নতুন জীবন – ৫৫

This story is part of the নতুন জীবন series

    নতুন জীবন – ৫৫

    সন্ধ্যার একটু পর মাতাল বাপ্পাদা হোটেলে ফিরলে সাগ্নিক কোনোমতে হিসেব বুঝিয়ে বেরিয়ে এলো দোকান থেকে। বাপ্পাদা হাজিরা স্বরূপ ৫০০ টাকা দিয়েছে সারাদিনের জন্য। সাগ্নিক বাজারের দিকে রওনা দিলো। একটা ছোটো সিলিন্ডার কিনতে হবে। রিতুর কাছে আর না খাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে সে মনে মনে। নিজে রান্না করে খেতে যেসব জিনিস দরকার, সেগুলো প্রায় সবই কিনতে হবে। হাজার দুয়েক টাকা খরচ করে জিনিসপত্র কিনে সব টোটোতে তুলে ঘরে ফিরলো সাগ্নিক।

    রাতের খাবার নিজেই করলো সাগ্নিক। আলুসেদ্ধ ভাত খেয়েও একটা অদ্ভুত শান্তি অনুভব করলো সে। প্রথম দিনের কথা মনে পরলো। কি ছিলো? আর আজ কোথায় এসে পৌঁছেছে। হয়তো আবার আগের জায়গায় পৌঁছাতে চলেছে সে। পাওলার কথায় বাপ্পাদার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে যাওয়া উচিত হয়নি তার। অবশ্য না গেলে জানতেও পারতো না রিতুর মনে কি ছিলো। মোবাইলটা বের করলো সে। কি অদ্ভুত ভাবে রিতু উপভোগ করছে দু’জনের লাগাতার চোদন। সে সাগ্নিককে বলতে পারতো তার ইচ্ছে। সাগ্নিক রিতুর জন্য বাড়া খুঁজে আনতো। তার বদলে রিতু কি করলো? না তার সাথে বেইমানি করলো। পাওলার মেসেজ এলো।
    পাওলা- ঘরে ফিরেছে। কিন্তু এতো বেশী মাতাল হয়ে আছে যে কিছু বলা বৃথা আজ।
    সাগ্নিক- বোলো না। আর একটা কথা আমার নাম যাতে কোনোভাবেই সামনে না আসে।
    পাওলা- আসবে না। তুমি আমাকে ভরসা করতে পারো।
    সাগ্নিক- থ্যাংক ইউ।
    পাওলা- শুধুমাত্র তোমার কথার ওপর ভিত্তি করে আমি লড়াইতে নামতে চলেছি। কারণ বিশ্বাস আছে তোমার ওপর। তাই তুমিও আমায় বিশ্বাস করতে পারো।
    সাগ্নিক- বিশ্বাস করি।
    পাওলা- একটা কিছু প্রমাণ কি তোমার কাছে নেই?
    সাগ্নিক- কিসের?
    পাওলা- বাপ্পার আর রিতুর।
    সাগ্নিক- তোমাকে তো বললাম আমি নিজের চোখে দেখেছি।
    পাওলা- আমি তোমার সম্পর্কে সব জানি সাগ্নিক। বহ্নিতা সব বলেছে আমায়। তাই শুধুমাত্র চোখে দেখেছো, আর কোনো প্রমাণ নেই তোমার কাছে, এটা আমি মানি না।

    সাগ্নিক চমকে উঠলো। বহ্নিতার কাছে জানা মানে, সব কিছুই জেনে ফেলেছে পাওলা। তার নোংরা সত্য পাওলা জেনে ফেলেছে। সাগ্নিক লজ্জায় নুইয়ে পরলো বিছানায়।
    পাওলা- কিছু বলছো না যে।
    সাগ্নিক- আই অ্যাম স্যরি বৌদি। আমি ভালো মানুষ নই।
    পাওলা- আমি নিজেও খুব একটা ভালো জায়গায় নেই। আর যে নোংরামির মধ্যে আমি ফেঁসে আছি, তাতে তোমার মতো একটা ছেলেই হয়তো আমাকে সাহায্য করতে পারে। তুমি এরকম বলেই আজ তথ্য জোগাড় করতে গিয়েছিলে। অন্য কেউ যেতো কি না সন্দেহ আছে।
    সাগ্নিক- হুম।
    পাওলা- প্রমাণ তোমার কাছে আছে। আমি জানি সেটা। আমি প্রমাণ চাই।
    সাগ্নিক- সহ্য করতে পারবে না।
    পাওলা- আমার সহ্য ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কোনো আইডিয়া নেই।
    সাগ্নিক- সময় হলে দেবো।
    পাওলা- এটাই সময়। এখনই চাই আমার।
    সাগ্নিক- এখন না। আমি মানসিকভাবে ভালো জায়গায় নেই।
    পাওলা- আমিও নেই। প্লীজ সাগ্নিক। হাত জোড় করছি তোমার কাছে।
    সাগ্নিক- ওকে।

    সাগ্নিক জানে প্রমাণ দেবার পর আর কথা হবে না।
    সাগ্নিক- কথা দিতে হবে যে প্রমাণ নিয়ে তুমি ফোনে সেভ করে নেবে আর আমার সাথে তোমার চ্যাট ডিলিট করবে।
    পাওলা- কথা দিলাম।

    সাগ্নিক ছবিটা পাঠিয়ে দিলো। সেই উদ্দাম যৌনতার ছবি, যেখানে বাপ্পাদার ওপরে রিতু আর অরূপদার ওপর শ্রীতমা বসে নিজেদের গুদ মারাচ্ছে। ছবিটা দেখে পাওলার দমবন্ধ হয়ে আসলো। গা গুলিয়ে উঠলো ভীষণ ভাবে। পেট মোচড় দিয়ে উঠলো মোবাইল ফেলে পাওলা ছুটে বাথরুমে গেলো। শরীর গুলিয়ে বমি বেরিয়ে এলো পাওলার। প্রচন্ড কষ্টে দিশাহারা হয়ে গেলো পাওলা। কান দিয়ে গরম হাওয়া বেরোচ্ছে। চোখ দিয়ে জল আর মাথাটা কি অসম্ভব চেপে ধরে আছে। কোনোরকমে শাওয়ার চালালো পাওলা। অবিরাম ঠান্ডা জলের ধারা পাওলার সারা শরীর ভিজিয়ে আস্তে আস্তে ঠান্ডা করতে লাগলো পাওলাকে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো পাওলা। কতক্ষণ জলের ধারায় ভিজেছিল জানে না পাওলা। শরীর যখন কাঁপতে শুরু করে ঠান্ডায়। তখন বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে সে। পোষাক পালটায়। ঘুমন্ত বাপ্পাকে দেখে রাগে, ঘৃণায় শরীর রি রি করে ওঠে। ঘড়িতে তখন সময় প্রায় ২ টো। ছবিটা অন্যত্র সেভ করে নিয়ে সাগ্নিকের সাথে চ্যাট হিস্ট্রি ডিলিট করে দিলো পাওলা। সোফায় আস্তে আস্তে শরীর এলিয়ে পরলো। চোখের জল আর ঘুম গ্রাস করলো পাওলাকে।

    বাপ্পার ডাকে ঘুম ভাঙলো সকালে।
    বাপ্পা- কি ব্যাপার? তুমি এখানেই ঘুমিয়েছো?
    গত রাতের কথা মনে পরতেই আবার পাওলার শরীর গুলিয়ে উঠলো। পাওলার চোখ মুখ দিয়ে রাগে আগুন বেরোতে লাগলো।
    বাপ্পা- ওভাবে তাকাচ্ছো কেনো?
    পাওলা- তোমার লজ্জা করে না তুমি এই কথা আমাকে জিজ্ঞেস করছো?
    বাপ্পা- কেনো? কি করেছি আমি?
    পাওলা- তুমি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও বাপ্পা।
    বাপ্পা- আচ্ছা আচ্ছা। স্যরি। কাল একটু বেশী ড্রিংক করে ফেলেছিলাম। ঠিক আছে আর করবো না।
    পাওলা- হা হা হা হা হা।
    বাপ্পা- হাসছো কেনো?
    পাওলা- তোমার নাটক দেখে।
    বাপ্পা- কিসের নাটক?
    পাওলা- আমি তোমাকে ২৪ ঘন্টা সময় দিলাম। তার মধ্যে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করো বাপ্পা।
    বাপ্পা- মানে? কিসের নির্দোষ? কি প্রমাণ?
    পাওলা- আমি কোনোকালেই ঝগড়া করতে পারিনি। আজও করবো না৷ কিন্তু তুমি ভেবো না, তুমি কোনোদিন আমার কাছে কিছু পাবে।
    বাপ্পা- এই শোনো, তুমি না পাগল হয়ে গিয়েছো। চলো ওঠো, একটু চা দাও। হোটেলে যেতে হবে।
    পাওলা- চা? প্রথমত যদি তুমি আজ কিচেনে তোমার ওই নোংরা শরীরটা ঢোকাও তাহলে জেনে নাও হয় তোমাকে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো নয়তো, চিরকালের জন্য একাই তোমাকে ওই কিচেনে ঢুকতে হবে।

    এবার বাপ্পাদা একটু চমকালো। পাওলার মুখে ‘নোংরা শরীর’ কথাটা শুনে বাপ্পাদা ঢোক গিললো এবার। কিন্তু মুখে কিছু প্রকাশ করলো না
    বাপ্পা- আচ্ছা আচ্ছা। কিন্তু আমাকে বলো কি হয়েছে তোমার?
    পাওলা- উত্তর তোমার হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া আছে। আর আজ থেকে তোমার মুখ যেন আমি না দেখি।

    বাপ্পাদা ছুট্টে বেডরুমে ঢুকে মোবাইল নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ খুলতেই যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার যে কত বড় সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে, বাপ্পাদার আর বুঝতে বাকী রইলো না। বাপ্পাদা দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পাওলার পায়ে পরতে উদ্যত হলো। কিন্তু পাওলা ততক্ষণে বজ্রকঠিন এক ইস্পাতে পরিণত হয়েছে।
    পাওলা- খবরদার বাপ্পা।
    বাপ্পা- বিশ্বাস করো। ওটা এডিট করা ছবি।
    পাওলা- হা হা হা। এডিট? তাহলে পায়ে পরতে এসেছিলে কেনো? ভিডিও আছে। দেখাবো?

    বাপ্পাদার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। সে জানে পাওলা আটঘাট বেঁধেই নেমেছে। বাপ্পাদা মাথা নিচু করে চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। পাওলা হাউহাউ করে কেঁদে উঠলো। ঘর থেকে বেরিয়ে টালমাটাল পায়ে বাপ্পাদা হোটেলে এসে উপস্থিত হলো। বাপ্পাদা বুঝতে পারছে না তার সাথে এতো বড় বেইমানি কে করলো? অরূপ করবে না, রিতুও না। তবে? তবে কি পাওলা তাকে ফলো করেছিলো? কিন্তু কিভাবে সম্ভব? গেট তো লাগানো ছিলো! তাহলে? দোকানের কর্মচারীকে ডাক দিলো বাপ্পাদা।
    বাপ্পা- আচ্ছা গতকাল সাগ্নিক কতক্ষণ দোকানে ছিলো?
    কর্মচারী- আজ্ঞে দাদা সকাল থেকে আপনি আসা পর্যন্ত।
    বাপ্পা- সত্যিই বলছো? মাঝে বেরোয়নি?
    কর্মচারী- না দাদা। আর কাল ব্যবসা ভালো হয়েছে। আমরাই কেউ বিশ্রামের সময় পাইনি।
    বাপ্পা- ঠিক আছে, যাও।

    বাপ্পাদা নিজেকে একটু বকুনি দিলো সাগ্নিকের ওপর সন্দেহ করবার জন্য। কিন্তু বাপ্পাদা জানে না, গতকাল ডবল হাজিরার ওপর এক্সট্রা টাকা দিয়ে পাওলা সবার জবান অলরেডি কিনে নিয়েছে। আর তাছাড়া বাপ্পাদা বিয়ের পরই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর পাওলা বাপ্পাদার জন্য সব ছেড়ে এসেছিলো বলে, বাপ্পাদার এই হোটেল, বাড়ি সব কিছুর আসল মালকিন হলো পাওলা। সেটা দোকানের কর্মচারীরাও জানে৷ তাই পাওলার বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেদের রুজি রোজগারের পথ বন্ধ করার ইচ্ছা তাদের নেই। অস্থির বাপ্পাদা অরূপদাকে ফোন করলো। অরূপদা সবে ঘুম থেকে উঠেছে। বাপ্পাদা আর রিতু ফিরে গেলেও শ্রীতমা ছিলোই। এরকম একটা রঙিন রাতের পর সকাল সকাল দুঃসংবাদটি শুনে অরূপদারও আত্মারাম খাঁচাছাড়া। যদিও তার কোথাও কৈফিয়ত দেবার নেই বাপ্পাদার মতো, কিন্তু শ্রীতমার তো স্বামী আছে৷ যদি ছবিটা ভাইরাল হয়? দু’জনে কনফারেন্স কলে সাথে সাথে রিতুকে কানেক্ট করলো।

    রিতু- কি ব্যাপার? সকাল সকাল দুজনের চরেছে নাকি?
    বাপ্পা- না৷ রিতু শোনো…..
    বাপ্পাদা সবকিছু গলগল করে রিতুকে বলে দিলো। সব শুনে রিতুর যেন পায়ের তলার মাটি সরে গেলো।
    রিতু শুধু কোনোমতে জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা! সাগ্নিক জানে না তো?’
    বাপ্পা- জানি না। তবে ও গতকাল সারাদিন দোকানেই ছিলো! ওর কথা ছাড়ো। আগে আমাকে বাঁচাও তোমরা।
    রিতু- তোমাদের বলিনি আগে৷ কিন্তু আমি সাগ্নিককে ভালোবাসি। আমি খুব শিগগিরই ওকে বিয়ে করতাম। ও নিজেও ভালোবাসে আমাকে। কিন্তু আমি নিষিদ্ধ সুখ পাবার জন্য তোমাদের সাথে যাই।
    অরূপদা- উফফফফ। তোমরা তো সবকিছু রীতিমতো খিচুড়ি বানিয়ে দিলে। এখন কি হবে?
    বাপ্পা- আর কিছু হবার নেই। সাগ্নিক জানলে আরও অবস্থা খারাপ হবে। ওকে বসিয়ে ওর হবু বউকে নিয়ে আমি ফার্মহাউসে গিয়েছি, একথা শুনলে কি হবে জানো? ছেলেটা আমাকে গডফাদার মানে।
    অরূপদা- আমার মনে হয় আমাদের একবার সবার দেখা করা উচিত। তোমরা চলে এসো ফার্মহাউসে। আমি এখানেই আছি।

    বাপ্পাদা আর রিতু তড়িঘড়ি অরূপদার ফার্মহাউসে উপস্থিত হলো। কিন্তু উপস্থিত হওয়াই শুধু হলো। কোনো সমাধানসূত্র বেরোলো না। অরূপদা সাজেশন দিলো, বাপ্পাদাকে পাওলার পা ধরে পরতে আর রিতুকে সাগ্নিকের পা ধরে পরতে। তাছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। আর তারপর ওই মানসিক অবস্থাতেই ওরা আবারও ব্যস্ত হয়ে পরলো একে ওপরের ক্ষিদে মেটাতে। এতোটাই নীচে নেমে গিয়েছে সবাই।

    বাপ্পাদা আর রিতু বিকেলে যে যার ঘরে ফিরলো। সাগ্নিক সকাল থেকে রিতুকে ফোন করেনি। টেনশনে আর যৌনতায় পাগল রিতু ফ্রেশ হয়ে মোবাইল হাতে নিলো। সাগ্নিককে তার মানাতেই হবে। কিন্তু সাগ্নিক তার মোবাইল নম্বর ব্লক করে দিয়েছে। যেই মুহুর্তে রিতু বুঝতে পারলো যে সাগ্নিক তাকে ব্লক করেছে, সেই মুহুর্তে রিতু এটাও বুঝে গেলো যে সাগ্নিকের জানতে বাকী নেই। অবশ্য পাওলা সাগ্নিককে বলে নি, এটা ভাবাও ভুল ছিলো রিতুর। মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো রিতুর। সাগ্নিকের কাছে চাইলে হয়তো সাগ্নিক তাকে ব্যবস্থা করে দিতো নিষিদ্ধ সুখ। কিন্তু সে যে সাগ্নিককে ঠকিয়েছে, সেটা সাগ্নিক মানবে না, তা খুব ভালো ভাবে জানে রিতু।

    বাপ্পাদা বাড়ি ফিরে দেখে পাওলা মৃগাঙ্কীকে নিয়ে ঘর আলাদা করে ফেলেছে। বাপ্পাদা কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। তিন তিনটে ঘরে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। রিতু আর সাগ্নিকের একলা ঘরে নিস্তব্ধতা তবুও বা মানা যায়। কিন্তু বাপ্পাদার সাজানো সংসারে নিস্তব্ধতা যেন অভিশাপ হয়ে ঘরময় পাঁক খেতে লাগলো। ভীষণ ভীষণ ভীষণ এলোমেলো হয়ে গেলো জীবনগুলো।

    চলবে….
    মতামত জানান [email protected] এ মেইল করে অথবা hangout এ মেসেজ করুন এই মেইল আইডিতেই। আপনাদের মেইল পেলে লেখার উৎসাহ আসে। পরিচয় গোপন থাকবে।