Site icon Bangla Choti Kahini

রিলসের আড়ালে

বয়স মাত্র পঁইত্রিশ পেরিয়েছে নবনীতা আর দময়ন্তীর। স্কুলজীবনের অবিচ্ছেদ্য দুই সখী—একজন আরেকজনের ডায়েরির গোপন কথাও জানত, আবার প্রেমপত্র পৌঁছানোর দায়িত্বও একে অপরের ওপর ছিল। সময় গড়িয়েছে, কলেজ, বিয়ে, সংসার, সন্তান… দুজনেই আলাদা শহরে, আলাদা জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুকের দৌলতে যোগাযোগটা একেবারে ছিন্ন হয়নি।

নবনীতা ছিল বরাবরই শান্ত স্বভাবের, পড়াশোনায় ভালো, আর দময়ন্তী ছিল একটু ছটফটে, হাসিখুশি, নাচ-গান ভালোবাসত। বিয়ের পর অবশ্য দুজনেই গৃহবধূর ভূমিকা নিয়েই বেশ সন্তুষ্ট ছিল।

কিন্তু কিছু মাস ধরে নবনীতা লক্ষ্য করছিল, দময়ন্তীর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে এক অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে। শাড়ি পরে ছিপছিপে ফিগারে, নানান স্টাইলের পোজে সে ছবি তুলছে। শুরুতে ছিল শুধু ঘরোয়া লুকে সেলফি, এরপর স্লিভলেস ব্লাউজ, পিঠ খোলা ডিজাইনার শাড়ি, সূর্যাস্তের আলোয় স্টাইলিশ রিলস… তারপর ধীরে ধীরে ওয়েস্টার্ন পোশাকেও দেখা যেতে লাগল তাকে—পেন্সিল স্কার্ট, অফ-শোল্ডার টপ, টানটান মেকআপ, চুল ছড়ানো।

নবনীতা দময়ন্তীর এই পরিবর্তন দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছিল।

একদিন সে সাহস করে কমেন্ট করেই ফেলল এক ছবির নিচে—
“Wow Damu! তুমি তো এখন একেবারে প্রফেশনাল মডেল মনে হচ্ছে!”

উত্তরে দময়ন্তী শুধুই একটা স্মাইলি দিয়ে লিখেছিল—
“Life begins when you stop asking for permission, Nabanita.”

নবনীতার ভেতরে কেমন একটা অস্বস্তি হল। দময়ন্তী যেভাবে নিজের জীবনটা বদলে ফেলেছে, তাতে কোথাও যেন একটা অপূর্ণতার বোধ ছুঁয়ে গেল তাকে।

দময়ন্তী হঠাৎ কলকাতায় এসেছিল একটা ফটোশুটে, ফোন করল নবনীতাকে—
“চলে আয় রে, এই স্যাটারডে প্যারাগন মল-এর ক্যাফেতে দেখা করি। তোকে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে।”

নবনীতা গেল। সামনে এল এক নতুন দময়ন্তী—স্ট্রেটন চুল, হালকা সোনালি হাইলাইট, ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক, অথচ একেবারে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হাসি।

কফি খেতে খেতে নবনীতা আর থাকতে পারল না—
“তুই এতটা বদলে গেলি কীভাবে দময়ন্তী? তোর বর কিছু বলে না? তোর বাচ্চা তো এখন ক্লাস সিক্সে, ওর স্কুল-মা-দের তোকে নিয়ে গসিপ করে না?”

দময়ন্তী হেসে ফেলল—
” হ্যা ওরা আমাকে নিয়ে গসিপ করে। সে করুক না। কেয়ার করি না আর লোকে কি বলল, আমি তো এখন নিজের জন্য বাঁচছি। জানিস, বিয়ের পর এতগুলো বছর শুধু সংসার আর দায়িত্বে ডুবে ছিলাম। কেউ কখনও জিজ্ঞেসও করেনি আমি কী চাই। একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম, আমি নিজেকে চিনতে পারছি না। তখন ঠিক করলাম—নিজেকে আবার খুঁজে বার করব। সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়া সেই দরজাটা খুলে দিল।”

নবনীতা চুপ করে রইল। কিছু বলার ছিল না।

দময়ন্তী এগিয়ে বলল—
“তুই জানিস, এখন ব্র্যান্ডস আমার সঙ্গে কোলাব করতে চায়, ফ্যাশন হাউজে আমন্ত্রণ আসে, ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে পেমেন্ট পাই। আমি আর গৃহবধূ নই—আমি একজন ক্রিয়েটর, একজন নারী যে নিজের স্বপ্নকে আবার জাগিয়ে তুলেছে। বাড়ির বাইরে সমস্ত প্রয়োজন মেটাতে পারছি, শপিং করতে গেলে আর price ট্যাগ দেখতে হয় না। যা পছন্দ হয় কিনে ফেলতে পারি। এই দেখ এই diamond বসানো ear ring টা দুদিন আগে কিনেছি। দুটো মডেলিং ইভেন্ট করে, আর একজন বিশেষ ক্লায়েন্ট এর সাথে নাইট ক্লাবে গিয়ে, কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে যা পারিশ্রমিক পেয়েছি তাতেই এটা হয়ে গেছে।”

নবনীতা সেদিন রাতে ঘুমোতে পারল না। ঘরের কোণে পড়ে থাকা নিজের গিটারটা বার করল, যে গিটার সে কলেজে দারুণ বাজাত, কিন্তু বিয়ের পর আর হাতে নেয়নি। পরদিন সকালে, অনেক সাহস করে, সে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুলল নিজের নামে।

দময়ন্তীর জীবন তার চোখ খুলে দিয়েছিল।
বয়স কখনও বাধা নয়, সমাজের চোখ নয়—
যদি নিজের ‘আমি’-কে খুঁজে পেতে চাও, তবে যেকোনো মুহূর্ত হতে পারে জীবনের নতুন শুরু।

পরের দিন, নবনীতা একা বসে ছিল দময়ন্তীর ড্রইং রুমে। কাচের গ্লাসে আধা খালি বিয়ার, ঠোঁটে এক অদ্ভুত তিক্ত স্বাদ, আর মনের ভেতরে এক অজানা ধোঁয়াশা। সে বুঝে উঠতে পারছিল না—যে পথটা আজ সে হাঁটল, সেটা শুধুই বন্ধুত্বের খাতিরে, নাকি নিজের ভেতরের কোন চুপ করে থাকা ইচ্ছের ঘুম ভাঙানো?

ছবি তোলা হয়েছে অনেক—তারপর সেই ফটোগ্রাফার নবনীতাকে একটা প্রশংসার হাসি দিয়ে বলেছিল,
“ম্যাম, ইউ হ্যাভ ন্যাচারাল গ্রেস। স্লো টান অফ সারি, আর ইউর আই কন্ট্যাক্ট—পারফেক্ট! ইনস্টা রিল বানাতে হলে এরকম expressions চাই। You’ll go far.”

দময়ন্তী তখন পাশ থেকে মুচকি হেসে বলে উঠেছিল,
“আমি বলেছিলাম না, ওর ভেতরে অনেক কিছু আছে। শুধু জাগিয়ে তুলতে হয়।”

কিন্তু সেই ‘জাগানো’ যে কতটা গভীরে পৌঁছে যাবে, সেটা নবনীতা তখন বুঝতে পারেনি।

ফটোগ্রাফার তার ইনস্টাগ্রাম পেজে ফটো আপলোড করল—

সেমি-ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি, কালো স্লিভলেস ব্লাউজ, হালকা মেকআপ, চোখে একরাশ কৌতূহল আর মুখে চাপা দ্বিধা-মেশানো হাসি।
Caption: “Introducing the gorgeous Nabonita, Elegance meets curiosity.”

প্রথম ঘণ্টাতেই ৩৫০+ লাইক, ৭০+ কমেন্ট।

“Wow, new face?”
“She’s hot…”
” Beautiful breast..”
“Tell her to DM me, I have a project.”

নবনীতা মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখেই বসে ছিল। বুকটা ধুকপুক করছিল। এসব কমেন্ট আগে দময়ন্তীর ছবিতে দেখেছিল, আজ সেইসব তার দিকেই আসছে। অন্যরকম ফিল হচ্ছিল।

সন্ধ্যায় যখন নবনীতার স্বামী অফিস থেকে ফিরল, সে তার স্বাভাবিক গৃহবধূ চরিত্রে ফিরেছে। মেয়েকে পড়াতে বসেছে, রান্নাঘরে ভেজে নিচ্ছে কাটলেট, মুখে যেন কিছুই হয়নি।
কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে নিজেই নিজেকে চিনতে পারছিল না। আয়নায় তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, আজকের সেই ছবি আর এই চুপচাপ রান্না করা নবনীতা—একই মানুষ তো?

রাতের বেলা বিছানায় শুয়ে মোবাইলে দময়ন্তীর নতুন একটা রিল এল—
হাই হিল, অফ-শোল্ডার লাল গাউন, হোটেলের লাউঞ্জে বসে হুকাহ টানছে দময়ন্তী, পাশে এক বিদেশি পুরুষ।

Caption: “Working evenings aren’t boring anymore.”

নবনীতার মোবাইল বেজে উঠল।
দময়ন্তীঃ “কাল আরেকটা কাজ আছে। একটা গ্যাস্ট্রো পাব, একটু খোলামেলা থিমের ইভেন্ট। তোর presence চাই। পারিশ্রমিক ও দেবে। আর চিন্তা করিস না, কোনো জোর করব না, শুধু আমার সঙ্গে থাকলে সুযোগগুলা চিনতে পারবি।”

নবনীতা চুপ করে ছিল। চোখ বুজে ভাবছিল।

আজকাল তার নিজের স্বামী পর্যন্ত তাকে আগের মতো লক্ষ্য করে না। প্রতিদিনের একঘেয়ে জীবন, সেই একই রান্না, একই তাগিদ, একই উপেক্ষা।
আর দময়ন্তী—সে যেন পুরোনো সেলুলয়েড ছেড়ে নতুন পর্দায় উঠে গেছে। তার চোখে আগুন, পায়ে গতি, আর ঠোঁটে… একরাশ স্বাধীনতার হাসি।

নবনীতা শেষ পর্যন্ত গেল না সেই গ্যাস্ট্রো পাবে। কিন্তু তার ঘুম হল না রাতভর।

অবচেতন মনে বারবার দময়ন্তীর কথাগুলো বাজছিল,
“জীবন একটাই বন্ধু… দেরিতে হলেও আমি নিজের মতো বাঁচতে শিখেছি।”

নবনীতা জানত না, সে এই আগুন থেকে দূরে থাকবে, না কি একদিন সেই আগুনের আঁচে নিজেকে রূপান্তর করবে।

দময়ন্তীর প্রলুব্ধ করা ভাষা, আত্মবিশ্বাসে ভরা হাসি আর মুক্তির নামে তুলে ধরা স্বাধীনতার পথ—এত কিছুতে নবনীতার ভিতরে জমে থাকা দ্বিধাগুলো একেকটা গলে যেতে লাগল।

প্রথম প্রথম নবনীতা স্পষ্টভাবে না বলেছিল। তার শিক্ষা, পারিবারিক মূল্যবোধ, বিবাহিত জীবনের শপথ—সব যেন একসঙ্গে প্রতিরোধ করছিল এই নতুন জীবনচক্রকে। কিন্তু মানুষ মাত্রই কৌতূহলী, আর যে জীবনে দীর্ঘদিন ধরে একঘেয়েমি, নিঃসঙ্গতা, উপেক্ষা জমে আছে, সেখানে নতুন কিছু দেখলেই মন উথালপাথাল করে ওঠে।

দময়ন্তী কথায় কথায় বলেছিল—
“তুই একটা রাত কারো সঙ্গে কাটালেই কি তোর মা, তোর স্বামী, তোর ঈশ্বর, কেউ এসে ধরবে? না রে। এই শরীরটা তো তোর, তোর ইচ্ছে হলে তুই দেবে, না হলে না। এটা কোনো ‘নোংরা’ কাজ নয়—এটা নিজের চাহিদা পূরণ, নিজের অধিকার। শুধু পুরুষরাই করবে, আর আমরা কেবল সহ্য করব—তা কেন?”

দময়ন্তী ঠিক করে দিয়েছিল সবকিছু—লোকটা তার পরিচিত, ক্লিন শেভ, বেশ স্মার্ট, চুপচাপ ধরণের, আর সবচেয়ে বড় কথা, “ডিমান্ডিং নয়”।
জায়গা ছিল দক্ষিণ কলকাতার একটি হোটেল—রুম প্রি-বুকড।
দময়ন্তী বলেছিল—
“তুই শুধু রিল্যাক্স করে কথা বলবি, ভালো না লাগলে চলে আসবি। কিছু জোর নেই। একবার ট্রাই কর, দেখবি কিছু বদলে যাচ্ছে ভেতরে।”

নবনীতা সেদিন বিকেলে খুব ধীর পায়ে নিজের চেহারা সাজিয়েছিল—হালকা মেকআপ, খোঁপা না করে খোলা চুল, একটা ওয়েস্টার্ন টপ আর জিনস পরে। নিজের ছায়া যেন আয়নায় দেখে চিনতে পারছিল না।

হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর লোকটা এল। পরিচয় দিল—“সৌরভ সেনগুপ্ত, ৪২, ব্যবসায়ী।”
ভদ্র, মার্জিত, চোখে কিছু একটা গভীরতা ছিল।

প্রথমে কফি, তারপর কিছু কথাবার্তা—এভাবেই ঘড়ির কাঁটা একঘণ্টা ঘুরে গেল।

সৌরভ প্রথমে কোনোরকম অশোভন ইঙ্গিত দেয়নি। কিন্তু যখন রুমে ঢুকল দুজন, হালকা আলো আর চাপা সুগন্ধিতে যেন পরিবেশটাই বদলে গেল।

নবনীতা জানত, সে আর আগের জগতে নেই। এই এক রাত্রির অভিজ্ঞতা তার ভেতরে এমন কিছু জাগিয়ে তুলবে, যা সে চিরকাল অস্বীকার করেছিল।

সকালবেলা নবনীতা বিছানায় বসে ছিল একা। জানালার ধারে বসে থাকা সৌরভ সিগারেট টানছিল। নবনীতা তার পিঠের চাদর টা শক্ত করে জড়িয়ে ছিল নিজের নগ্ন শরীরের চারপাশে।তার বুকে পিঠে টাটকা ভালবাসার দাগ। সৌরভ নবনীতা কে নিজের সবটুকু উজাড় করে বিছানায় ভালোবেসেছে। তার পুরুষ্ট স্তনদুটি নিয়ে খেলেছে, ঠোটে ঠোট লাগিয়ে চুমু খেয়েছে, নবনীতা প্রথম দিকে লজ্জায় গুটিয়ে থাকলেও, সময় যত এগিয়েছে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসে ভালো এনজয় করেছে, নিজের শারীরিক উষ্ণতা সৌরভ সেনগুপ্তের সাথে ভাগ করে নিয়েছে। বিশেষ করে সৌরভ যখন নবনীতার যোনি দ্বার জিভ দিয়ে চুষে দিচ্ছিল, নবনীতা সুখের সপ্তম সাগরে ভেসে যাচ্ছিল, নবনীতা বা হাত এর তালু দিয়ে সৌরভ এর মাথার চুল আকড়ে ধরেছিল। তার চোখ থেকে সুখের পরসে জল বেরিয়ে এসেছিল।

একবারের জন্যও সে কান্না করেনি। শুধু নিঃশব্দে অনুভব করছিল—একটা দড়ি সে পার করে ফেলেছে, যেটা তার আগের জীবন আর বর্তমান জীবনের মাঝে টানা ছিল।

সৌরভ হেসে বলেছিল—
“তুমি চাইলে আবার দেখা হবে। আর না চাইলে… এই রাতটা শুধু একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে। তোমার ইচ্ছেই শেষ কথা।”

সৌরভ এর সাথে এই স্মরণীয় মিটিং সেরে ফিরে এসে, দময়ন্তীর ফ্ল্যাটে ঢুকতেই দময়ন্তী একগাল হেসে বলল,
“So, কেমন লাগল? ভয় টা ভেঙেছে তো? দেখলি তো, কিছু ভাঙে না। বরং ভিতরে কিছু জেগে ওঠে।”

নবনীতা কিছু বলল না। শুধু চুপচাপ একটা গ্লাস জলে চুমুক দিল।

দময়ন্তী ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল—
“তুই এখন বুঝবি, কতটা অসার ছিল আমাদের সেই পুরনো বিশ্বাসগুলো। ভালো থাকার জন্য ‘স্বামী’, ‘বিয়ে’, ‘সংসার’—এই সব থিওরির বাইরে এক জগৎ আছে, যেখানে আমরা নিজের জন্য বাঁচি, আর বাঁচি আনন্দের জন্য।”

নবনীতার ইন্সটাগ্রাম পেজটা এখন রীতিমতো “উইলো ফেম”—সেমি ট্রান্সপারেন্ট শাড়িতে হালকা আলোয় তোলা পোজ, পেছনে ক্যানডেল লাইট বা রঙিন ব্যাকগ্রাউন্ড। দময়ন্তীর পরামর্শে সে প্রোফাইলটাকে সাজিয়েছিল এমনভাবে যেন একদিকে সংযম, আবার অন্যদিকে রহস্যময় আবেদন।

নতুন ফলোয়ার আসছিল প্রতিদিন। কেউ প্রশংসা করত তার চোখের “ডিপ লুক” নিয়ে, কেউবা শুধু তার শরীর নিয়ে অশ্লীল ইঙ্গিত করত। নবনীতা কখনো জবাব দিত না—কিন্তু স্ক্রিনে চোখ আটকে থাকত অনেকক্ষণ।

দময়ন্তী খুব রেগে ছিল—
“তোকে আমি এবার জোর করেই নিয়ে যাব। একটাই জীবন, আর কতদিন ‘না’ বলবি? আজ রিল বানাব, হুকাহ খাবি, shots খাবি… আর হ্যাঁ, পুরুষ দের সাথে একটু ফ্লার্ট করতেও শিখতে হবে।”

ফাইভ স্টার হোটেলের সেই নাইট ক্লাব—মাঝরাতে একটা ঝলমলে স্বপ্নের মতো ছিল। মিউজিক কাঁপছে বুকের ভিতর, চারপাশে হালকা গা-ছোঁয়া আলো, মদে আর পারফিউমে মেশানো এক কৌতুহলকর পরিবেশ।

নবনীতা প্রথমে অস্বস্তিতে ছিল। কিন্তু টাকিলা শট গলা দিয়ে নামার সঙ্গে সঙ্গে শরীর একটু একটু করে গলে যেতে লাগল। তারপর যখন হুকাহ হাতে তুলল, তখন সেলফির ক্যামেরা সামনে, মুখে লালচে আলো, আর ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক হাসি।

দময়ন্তী ওর পাশে দাঁড়িয়ে রিল বানাচ্ছিল—
“Two wild souls, one free night ”
রিলসের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে বাজছিল: “Tonight’s gonna be a good good night…”

হলুদ রঙের শার্ট, কালো ব্লেজার, হাতে ঘড়ি আর চোখে স্মার্টনেস—একজন মাঝবয়সী লোক এগিয়ে এল।
“Hi ladies, may I join?”
তার নাম ছিল Mr. Vikrant Dey, শহরের একজন প্রভাবশালী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। বয়স ৪৫ এর কাছাকাছি, কিন্তু গলায় আত্মবিশ্বাস আর মুখে সেই বিশেষ হাসি যা নারীর চোখ আটকে রাখতে জানে।

দময়ন্তী ইতিমধ্যেই ওর সাথে সহজ হয়ে কথা বলছিল। নবনীতা একটু দূরে ছিল, কিন্তু চোখ পড়ে গিয়েছিল ওর ওপর।

কিছুক্ষণ পর বিক্রান্ত নিজেই বলল—
“আপনার নাম নবনীতা তো? আমি ইনস্টাগ্রামে আপনার কিছু ছবি দেখেছি—রীতিমতো হেডটার্নার।”

নবনীতার গলা শুকিয়ে এল। সে একগাল হেসে জবাব দিল—
“ধন্যবাদ, আপনি কিভাবে খুঁজে পেলেন?”
“I know people who know people.” —উত্তর এল মিষ্টি অথচ দৃঢ় গলায়।

Vikrant night club এর পিক হাওয়ারে নবনীতা দের ওর সাথে নাচতে ইনভাইট করলো, নবনীতার কোনো উৎসাহ ছিল না কিন্তু দময়ন্তী র আবদার রাখতে নাচতেই হল। নাচতে নাচতে Vikrant নবনীতার শরীর এর প্রাইভেট পার্টস স্মার্ট ভাবে স্পর্শ করছিলেন। নবনীতা র খুব অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল।

রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। ক্লাবের আলো একটু নরম হয়ে এসেছে, পারফিউমের গন্ধটা যেন একটু তীব্র।

বিক্রান্ত একটা সিগার টানতে টানতে বলল—
“আমার এখানে একটা স্যুট রুম বুক করা আছে। একটু শান্ত পরিবেশে বসে যদি আরও কিছুক্ষণ আড্ডা দিতেন… আমি খুব অ্যাপ্রিশিয়েট করতাম।”

দময়ন্তী সাথে সাথেই হেসে বলল—
“Sure, নবনীতা? Shall we?”
নবনীতা একটু থমকে গেল। কিন্তু তার চোখে তখন ঝলমলে আলো, মদে ঘোলাটে দৃষ্টি, আর এক অদ্ভুত উত্তেজনা।

সে শুধু বলল—
“আমি আসছি।”
নাইটক্লাবের উজ্জ্বল আলো, উচ্চস্বরে বাজতে থাকা বিটস আর ঝকমকে লোকজনের মাঝেও নবনীতা নিজেকে ভীষণ একা আর এলোমেলো মনে করছিল। তার শরীরে তখনো স্পষ্ট অনুভব হচ্ছিল বিক্রান্তের স্মার্টভাবে করা অস্বস্তিকর স্পর্শগুলো। ও বুঝতে পারছিল, এই জায়গাটায় কিছু একটা ঠিকঠাক নয়। অথচ দময়ন্তী যেন পুরোপুরি অন্য এক জগতে – মন্ত্রমুগ্ধ, সাহসী, খোলামেলা।

নবনীতার চোখ দময়ন্তীর মুখে আটকে ছিল। দময়ন্তী ক্লান্ত লাগলেও, ওর চোখে একটা আশ্চর্য রকমের আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক ছিল। যেন এই দুনিয়া এখন ওর – ক্যামেরা, আলো, পুরুষ, রিলস, রাত — সব কিছুর ওপর দখল ওর তৈরি।

ক্লাব থেকে বেরিয়ে তিনজন আবার হোটেল রুমে ফিরে এলো। বিক্রান্ত তখনো মজা করছিল, দু’জনের রূপ আর সাহসের প্রশংসা করে। নবনীতার মনে পড়ল — মাত্র বছরখানেক আগেও দময়ন্তী ছিল সেই শান্ত, ভদ্র, মিষ্টি স্বভাবের গৃহবধূ, যাকে সে সবসময় নিজের খুব কাছের বলে মনে করত।

রুমে ঢোকার পর বিক্রান্ত যখন বলল,
“Come on girls, tonight is special. Let’s celebrate the real you!”
তখন দময়ন্তী হেসে বলে উঠল,
“You go take a shower, we’ll join.”

নবনীতার হাত ধরে ও বলল,
“তোকে থাকতে হবে। আজ এই রাত আমাদের অন্য জীবনের শুরু হতে পারে।”

নবনীতা হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। মনে হচ্ছিল ভিতরে ভিতরে কোনো দেয়াল ভেঙে পড়ছে। গলার স্বরে দৃঢ়তা এনে বলল,
“আমি যেতে চাই। এখনই।”

দময়ন্তী একটু থমকে গেল।
“তুই সিরিয়াস?”
“হ্যাঁ। আমি পারছি না। আমার মনে হচ্ছে আমি নিজের থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। আমি সাজতে পারি, ছবি তুলতে পারি, ফলোয়ার বাড়াতে পারি… কিন্তু আমি আমার সম্মান, আমার সীমানা হারাতে চাই না। অন্তত এইভাবে নয়।”

এক মুহূর্ত নীরবতা নেমে এল। বিক্রান্ত তখন বাথরুমে। দময়ন্তী কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু শেষমেশ চুপ করে গেল। ওর চোখে একটা দ্বিধা, একটা ক্লান্তি, আর হয়তো খানিক হিংসে মিশ্রিত শ্রদ্ধা ফুটে উঠল। ” ঠিক আছে আর কিছুক্ষণ থাক তার পর না হয় বেরিয়ে যাস।” দময়ন্তী বলল।

রুমটা সাজানো ছিল দারুণ—ডিমলাইট, একটা সেন্টেড ক্যান্ডেল বার্নার, হালকা জ্যাজ মিউজিক।
সেন্টার টেবিলে কিছু চিজ প্ল্যাটার, রেড ওয়াইনের বোতল, আর তিনটা গ্লাস।

“Make yourself comfortable,” বলল বিক্রান্ত।

নবনীতা সেদিন, জীবনে প্রথমবার, নিজের শরীরের প্রতি পুরুষের দৃষ্টির তীব্রতা সরাসরি অনুভব করল। শুধু ফটোশুট নয়, এবার সে নিজেকে জীবন্ত ‘পারফরম্যান্স’-এর অংশ ভাবতে শুরু করেছিল।

একটা দম ফেলে নবনীতা গ্লাসে হালকা ওয়াইন ঢালল। আর মনে মনে ভাবছিল—
“এই রাতটা আমি ভুলব? নাকি এই রাত থেকে আমার নতুন জীবন শুরু হবে?”

স্যুট রুমের ঘরটা তখন আবেশে ঢাকা। হালকা জ্যাজ মিউজিক চলছিল, অ্যারোম্যাটিক ক্যান্ডেলের আলোয় ঘরটা যেন এক ঘোরের জগতে রূপ নিয়েছে। দময়ন্তী ইতিমধ্যে পুরোপুরি স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠেছিল। সে হেসে, বিক্রান্তের ইঙ্গিতে, ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার নিতে রাজি হয়ে গিয়েছে—
“শাওয়ারের নিচে দাঁড়ালে শরীরের সব ক্লান্তি ধুয়ে যায় রে নবনীতা!”—হাসতে হাসতে বলে উঠেছিল।

নবনীতা ততক্ষণে সোফার কোণে বসে ছিল, হাতে আধখালি ওয়াইনের গ্লাস। তার মাথায় তখন বাজছে বারবার ফোনের রিংটোন—”Home Calling”। স্বামী ফিরেছে কি? মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে? মা হয়ত ফোন করেছে…

দময়ন্তী তখন বাথরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ভেতর থেকে শাওয়ারের শব্দ আসছে, মাঝে মাঝে তার গুনগুন হাসিও।

ঠিক তখনই বিক্রান্ত নবনীতার একেবারে কাছে এসে বসল। তার চোখে ছিল একরাশ আত্মবিশ্বাস, ঠোঁটে একচিলতে বিজয়ীর হাসি।
সে নিচু গলায় বলল—
“Come on Nabonita… tonight is special. তোমাদের দুজনকেই আমি চাই। আমি জানি দময়ন্তী তো ঠিকই আছে, তুমি ভেতরে দ্বিধায় আছো। Don’t worry… তোমাদের যা চার্জ লাগে, আমি দেব। Tonight, just make me happy.”

এই কথাটা নবনীতার মেরুদণ্ড বেয়ে একটা ঠান্ডা শিরশিরে ভাব নামিয়ে আনল।

ও এক মুহূর্তের জন্য বুঝতে পারল—এই মানুষটা ওদের “ব্যক্তি” হিসেবে দেখছে না, দেখছে “প্রডাক্ট” হিসেবে। আর ওর প্রিয় বন্ধু দময়ন্তী… সে নিজেই আজ নিজের শরীরকে এক “অফার” হিসেবে সাজিয়ে তুলেছে।

নবনীতার হাতটা অজান্তেই কাঁপছিল। ফোন আবার বেজে উঠল। এবার সে ফোনটা হাতে তুলল।
স্বামীর নাম জ্বলছিল স্ক্রিনে।
সে ফোন কাটল না, তবুও ধরল না।

তার মনে হচ্ছিল—এই একরাশ হালকা আলো, ওয়াইনের ঝাঁঝ, বিক্রান্তের কথাগুলো, দময়ন্তীর হাসি… সব কিছু যেন একসাথে তাকে এক গহ্বরে ঠেলে দিতে চাইছে।

সে আস্তে বলল—
“দময়ন্তী, আমি আজ থাকতে পারব না। আমার ফিরতে হবে।”

বাথরুম থেকে গলা এল—
“তুই তো বললি বলবি আমি একা আছি, তাই তুই থাকছিস। এখন আবার কী হলো?”

নবনীতা বলল—
“সরি… আমি আসলে এই জায়গায় কমফোর্টেবল না। আমি যেটা করছি সেটাও অনেক বেশি। আমি এখনো প্রস্তুত না…”

বিক্রান্ত এবার একটু রুক্ষ গলায় বলল—
“See… nobody forced you here. But don’t be a tease now. আমরা সবাই বড় মানুষ, বড়দের মতোই Enjoy করতে এসেছি।”

নবনীতা ওর দিকে চেয়ে বলল—
“হ্যাঁ, বড় মানুষ তো… তাই না বলার অধিকারটাও তো থাকা উচিত?”

এই বলে নবনীতা নিজের ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিল।

দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে একবার থেমে পিছনে তাকাল।
দময়ন্তী তখন সাদা তোয়ালে পেঁচানো অবস্থায় বাথরুম থেকে বেরোচ্ছে, চোখে অদ্ভুত জেদ—
“তুই আবার সেই পুরোনো নবনীতা… একটুও বদলালি না।”

নবনীতা শান্ত গলায় বলল—
“হয়ত বদলানোটা আমার প্রয়োজন ছিল না। আর তুই… খুব ভিতর থেকে হারিয়ে যাচ্ছিস দময়ন্তী। শুধু শরীর দিয়ে স্বাধীনতা কেনা যায় না, ওর দামে আত্মা বেরিয়ে যায়।”

হোটেলের বাইরে বেরিয়ে ঠাণ্ডা বাতাসে বুকটা খানিকটা হালকা লাগছিল।
নবনীতা একটা ট্যাক্সি নিল।

রাতে বিছানায় শুয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল ছাদের দিকে। ফোনে এখনও বিক্রান্তের ইনস্টাগ্রাম ফলো রিকোয়েস্ট পড়ে ছিল। সে ডিলিট করল।

তারপর নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুলল, ছবি গুলো দেখল—চোখে জল এসে গিয়েছিল এক মুহূর্ত।

সেটিংসে গিয়ে ক্লিক করল—
“Deactivate My Account”

সমাপ্ত……

Exit mobile version