বাংলা চটিকাহানি সাইটে আমার লেখা গল্প “ফেসবুকে পরিচয় থেকে পরকিয়া” পাঠ করে এডভকেট সালমা হক আমার marpalash ইয়াহু আইডিতে একটা মেইল করে। সেখানে উনার বিজনেস কার্ড, শেয়ার করেন। কার্ডের ঠিকানা অনুযায়ী উনার চেম্বারে গিয়ে দেখা করি। পরিচয় না দিয়ে উনার কাছে কোর্ট ম্যারেজের বিষয়ে খোঁজ খবর নেই। কোর্ট ম্যারেজের সকল বিষয়ে জেনে নিয়ে, উনার থেকে উনার বিজনেস কার্ড চেয়ে নেই। আর বলে আসি যে প্রয়োজন হলে কল দিয়ে আসবো।
বেশ কিছুদিন পরে আবার একটা মেইল আসে। সেখানে সালমা হক লিখেন যে, ডিসেম্বর মাসে কোর্ট বন্ধ থাকে, সে সময় আমাদের হাতে তেমন কোন কাজ থাকে না।
আমার একটা প্ল্যান আছে, সামনাসামি দেখা করে প্ল্যানটা শেয়ার করতে চাই আপনার সাথে। যেহেতু প্ল্যানটা আপনাকে নিয়ে, সেহেতু আপনার সাথে আগে শেয়ার করে তার পরে একটা ডিসিশন নিতে হবে। এ বিষয়ে আপনার কোন আইডিয়া থাকলে বলবেন। আগামী শুক্রবার সকাল ৭ টায় জাতীয় শহীদমিনারে চলে আসবেন। গত মেইল এ আমি আপনাকে আমার বিজনেস কার্ড পাঠিয়ে ছিলাম। ওখানে আমার মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। সময় মতো এসে একটা কল দিবেন। আমার এই ইমেইল এর উত্তর দেন আর না দেন সিন করলে অবশ্যই আপনার নম্বর দিয়ে রাখবেন।
আমি মেইল এর উত্তরে শুধুমাত্র আমার মোবাইল নম্বর দিলাম এবং এক লাইনে লিখলাম আবারও দেখা হবে অবশ্যই। ফিডব্যাক মেইলে শুধুমাত্র লেখা আছে “আবারও” বলতে ঠিক বুঝলাম না। আমি ফিরতি মেইলে উত্তর দিলাম যে, সে না হয় দেখা হলেই বলবো।
বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায় আমার মোবাইল নম্বরে একটা কল এলো। কল রিসিভ করতেই সুরেলা কন্ঠ কানে এলো, তাহলে সকাল ৭ টায় দেখা হচ্ছে মশাই। কথা শুনেই বুঝলাম উনি এডভোকেট সালমা হক। আমি ছোট্ট করে উত্তর দিলাম জি অবশ্যই।
নভেম্বর মাসের শেষের দিকে শিতের আমেজ ছরিয়ে পরে। আমি এমনিতেই রাতজাগা পাখি। সকালে উঠতে দেরি করি। শীতের সকাল ৭ টা মানে তো অন্য সময়ের কাক ডাকা ভোর। কি আর করা কাজ থাকলে তো আর বিছানায় শুয়ে থাকলে চলে না। কি বলেন আপনারা?
শুক্রবার সকালে উঠে কুসুম-গরম পানিতে গোসল করে তৈরি হয়ে নিলাম। যেহেতু শহীদমিনারে ডেকেছেন, সেহেতু পাঞ্জাবি পায়জামা পরিধান করাই উত্তম মনে করে একটা ব্লু রং রঙের পাঞ্জাবী এবং ঘিয়ে সাদা রং এর পায়জামা পড়লাম, পায়ে চামরার কালো চটি এবং সাদা একটা চাদর মুড়িয়ে বের হইলাম।
শহীদমিনারের সামনে রিক্সা থেকে নেমে হালকা কুয়াশায় মোড়ানো ফাঁকা পরিবেশে মনটাই ফুরফুরে হয়ে গেলো। রাস্তায় তখনও ঝাড়ুদার ঝারুদিতেছে। হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৬.৫৫ এখনও ৫ মিনিট সময় হাতে আছে। একটা সিগারেট ধরাবো কি না ভাবছি। পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিতে গিয়ে শহীদমিনারের দিকে তাকিয়ে আশপাশ ভালো করে দেখে নিতে গিয়ে বাম পাশে চোখ আটকে গেলো।
এমন সময় দেখতে পেলাম ওখানে সাদা শাড়ী পড়া এবং তার শরীরে লাল শাল জরানো কোন একটা মেয়ে একা বসে আছে। তার হাতে ফুলের গুচ্ছ মনে হচ্ছে। আমি তখন সিগারেট এর নেশা বাদ দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে বুঝলাম যে, উনি আর কেউ নয়। যার জন্য এসেছি উনি সেই এডভোকেট সালমা হক।
আমি সামনে এগিয়ে যেতেই উনি উঠে দাঁড়ালেন। ফুলের গুচ্ছ গুলো আমাকে দিয়ে –
সালমা হকঃ আমি সালমা হক।
জয়ঃ আমি জয়। আপনি কখন এসেছেন।
সালমা হকঃ এই মাত্র এসে বসেছি আর আপনি চলে এলেন। সময় মতো চলে আসার জন্য ধন্যবাদ।
জয়ঃ স্বাগতম।
সালমা হকঃ আমরা এখানেই একটু বসি।
জয়ঃ জি অবশ্যই।
সালমা হকঃ আপনাকে দেখার পরে বুঝলাম।
জয়ঃ কি বুঝলেন?
সালমা হকঃ কেন মেইলে লিখে ছিলেন যে, আবারও দেখা হচ্ছে।
জয়ঃ কেমনে বুঝলেন?
সালমা হকঃ আপনি সেদিন আমার চেম্বারে গিয়ে ছিলেন।
জয়ঃ জি।
সালমা হকঃ পরিচয় দিলেন না কেন?
জয়ঃ পরিচয় দিলে কি হইতো?
সালমা হকঃ দিয়েই দেখতেন। না কি ভয় পেয়ে ছিলেন?
জয়ঃ না, ভয় পাওয়ার কি আছে? আসলে আপনাকে না জানিয়ে আপনার সাথে দেখা করে, আপনাকে আপনার স্বরূপে দেখে নিতে গিয়ে ছিলাম।
সালমা হকঃ অন্তত কল দিয়ে যেতেন।
জয়ঃ কল দিয়ে গেলে তো বলে কয়ে আপনার সময় মতো যেতে হইতো। এতে আপনার কাজের সিডিউল নষ্ট হয়ে যেতো। আমি সেটা চাই নাই। আর চেম্বারে গিয়ে পরিচয় দিলে হয়তোবা বিব্রতবোধ করতেন।
সালমা হকঃ আপনি আমার কথা ভেবে পরিচয় দেন নাই। সে জন্য ধন্যবাদ। হয়তোবা একটু বিব্রতবোধ হইতো। অপ্রস্তুত হয়ে যেতাম। কিন্তু আপনি আমার চেম্বারে গিয়ে আমায় দেখে চলে এলেন। একটুও আপ্যায়নের সুযোগ দিলেন না। এটা ভেবেই এখন বিব্রতবোধ কাজ করছে মনে।
জয়ঃ সে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে, এখন তো আমার এক সাথে আলাপ করছি।
সালমা হকঃ জয়।
জয়ঃ জি।
সালমা হকঃ আপনি চেম্বারে গিয়ে আমার স্বরূপে দেখতে গিয়ে কেমন রুপ দেখেছেন?
জয়ঃ আপনি এডভকেট হিসেবে অনেক আন্তরিক। আপনি আপনার কাজের প্রতি খুব সিরিয়াস। ক্লায়েন্ট এর জন্য আপনার পক্ষ থেকে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
সালমা হকঃ থাক হয়েছে আপনাকে আর পাম দিতে হবে না।
জয়ঃ একদম নয়। আমি পাম দিয়ে ফুলানোর চেষ্টা কখনও করি না।
সালমা হকঃ তাহলে, মাত্র ৩০ মিনিট এর মতো চেম্বারে থেকেই আমার সম্পর্কে এমন বলতে পারেন না।
জয়ঃ কারও কাজের ধরন দেখে, আচরণ দেখে এবং আশেপাশের লোকজনের সাথে কথাবার্তা ও মোবাইলে ক্লায়েন্ট ডিল করার আলাপচারিতা শুনে বিশেষ করে এডভোকেট সম্পর্কে ধারণা করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। মহিলা এডভোকেট হলে তো কথাই নেই। আর আপনার কাছে আমি কোর্ট ম্যরেজ এর বিষয়ে জানতে চেয়ে নিজে ক্লায়েন্ট হয়ে বেশ বুঝেছি।
সালমা হকঃ আমাকে এমন করে পর্যোবেক্ষণ করে রিড করার জন্য, আবারও ধন্যবাদ।
জয়ঃ স্বাগতম।
সালমা হকঃ তবে আপনি খুব চাটুকারিতা করতে পারেন এটা ক্লিয়ার। তবে আসল সময় কেমন চাটুকারিতা করেন? সেটা দেখার বিষয়।
জয়ঃ সে না হয় সময় মতো পরিক্ষা করে দেখে নিয়েন।
সালমা হকঃ সেটা সময় মতো বুঝে নেবো না হয়।
জয়ঃ অবশ্যই। কেন নয়?
সালমা হকঃ এবার চলেন কোথায়ও গিয়ে নাস্তা করে নেই।
জয়ঃ চলুন। কিন্তু কোথায় যাবেন।
সালমা হকঃ স্টারে সকালের নেহারি ও নান অনেক মজাদার হয়।
জয়ঃ স্টারের কোন সাখায়?
সালমা হকঃ কাছেই যেটা হবে। রিক্সায় যাওয়া যাবে এমন।
জয়ঃ ঠিক আছে চলুন।
জয় এবং এডভকেট সালমা হক একটা রিক্সা নিয়ে জজকোর্ট এর সামনের স্টারে গিয়ে বসে। সেখানে অনেক ভির থাকে তবে আজ কোর্ট বন্ধ বলে তুলনামূলক ভাবে চাপ একটু কম। ওরা বসেছে এক সাইডে ছোট্ট টেবিল টায়। কোর্ট এর সামনে হওয়ায় এডভোকেট সালমা হক’কে এই স্টারের বেশির ভাগ স্টাফ চেনে। যে হেতু ক্লায়েন্ট নিয়ে এখানে দুপুরের খাবারের জন্য মাঝে মাঝে আসতে হয়। টেবিলে দু’জনার জন্য নান রুটি এবং নেহারি দিয়ে যাওয়ার পরে-
সালমা হকঃ এবার শুরু করি।
জয়ঃ কি?
সালমা হকঃ সামনে খাবার রেখে কি শুরু করতে বলবো বলেন?
জয়ঃ ও তাই তো।
সালমা হকঃ আপনিও না?
জয়ঃ কিঃ
সালমা হকঃ বাদ দেন, খাওয়া শুরু করেন।
জয়ঃ ধন্যবাদ, আপনিও তো খাচ্ছেন না। চলুন এক সাথে শুরু করি।
টুকটাক কথা বলতে বলতে একে অপরের সম্পর্কে জেনে নিতে নিতে খাওয়া শেষ করলো। বিলটা সালমা হক পে করে দিয়ে নিচে এসে বলে-
সালমা হকঃ এই এলাকায় আমার বেশি সময় থাকা ঠিক হচ্ছে না। চলেন হাতিরঝিল গিয়ে বসি।
জয়ঃ চলেন।
স্টারের নিচ থেকে উবার কল করে হাতিরঝিল এফডিসির কাছে গিয়ে বসে। এখানে এই সময় একদম ফাঁকা। সবাই হাতিরঝিল আসে বিকেলে।
সালমা হকঃ এবার আপনাকে আমার পরিকল্পনা বলছি শুনুন।
জয়ঃ জি বলুন।
সালমা হকঃ ডিসেম্বর এলেই অলসতা গ্রাস করে। মন ও শরীরের মাঝে। তবুও সব আত্তিয় সজন দের আবদার রক্ষা করতে তাদের বাসায় যেতে হয়। সবাই কি সুন্দর সংসার করছে। ছেলে পুলে নিয়ে স্বামীর সংসার সামলাচ্ছে। শুধুমাত্র আমি একা। ওদের সাজানো গোছানো সংসার দেখলে আমার খুব ভালো লাগে। আবেগে চোখে জল এসে যায়। ওদের বুঝতে না দিয়ে ওয়াসরুমে গিয়ে কান্না করি। বাচ্ছাদের কোলে নিলেই মনে হয়, এমন একটা বেবি তো আমারও হতে পারতো। আমার নিজের বাচ্চাকে জরিয়ে ধরলে কতোই না প্রশান্তিতে ভরে উঠতো মন। সরি জয়। এটা আবেগ। আবেগকে সংবরণ করা অসম্ভব।
জয়ঃ না ঠিক আছে। কিছু কিছু বিষয় থাকে যেগুলো মনের খুব গভীরে লুকায়িত থাকে। আবেগ লুকিয়ে ও চেপে রাখতে রাখতে এক সময় তা বোঝা হয়ে দ্বারায়। তখন সেই বোঝা একা বহন করা বেশ কষ্টকর হয়ে যায়।
সালমা হকঃ ঠিক বলেছো।
জয়ঃ তাই তো বলছি, বোঝা গুলো কিছুটা লাঘব ঘটাতে তার প্রকাশ প্রয়োজন। আর এই জন্য প্রয়োজন একজন আপন মানুষ যার কাছে সব কিছু বলা যায়।
সালমা হকঃ এমন কোন আপন মানুষের দেখা এখনও পেলাম না। তা তোমাকে এসব বলছি। তুমি কিছু মনে করছো না তো আবার? সরি তোমাকে তুমি বলা শুরু করেছি। তুমিও তুমি বলবে।
জয়ঃ ইটস ওকে। তুমি বলো।
সালমা হকঃ আমাকে এক ঘেয়েমিতে ঘিরে ধরেছে। কুরে কুরে খাচ্ছে, আমার একাকিত্ব বোধ। তাই তোমার সাথে আমি আমার সকল অপূর্ণ ইচ্ছের কথা গুলো প্রকাশ করছি। আশা করি তুমি আমাকে সাপোর্ট করবে। অবশ্যই আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করবে।
জয়ঃ অবশ্যই, যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
সালমা হকঃ ধন্যবাদ জয়।
জয়ঃ স্বাগতম।
সালমা হকঃ এতো এতো ক্লায়েন্ট, কোট কাচারি, ঢাকা শহরে এতো মানুষ। কিন্তু দিন শেষে আমি একা। এই যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু দূরে কিছু সময় আমার করে কাটাতে চাই। সেখানে তুমি থাকবে আমার হয়ে।
আমি আগামী মাসে ৭ দিনের জন্য কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, এবং চট্রগ্রাম এলাকায় পাহাড়, ঝর্ণা, নদী ও সাগরের কাছাকাছি থেকে এই যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু দূরে থেকে একটু নিজের মতো সময় অতিবাহিত করবো। মোবাইল থাকবে বক্সে বন্দী। তোমার হাতে থাকবে একটা ডিএসএলআর। তুমি তোমার মতো করে আমার ছবি তুলবে। ফ্রেমে বন্দী করে রাখবে আমার সুন্দর কিছু মূহুর্ত গুলো।
চলমান…..
এর পরে কি হইলো তা জানতে আমার পরবর্তী লেখা প্রকাশের অপেক্ষায় থাকুন।
আপনাদের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই চাইলে যাদের কমেন্টএ বলতে সমস্যা তারা আমার ইয়াহু মেইল আইডিতে আপনাদের মতামত (marpalash@yahoo.com) মেইল করতে পারেন। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।