিয়ে বসে ওইসবই ভাবছিলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মনের উদ্বিগ্ন ভাবটা কেটে গিয়ে মনটা শান্ত হয়ে গেলো। জোৎস্নার আলোয় বিলের জল ঝিকিমিকি করছে। বিলের ওপারের গাছপালাগুলোকেও অপূর্ব সুন্দর লাগছে। দু-একটা লোক গাছগুলোর নীচে বসে কিছু একটা করছে। তাস খেলছে হয়তো।
এমন জোৎস্নালোকিতো মনোরম দৃশ্য দেখে ও মৃদু বাতাসের ছোঁয়ায় মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। এই সৌন্দর্যের কাছে বৌদির পিঠ, স্তন বা চুল কোনোটিরই কী তুলনা চলে? বৌদির সৌন্দর্যকে এবার তুচ্ছ বোধ হতে লাগলো। এই বিলের সৌন্দর্যতায় যে নির্মলতা ও পবিত্রতা আছে তা তো নেই বৌদির মধ্যে। বৌদির কথা ভেবে যখন হস্তমৈথুন করছিলাম তখন মনের মধ্যে যে ভাব ছিলো তাকে কি শান্তি বলা যায়? তীব্র উত্তেজনা, চরম কিছু একটা আস্বাদনের ইচ্ছা, বিভৎস উগ্রতা সব মিলিয়ে মনের মধ্যে যে তোলপাড় চলছিলো তা তো শান্তির ঠিক বিপরীত দশা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে কামনার বশবর্তী হয়ে এই পুরুষ মন সেই দিকেই  ধাবিত হয়েছিলো।
মনটা কেমন যেন উদাসীন হয়ে গেলো। আর কিছুই ভাবতে ইচ্ছা করলো না। কোন সৌন্দর্যটা প্রকৃত সৌন্দর্য তাও আর বিচার করতে মন চাইলো না। কোনটা প্রকৃত শান্তি সেই সিদ্ধান্ত নিতেও ইচ্ছে হলো না। এবার মনে হয় মনটা প্রকৃতই চরম শান্তির স্তরে উন্নিত হলো। আমি কেবলই বিলের জলের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

Exit mobile version