গ্রেপ্তার – ২ (Greftar - 2)

একটা জিনিস আমি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা সস্তা জিনিস নয়। এখন এই অবস্থায় পড়ে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি আর প্রতিনিয়ত অনেক কিছু জানতেও পারছি। বাবার হয় থাকতে হবে অনেক পয়সা আর তা না হলে আমার মত মেয়েরা…..। আমার দুটির কোনটিই নেই। কলঙ্ক যদি গরীবের লাগে তাহলে তার একটিই পথ খোলা থাকে তা হল মরন। জানেন আমি কিন্ত খারাপ মেয়ে নই।

কাকলী মুখে রুমাল চেপে নিজের কান্না চাপল। সেদিন অনুষ্ঠানবাড়ী থেকে ফেরার পথে ও বন্ধুদের নিয়ে এই কাজ…….চোখের জল মুছে সে বলল। হায় মোর ভালোবাসা! জোর করে ভালোবাসা যায় বলুন? এমন একজন যে সব সময় চেয়েছে আমাকে ভোগ করতে। যখন নানা রকম গিফট দিয়ে আমাকে কিনতে পারেনি তখন জোর করে বন্ধুদের নিয়ে ……….. আজ আমি সিদ্বান্ত নিয়ে ফেলেছি।

মিত্রবাবু নিজেকে এতসময় হারিয়ে ফেলেছিলেন।এতক্ষণ পর ওনার হুঁশ এল। সিদ্বান্ত! কি সিদ্বান্ত?

মেয়েটি বলল মরন। উনি বললেন কি বলছ তুমি! নিজেকে শেষ করে দেবে ওই প্রতারকের জন্য। কাকলী বলল দেখুন আপনি প্লিজ উপদেশ দেবেন না।আপনার কাছেও আমি হয়ত এখন বিরক্তিকর বস্তু কিন্ত আপনি আমার চোখে একজন………..সে থেমে গেল।

মোহনবাবু দমে গেলেন। কাকলী সেটা বুঝতে পেরে বলল, আচ্ছা বলুন তো আমার নাম কি?

মোহনবাবু মনে করতে পারলেন না। মেয়েটি যাবার জন্য উঠে দাঁড়াল।

মোহন মিত্র বললেন সে কি চলে যাচ্ছ?

কাকলী বলল হ্যাঁ। আপনার সাথে শেষবারের মত দেখা করতে এসেছিলাম।

উনি বললেন শেষবার! মানে? তুমি কি যা তা বলছ? সমাজের ভয়ে তুমি নিজেকে শেষ করে দিতে চলেছ? তোমার মা কোমাতে রয়েছে।তাকে এই ভাবে ফেলে যেতে তোমার লজ্জা করছে না।

কাকলী বলল এখানে আসার আগে খবর পেলাম মা ও…..হাউ হাঊ করে সে কেঁদে উঠেও থেমে গেল।

মোহন মিত্র তাকে সান্ত্বনা দিতে কাছে যেতেই সে ওনাকে জড়িয়ে ধরল।অল্প সময়ের মধ্যে সে নিজেকে সামলে নিল এবং বলল চলি।কোন জবাবের আশা না করেই সে চলে গেল। উনি কি করবেন ভাবতে ভাবতেই সময় কেটে গেল।
হুঁশ আসতেই তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পড়লেন আর মনে মনে বললেন থানাতে যেতে হবে।

বাইক নিয়ে থানাতে ঢুকতেই এস,আই এর সাথে দেখা হল। তিনি তাকে বললেন পার্ক এর কেসটার কি হল? এরপর কায়দা করে মেয়েটার ঠিকানা বার করে তিনি বেরিয়ে এলেন। খুব তাড়াতাড়ি বাইক চালালেন । কিন্ত সেই ভাড়াবাড়ি গিয়ে তিনি যখন পুলিশের লোক বললেন তখন জানতে পারলেন যে সেই খারাপ মেয়েটিকে আজই বাড়ী ছেড়ে দিতে হত কিন্ত আজ তার মা মারা গেছে তাই দয়াবশত তাকে আজকের দিন সময় দেওয়া হচ্ছে।

তিনি হাসপাতালের ঠিকানা পত্র জোগাড় করে সেইদিকে রওনা দিলেন। সেখানে জানলেন বাড়ির কেউ ক্লেইম করার জন্য আসেনি। নিজে পরিবারের লোক সেজে বিলপত্র ক্লিয়ার করে শশ্মানে নিয়ে যাবার ব্যাবস্থা করে ফেললেন। তিনি আশ্চর্য হলেন কাকলী কোন বিপদ ঘটিয়ে ফেলেনি তো? তিনি তাকে এখন কোথায় খুঁজবেন? ওনার নিজের উপর ভীষণ রাগ হল।

প্রায় ঘণ্টা খানেক খোঁজার পর তিনি দেখলেন ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে কাকলী দাঁড়িয়ে আছে, সামনে একখানি গাড়ি দাঁড়ানো। ওনার বুঝতে বাকি রইল না কি হতে চলেছে। তিনি গাড়ীর সামনে গিয়ে ব্রেক এত জোরে মারলেন। যে গাড়ির সবাই চমকে গেল। কাকলী মুখ ফিরিয়ে একবার ওনাকে দেখেই চোখ নামিয়ে নিল।

তিনি গাড়ীর সবাইকে চলে যেতে বললেন। তারা গাঁইগুই করতেই তার শান্ত কঠিন স্বরের কথাবার্তা শুনে তারা ভয় পেয়ে কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। মোহন মিত্র চাকরী ছেড়েছেন কিন্ত দাপট নন। তার ভয়ে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত এরা তো কোন ছাড়। তিনি এবার কাকলীর দিকে চেয়ে শুধু বললেন বাইকে বসো।

সে কোনকথা না বলে বাইকে বসতেই তাকে নিয়ে সোজা শশ্মানে চলে এলেন।সে অবাক হয়ে গেছিল। সে ওনার নির্দেশ মত কাজ করতে লাগল।সবকিছু হয়ে যাবার পর তিনি সোজা তাকে নিয়ে সেই ভাড়াবাড়িতে গেলেন। আর বললেন।তুমি আজই ঘর ছেড়ে দিচ্ছ।

‘শুধু দরকারি জিনিসপত্র গুলিই নিয়ে এস’ কাকলীকে বললেন।বাড়িওয়ালা অবাক চোখে সব দেখছিলেন। মোহন মিত্র চাবিখানি বাড়িওয়ালার হাতে দিয়ে বললেন আপনার ঘর আজই ছেড়ে দিচ্ছে কাকলী । কাল গাড়ি পাঠিয়ে দেব জিনিসপত্রগুলি নিয়ে যাবার জন্য। কাকলী কে নিয়ে যখন তিনি বাড়ি ফিরলেন তখন রাত প্রায় একটা।

এই এত সময়ের মধ্যে কাকলীর মুখ থেকে কোন আওয়াজ মোহনবাবু শোনেন নি। তিনি শুধু নিজের ঘরখানি খুলে দিয়ে বললেন এখানে শুয়ে পড়। আর আমি প্রচুর ক্লান্ত। তুমি নতুন করে কিছু করে বস না। কাল সকালে কথা হবে।তিনি বসার ঘরে এসে ভিজে জামা কাপড় খুলে তোয়ালে দিয়ে নিজের বলিষ্ট শরীরখানি মুছছিলেন। তখন তিনি শুধু একখানি ভি শেপের জাংগিয়া পড়ে ছিলেন।

একখানি হাল্কা আওয়াজে পিছন ফিরতেই মোহন মিত্র দেখলেন কাকলী একটি ধুতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তিনি ধুতিখানি নিতে নিতে ভালো করে আপাদমস্তক দেখলেন। অজানা এক অনুভুতি ফিরে এল।তিনি শরীর মুছে ধুতিখানি পড়ে নিলেন। কাকলী মুখে কিছু না বললেও তার চোখে তিনি অনেক কিছু দেখতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন কিছু বলবে?

সে মাথা নিচু করে বলল আপনি আমাকে দ্বিতীয় বার লজ্জার হাত থেকে বাঁচালেন। না হলে আমি আজ একটি বেশ্যা হয়ে নতুন করে জন্ম নিতাম। মোহন বাবু বললেন যাও শুয়ে পড়। সে চলে গেল।

মোহনবাবু সোফাতে শুয়ে ভাবতে লাগলেন আজ অব্ধি তিনি কি করলেন।নিজের বয়স যদি কিছু কম হত তাহলে এই মেয়েকে নিশ্চিত তার সহধর্মিণী করার প্রস্তাব দিতে পারতেন আর সে না ও করতে পারত না। তার সুন্দর মুখখানি মনে পড়তেই মন এক অজানা সুখে ভরে গেল। তিনি তার কথা ভাবতে ভাবতে শুয়ে পড়লেন।

গভীর রাতে চাপা কান্নার আওয়াজে ওনার ঘুম ভেঙে গেল। তিনি ঘড়িতে দেখলেন ৩টা বাজে। তিনি নিজের বেডরুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। দেখলেন দরজা হাল্কা ভেজানো আছে এবং যথারীতি কাকলী কাদঁছে।

তিনি দরজায় আওয়াজ করে বললেন ভিতরে আসতে পারি? সে কান্না থামিয়ে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিল আর কাপড় চোপড় ঠিক করে বসল। তিনি ঘরের ভিতরে ঢুকলেন। তিনি বলতে শুরু করলেন। দেখ কাকলী তোমার উপর যে ঝড় বয়ে গেছে তা আমি আন্দাজ করতে পারি কিন্ত অনুভব নয়। তবে আমি তোমাকে এটুকু বলতে চাই যে তোমাকে একটি ভাল পরিবারে বিয়ে দিয়ে দেবার দায়িত্ব এখন আমার।তুমি একটি ভুল করেছ অন্যায় নয়।

আরে এখন ভুরি ভুরি মেয়ে আছে যারা বিয়ের আগে বহুবার প্রেম করার নামে সেক্স করে।বিয়ের পর স্বামীর অবর্তমানে একাধিকজনের সাথে সেক্স করে। তুমি কেন মিছে কষ্ট পাচ্ছ। তুমি নির্দোষ সেটা মাথায় ভালো করে গেঁথে নেও আর তোমার মায়ের মৃত্যুর জন্য তুমি নও পরিস্থিতি দায়ী। আজ সিনেমাহলে বক্সের টিকিট এত জনপ্রিয় কেন জান না?

পার্ক এ চরম নির্লজ্জতা তুমি দেখতে পাও না? বাড়ী ফাঁকা থাকলেই প্রেমিক বা প্রেমিকার ভালবাসা কেন বিছানায় আসে জান না? নৌকায় মাঝির উপস্থিতিতে প্রেমের নামেতে নৌকা কেন দোলে…. সেই সব নির্লজ্জ ছেলে মেয়েদের কাছে প্রেমের মানে যদি শুধুমাত্র সেক্স হয়,সরি কিছু মনে কর না, তাহলে তুমি কেন ভাবছ মরার কথা।

তুমি এই সমাজের কাছে হার কেন মানবে। এই পুলিশের চাকরি জীবনে আমি অনেক কিছু দেখেছি। ভালবাসা কিন্ত পথে ঘাটে পাওয়া যায় না।সিনেমা আর সিরিয়াল দেখে যারা প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেয় তারা প্রেমের নামে সেক্সের সুড়সুড়ি চায়।আমার রাগ হয় এখনকার ছেলেমেয়েদের দেখে।

বেশীরভাগই তো নির্লজ্জতাকে প্রেম বলে বাহাদুরি কুড়াতে চায়। এত মাড়ানোর কি আছে? সরি, বলে কিনা প্রেম করি। বাড়ীর লোকেরা যখন বাধা দেয় তখন আসে জেদ। ব্যাস এখানেই গোলমাল, প্রেম তখন অমর প্রেম হয়ে যায়। যারা এই ঝোঁকের বশে আগে পিছে না ভেবে সিদ্বান্ত নেয় তারা বেশিরভাগই অশান্তি নিয়ে জীবন কাটায়। পরে অন্যকারো সাথে পালায়; না হলে ডিভোর্স।

তবে ডিভোর্স এখানে খুব কম দেখা যায়।যা বেশী দেখা যায় সেটা হল পরকীয়া। তবে অস্বীকার করি না স্বামীর অক্ষমতা কিছু স্ত্রী র পরকীয়ার জন্য দায়ী তেমনি অস্বীকার করি না ভালবাসাকেও। তবে যেটাকে আমরা সাধারনত প্রেম বলি সেটা ভালবাসা বা প্রেম নয় অন্য কিছু। তিনি বুঝতে পারলেন উত্তেজিত হয়ে বেশী বলে ফেলেছেন।

সঙ্গে থাকুন …