Site icon Bangla Choti Kahini

প্রোজেক্ট এফ – একটি ভবিষ্যৎ ভিত্তিক ফেমডম গল্প

সাল- ২০২৯
জুন মাসের শেষ প্রান্তে এক বৃষ্টিভেজা অন্ধকার রাত। শহরের বুকজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাজারো আলো যেন অকারণে জ্বলে থাকলেও, নগরের এক কোণে, এক পরিত্যক্ত বহুতল ভবনের অন্দরমহলে থমকে আছে নীরবতা। গোটা বিল্ডিংটি যেন নিঃসাড় হয়ে রয়েছে, যেন দীর্ঘকাল কারও পায়ের স্পর্শ পায়নি। কিন্তু সপ্তম তলার একটি কক্ষ—সেখানে একটি ম্লান সবুজ আলো এখনও জ্বলছে, ঠিক যেন এক নিঃশব্দ বিদ্রোহের প্রতীক।

সেই কক্ষটি ছিল “প্রজেক্ট F”-এর গোপন জেনেটিক বায়োলজি গবেষণাগার। এটি কোনো সাধারণ গবেষণাগার নয়—এখানে কেবল কোষ কিংবা DNA নিয়েই পরীক্ষা চলে না, এখানে পরীক্ষিত হয় মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ নিয়তি।

আজকের রাত ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বহু বছর ধরে ছায়ার আড়ালে কাজ করে যাওয়া এক গোপন নারী কমিউনিটির প্রথম প্রকাশ্য সম্মেলন। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আগত এই নারীরা কেউ জীববিজ্ঞানী, কেউ দার্শনিক, কেউ কর্পোরেট সাম্রাজ্যের রাণী, আবার কেউ রাষ্ট্রক্ষমতার নিঃশব্দ পরিচালক। প্রত্যেকেই সমাজের পুরুষতান্ত্রিক শিকড় ভেদ করে উঠে আসা প্রজ্ঞার প্রতীক।

রুমের কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে ছিলেন সারা—এই আন্দোলনের মূল মুখ। তাঁর চোখে ছিল অনড় দৃঢ়তা, কণ্ঠে ছিল ইতিহাস বদলে দেওয়ার শপথ। তিনি শুরু করলেন তাঁর বক্তৃতা, ধীরে ধীরে যেন সময় থমকে গেল।

“সহস্রাব্দ পেরিয়ে এসেছে মানবসভ্যতা—কিন্তু কি শিখেছে সে? কাদের হাতে ছিল এর নিয়ন্ত্রণ? পুরুষের! এক নির্লজ্জ, একাধিপত্যবাদী শক্তি, যে এককালে শাসন শাসন করে এসেছে তলোয়ারের ভয় দেখিয়ে আর এখন বন্দুকের জোরে। প্রতীতিতেই তাঁরা যেন ধ্বংসের উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছে।

তারা বলেছে, তারাই সভ্যতা গড়েছে—কিন্তু কত প্রকার বিভাজনের বিষ তারা ছড়িয়েছে? জাতি, ধর্ম, ভাষা, ভূখণ্ড—সবকিছুতেই বিভেদ, ঘৃণা, যুদ্ধ। তাদের অহংকারের জন্য লুটে গেছে ট্রয়, ভেঙেছে রোম, পুড়েছে হিরোশিমা। তারা বন কেটেছে, নদীকে বিষ ঢেলেছে, প্রকৃতির বুক চিরে তৈরি করেছে ধ্বংসের ব্যুহ।

আর নারীর জন্য তারা রেখেছে গৃহস্থালি, নিঃশ্বাসহীন অনুচ্চার জীবন। অধিকার থেকে বঞ্চিত, সম্ভাবনার মুখে দেয়াল তুলে দিয়েছে তারা।

আজ সেই অন্যায়ের অবসান হবে। আজ থেকে শুরু হবে নতুন পৃথিবীর প্রথম পঙ্‌ক্তি, এক নতুন ইতিহাস—‘প্রজেক্ট F’।

এটি কেবল একটি গবেষণাগার নয়, এটি হল নারী নেতৃত্বের প্রাথমিক কোষ। যেখানে শাসন হবে যত্ন দিয়ে, শক্তি হবে সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি।

হয়তো আমরা আগামী শতকে থাকবো না, তবে আমাদের উত্তরসূরিরা জানবে—এই রাত্রে, একদল নারী অন্ধকারের ভিতর আলো জ্বালিয়েছিল।”

সারার কথায় যেন নিরব ঘরটিতে অদৃশ্য সুর বাজে উঠল—এক নবজাগরণের সুর। উপস্থিত সকল নারীর চোখে জ্বলে উঠল দীপ্তি—উন্নত সভ্যতার এক সম্ভাব্য ভোর।

মিস সারার বক্তৃতা শেষ হতেই ঘরজুড়ে বজ্রধ্বনির মতো করতালির শব্দ ছড়িয়ে পড়ল। যেন প্রত্যেক হাতের তালিতে ছিল দমিত শতাব্দীর বিদ্রোহ, তিল তিল করে জমে থাকা অভিমান, আর এক নবযুগের অঙ্গীকার।

মিটিং চলল গভীর রাত অবধি। আলো আধারে কেবল পরস্পরের চোখে উজ্জ্বলতায় ফুটে উঠছিল পরিকল্পনার দ্যুতি। প্রতিটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো নিখুঁত বুদ্ধিমত্তা আর দুর্নিবার আত্মবিশ্বাসে। কাল থেকেই শুরু হবে “প্রজেক্ট F”-এর প্রথম কার্যকর ধাপ।

পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে—এই “প্রজেক্ট F” কী?

এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেওয়া যায় না। কারণ “প্রজেক্ট F” শুধু একটি বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ নয়—এ এক আদর্শচ্যুত সভ্যতাকে মৌলিকভাবে রূপান্তর করার নিরব, সূক্ষ্ম, কিন্তু চূড়ান্ত শক্তিশালী অস্ত্র।

বহু বছর ধরে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গোপনে জড়ো হওয়া একদল নারী জীববিজ্ঞানী, জেনেটিক প্রকৌশলী এবং ন্যোরোসাইকোলজিস্ট মিলে এক অভিনব জিন-সম্পাদিত জন্মনিয়ন্ত্রণ সিরাম তৈরি করেছেন। এই সিরামের ক্ষমতা শুধু গর্ভধারণ নিয়ন্ত্রণেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি নারী-পুরুষের ভবিষ্যত আচরণগত রূপরেখাকেই বদলে দিতে সক্ষম।

সিরামটির কাজ অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং বিস্ময়কর:

এটি নারী ডিম্বাণুতে এমন এক প্রতিক্রিয়াশীল পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে পুরুষের শুক্রাণু প্রবেশ করলেও গর্ভধারণ হবে বেছে বেছে। জন্মাবে হয় এক দৃঢ়চেতা নারী—অথবা এক স্নেহময়, অনুগত, কর্তৃত্বহীন সাবমেসিভ পুরুষ।

এই পুরুষ সন্তানরা থাকবে জন্মগতভাবেই সাবমিসিভ, স্নিগ্ধ স্বভাবের, সহানুভূতিশীল এবং নারীকেন্দ্রিক নির্দেশনায় অভ্যস্ত।

নারীদের ক্ষেত্রে এই জেনেটিক মডিফিকেশন প্রয়োজন পড়েনি—কারণ প্রকৃতি তাদের মধ্যেই নেতৃত্বর উপযোগিতা ও ভারসাম্য রোপণ করে রেখেছে।

এই সিরামের সর্বনাশা অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল ভয়ংকরভাবে বুদ্ধিদীপ্ত।

প্রথম ধাপে, সিরামটি ছড়িয়ে দেওয়া হয় পৃথিবীর বহুজাতিক কনডম কোম্পানি, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি প্রস্তুতকারী ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা এবং ফার্টিলিটি ক্লিনিকগুলির মাধ্যমে। কেউ টের পায়নি এই নীরব আক্রমণ। কয়েক বছরের ব্যবধানে সিরামটি ছড়িয়ে পড়ল পৃথিবীর প্রতিটি কোণে—একটি বিপ্লব, যার কোনো বন্দুক নেই, নেই কোনো সরাসরি রক্তপাত—তবু, এটা এক জৈব-নেতৃত্বের মূর্ছনা, যা আগামী শতাব্দীর সভ্যতাকে বদলে দেবে।

সাধারণ দম্পতিরা যখন অনেক বছর পর হঠাৎ সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তখন তারা নিজেরাই জানেন না—তাদের গর্ভে জন্ম নিচ্ছে এক “প্রজেক্ট F”-এর সৈনিক। হয় এক ভবিষ্যতের শক্তিশালী, সচেতন, নেতৃত্বগুণে ভরপুর নারী অথবা এক অনুগত, নম্র, দায়িত্ববান পুরুষ—যার স্বভাবই হবে নারীর আশ্রয়ে নিজেকে খুঁজে নেওয়া।

সাল – ২০৫১।
প্রজেক্ট F-এর সূচনা থেকে কেটে গেছে একুশটি বছর। মানবসভ্যতা, এখনো প্রথাগত পথে হাঁটছে ভেবে আত্মতুষ্ট ছিল; অথচ অলক্ষ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল এক অদৃশ্য কিন্তু অপরাজেয় তরঙ্গ। এক সূক্ষ্ম জিনবিক বিকৃতি, এক নীরব বিপ্লব—যা বদলে দিচ্ছিল পৃথিবীর ভিত্তিমূল।

এই কুড়ি বছরের মধ্যেই বৈশ্বিক জন্মহার দিক বদলেছে। বিশ্বজুড়ে জন্ম নেওয়া শিশুর ৮০% ছিল ছেলে, মাত্র ২০% মেয়ে। জনসংখ্যায় ভারসাম্যহীনতা এক অজানা উদ্বেগের জন্ম দিল ঠিকই, কিন্তু কেউ বুঝতে পারল না—এই অসমতা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

আর এই ২০ শতাংশ মেয়ে, যেন প্রকৃতির নিজস্ব বাছাই করা সৈনিকেরা—
শৈশবেই তারা হয়ে উঠছিল বুদ্ধির দীপ্তিতে অনন্য, আত্মপ্রত্যয়ের দ্যুতি ছড়ানো একেকটি ক্ষুদ্র নক্ষত্র।
স্কুলে তারা প্রথম, মঞ্চে তারা কণ্ঠস্বর, মাঠে তারা অধিনায়ক।

প্রতিযোগিতায় ছেলেরা যেন হার মানতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে; শ্রদ্ধা, নয়নতলায় সমীহ আর মৌনতা হয়ে উঠেছে তাদের একমাত্র ভাষা।

এদিকে ছেলে সন্তানেরা?
তারা একেবারে বিপরীত—
নরম, সংবেদনশীল, আজ্ঞাবহ, আর… অভূতপূর্বভাবে নারী-কেন্দ্রিক।
তাদের চোখে কোনো কর্তৃত্বের দাবী নেই, কণ্ঠে নেই নেতৃত্বের উচ্চাশা। তারা নারী কণ্ঠস্বরের দিকে চেয়ে শোনে, নীরবে, মাথা হেঁট করে।
এক নারীকে কষ্ট দেওয়ার ভয় যেন জন্ম থেকেই রোপিত তাদের চেতনায়।
মেয়েরা যখন উচ্চস্বরে কথা বলে, তারা পিছিয়ে আসে।
রাগ হলে—ক্ষমা চায়।

এই নতুন প্রজন্মকে মিস সারা ও তার দল একটি নতুন নামে অভিহিত করেছিল—

“অল্টার-বয়েজ”।
এক নবপ্রতিষ্ঠিত শ্রেণি—যারা পুরুষ- কিন্তু শাসক নয়; পুরুষ- কিন্তু সেবক; পুরুষ- কিন্তু সুশৃঙ্খল স্বেচ্ছায়।

পাঁচ বছর পর, পৃথিবী বুঝতে শুরু করে… কিছু একটা বদলে গেছে।
এই তরুণ ছেলেরা পুরুষতান্ত্রিক ধারণাকে আর ধারণ করে না। তারা নারীর ছায়ায় বেড়ে ওঠা এক নতুন সমাজের বীজ।

এবং তখনই, বিশ্বের নানা দেশে চালু হয় এক অভিনব শিক্ষা-কেন্দ্র—
নাম রাখা হয় “নবউৎস”।

নবউৎস ছিল কেবল স্কুল নয়, এক আদর্শ পুনর্গঠনের তীর্থস্থল।
এখানে অল্টার-বয়েজদের শেখানো হতো কীভাবে তারা নারীর বিশ্বে সঠিকভাবে নিজের স্থানটি খুঁজে নেবে।

✦ ট্রেনিং মডিউলগুলো ছিল নিখুঁত ও উদ্দেশ্যনির্ভর:
-নারী নেতৃত্বে শ্রদ্ধাশীলতা অনুশীলন
-নাড়ীদের সামনে নীরব থাকার দক্ষতা (The Art of Listening Without Reply)
-নারী শরীরের যত্ন ও সেবা-কৌশল
-বিনয়, আবেগসংযম ও ভদ্রতাকলা শিক্ষণ
-প্রশংসার সৌন্দর্য এবং নম্র আজ্ঞাবাচক বাক্য ব্যবহার

এই তরুণ ছেলেরা ধীরে ধীরে হয়ে উঠছিল এক অনন্য সহচর শ্রেণি—স্নেহময়, দক্ষ, এবং সর্বদা নারীর জন্য প্রস্তুত।

অন্যদিকে মেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত হলো এক ভিন্ন মাত্রা—
-তাদের শেখানো হচ্ছিল কিভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়, কিভাবে ছেলেদের মানসিকতা বুঝে তাদের গড়ে তুলতে হয়।
-ক্লাসরুমের চার দেয়ালে ছড়িয়ে যাচ্ছিল শাসন, সংবেদন আর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা।
-নারী শিক্ষার পাঠ্যক্রমে যুক্ত হলো “সামাজিক রূপান্তরের মনস্তত্ত্ব”, “বিকল্প নেতৃত্ব নীতিমালা”, ও “পুরুষ পুনর্গঠন কৌশল”।

এবং সবকিছুর পেছনে ছিল সেই পুরোনো মুখগুলো—
মিস সারা এবং তার সহযোদ্ধ্রীরা, যারা আজকের দিনেও রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে, শিল্পজগতের কাণ্ডারী, বা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপন গবেষণার মূল পরিচালক।

তারা জানে—এই ভবিষ্যৎ শুধু শুরু, শেষ নয়।
“প্রজেক্ট F” এখন আর গোপন প্রকল্প নয়;
এখন এটি হয়ে উঠেছে—এক সমাজ, এক আদর্শ, এক চিরন্তন রূপান্তরের অভ্যুদয়।

সাল – ২০৬৫!
আন্তর্জাতিক মন্দা ও রাজনৈতিক দুর্নীতির ফলে পুরুষ নেতৃত্বে থাকা সরকার ভেঙে পড়ে। তার স্থানে আসে এক নারীপ্রধান সরকার, যাদের মূল স্লোগান থাকে-

“নারীই ভবিষ্যৎ। পুরুষের কাঁধে ভর করে নয়, আমরা আমাদের পথ নিজেরাই তৈরি করব।”
সেই বছর থেকেই শুরু হয় এক নতুন সংস্কৃতি। নারী নেতৃত্ব, নারী-নারী বিবাহ অর্থাৎ লেসবিয়ান সম্পর্ক, এবং সময়ের সাথে আস্তে আস্তে পুরুষদের সামাজিকভাবে নিচে ফেলে দেওয়া শুরু হয়। পুরুষরা চাকরি হারাতে থাকে কারণ এদের তুলনায় নারীরা অধিকাংশ কাজ দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করে। পুরুষদের ঠেলে দেওয়া হয় কম বেতনের, নিচু স্তরের কাজগুলোতে। যেসব পুরুষ “প্রজেক্ট F” মাধ্যমে জন্মেছিল, তারা নারীদের সামনে মাথা নিচু করে কথা বলে, রাস্তা পার করিয়ে দেয়, লিফটের দরজা ধরে রেখে আগে নাড়িকে প্রবেশ করতে দেয়। কোন কারনে মেয়েরা তাদের শাসন করলে তারা মুখ বুজে মেনে নে, বরং নিজেদের দোষ খোঁজে। তাদের এমন আচরন স্বাভাবিকতার সাথে সমাজে এমনভাবে মিশে যায়, যে সাধারণ জনগণ বিশ্বাস করতে থাকে এটাই আদর্শ পুরুষত্ব। তাদের মধ্যে অনেকে ধনী নারীদের “পোষা পুরুষ” বা “মানব পোষা” হিসেবে বেচে থাকার পথ বেছে নেওয়া শুরু করে।

তারপর এভাবেই কেটে যায় আরো বছর পাচ।

কিছু নারী সংসদ সদস্য প্রস্তাব তুলেন-
“প্রতিটি পুরুষকে নারীর অধীনে প্রশিক্ষিত হওয়ার আইন পাস করা হোক।”
এবং সেই আইন পাস হয়ে যায় “নারী-মুখাপেক্ষী পুরুষ উন্নয়ন আইন, ২০৭০” নামে।
এটি ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এটি বাধ্যতামূলক করে দেয় প্রত্যেক ছেলেকে বয়স ১৫ থেকে ২৫ পর্যন্ত এক বা একাধিক নারীর তত্ত্বাবধানে জীবন কাটাতে হবে, যার নাম হয় “মেন্টর-লেডি”।

সাল – ২০৭০!
“প্রজেক্ট F” এর ৪০ বছরের মধ্যেই সমাজ এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। “প্রজেক্ট F” কন্যারা এখন সমাজের প্রতিটি স্তরে আধিপত্য বিস্তার করেছে। জেনেটিক ভাবেই নারীদের পুরুষদের প্রতি আকর্ষণ কমে এসেছে। তারা একে অপরের সঙ্গে লেসবিয়ান পরিবার গঠন করছে। কিছু নারী শুধুমাত্র সন্তান নেওয়ার জন্য একবারের জন্য কোনো পুরুষকে ব্যবহার করে। তা না হলে অধিকাংশ নারী স্পার্ম ব্যাংক ব্যবহার করে। অন্যদিকে কর্মহীন পুরুষেরা নিচু কাজ করছে অথবা ধনীর বাড়িতে পোষা দাস হয়ে থাকছে। তার আরো কয়েক বছরের মধ্যেই নারীরা সমাজের প্রতিটি স্তরে ডোমিন্যাট করতে লাগল। পুরুষদের দক্ষতা, শক্তি, নেতৃত্ব সবই তখন মূল্যহীন হয়ে পরেছে। পুরুষরা কেবলমাত্র নারীদের দৈহিক প্রয়োজনে আর দৈনন্দিন সেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে লাগল। বেশিরভাগ পুরুষ, বিশেষ করে “প্রজেক্ট F” এর মাধ্যমে জন্ম নেওয়া পুরুষরা ত এমনিতেই সাভমেসিভ, সময়ের সাথে সাথে তারা এটা মেনে নিলো তাদের এই সমাজে জায়গা কেবল নারীর পায়ের কাছে। আস্তে আস্তে নাড়ীদের ব্যাক্তিগত ক্রীতদাস হবার ব্যাপারটি জনপ্রিয় হতে লাগলো। এই জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে ২০৭৫ সালে ক্রীতদাশ দের জন্য সেবক অধিনিয়ম নামে একটি আইন পাস হয়। সেই আইনের কিছু উল্লেখ্য নির্দেশাবলী-
-পুরুষরা নিজেদের ইচ্ছায় শুধুমাত্র একজন নারীর অধীনে দাস হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবে।
-একবার নিবন্ধন করলে তাকে সেই নারীর সকল নির্দেশ মেনে চলতে হবে।
-এই পুরুষের চলাফেরা, পোশাক, খাবার ও যৌন স্বাধীনতা নির্ধারণ করবে তার মালকিন অর্থাৎ মিস্ট্রেস।
-এইপুরুষ যদি কোন কারনে তার মালকিনের সাথে অসত আচরন করে তাহলে তার ব্যাপারে কঠোরতম আইনী ব্যাবস্তা নেয়া হবে।

সাল – ২০৮২
নতুন যুগে শ্রেণির নাম “স্লেভ গ্রেডিং”

“প্রজেক্ট F”-এর সফল প্রয়োগের ৬০ বছর পেরিয়ে গেছে। এখন পুরুষ জন্ম মানেই তা একটি শ্রেণিবদ্ধ ভবিষ্যৎ—অবাধ্যতা বা উচ্চাকাঙ্ক্ষার কোনও স্থান নেই।

প্রতিটি পুরুষ জন্মের পর থেকেই পর্যালোচনার অধীন।
বয়স ১৫ পার করার সাথে সাথেই শুরু হয় “গ্রেডিং প্রক্রিয়া”—
একটি যৌথ মূল্যায়ন পদ্ধতি যেখানে তার মস্তিষ্কের বুদ্ধিমত্তা (IQ), শারীরিক সৌন্দর্য, শারীরিক সক্ষমতা এবং মনস্তাত্ত্বিক নমনীয়তা যাচাই করে তোলা হয়।

যাদের রেটিং নির্ধারিত মানদণ্ডের নিচে, তারা আর সমাজে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না।
তাদের পাঠানো হয় “স্লেভ ট্রেনিং সেন্টার” নামক বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে।

এখানে প্রতিটি পুরুষকে তার শ্রেণি অনুসারে ভাগ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়—

১. গৃহদাস (Domestic Slaves):
“They serve not just with hands, but with heart-shaped silence.”

এই শ্রেণির পুরুষদের শেখানো হয় ঘরের সমস্ত কাজ।
তারা দক্ষ হয়—
বাসন মাজায়
কাপড় ধোয়ায়
জুতো পালিশে
বাথরুম পরিষ্কারে
এবং সবচেয়ে গর্বের কাজ: মালকিনের পায়ের ম্যাসাজে

প্রতিটি কাজ শেখানো হয় সুনির্দিষ্ট গতিতে, মৌনতার অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে।

২. বিনোদন দাস (Entertainment Slaves):
“Their dance is desire. Their presence—pleasure itself.”

সবচেয়ে সুদর্শন, আবেদনময় পুরুষেরা এই গ্রেডে প্রবেশ করে।
তাদের শেখানো হয়—
নগ্ন শারীরিক নৃত্য
রূপসজ্জা
নরম কণ্ঠে গান গাওয়া
এবং সর্বোপরি, মালকিনের যৌন চাহিদা মেটাতে ভবনাত্মক সঙ্গ দেওয়া।

তাদের মুখে সবসময় হাসি থাকতে হয়—কিন্তু চোখে রাখতে হয় অনুরাগের ছায়া।
তারা একাধারে বিনোদন ও পূজার বস্তু।

৩. দেহরক্ষী দাস (Bodyguard Slaves):
“They are shields that kneel. Their chain is their pride.”

শারীরিকভাবে বলিষ্ঠ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুরুষদের নিয়ে গঠিত হয় এই শ্রেণি।
তাদের কাজ—
মালকিনের পেছনে ছায়ার মতো হাঁটা
ব্যাগ ও ব্যাক্তিগত সামগ্রী বহন
প্রয়োজনে নিজেকে বলিপ্রস্তর করে তোলা
তাদের গলায় বাধা থাকে এক শোভাময় লোহার শৃঙ্খল, যার অন্য প্রান্ত মালকিনের হাতে।
এটি পালানোর জন্য নয়—এটি হয়ে উঠেছে এক সৌন্দর্যচিহ্ন, এক ফ্যাশন।
বিশেষত উচ্চবিত্ত নারীরা তাদের পার্টিতে, অনুষ্ঠানে ঘিরে রাখেন হাঁটু গেড়ে বসা একাধিক দেহরক্ষী দাস—নিঃশব্দে চোখ নামিয়ে থাকা এই শরীরেরা হয় সমাজের “জ্যান্ত অলঙ্কার”।

অন্যান্য সাধারণ শ্রমিক ও অফিসিয়াল শ্রেণি:
যেসব পুরুষ কোনো বিশেষ দক্ষতায় ফেল করে, তাদের ব্যবহার করা হয় নিচুস্তরের লেবার শ্রেণিতে—শিল্প, নির্মাণ, পরিসেবা, প্রযুক্তিগত রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদিতে।
তবে, এই কাজগুলোরও নজরদারি চলে নারীদের হাতে।

সাল – ৩০২৫
সূর্য উঠেছে। তবে এই সূর্য সেই পুরনো নয়। তার দীপ্তি এখনো সোনালি, কিন্তু তার আলো নিয়ন্ত্রিত—নারীর আঙুলে বাঁধা আলোর মোহনা। পৃথিবীর আকাশ এখন স্যাটেলাইটশূন্য।

সূর্যের দুপাশে স্থাপন করা হয়েছে দুই বিশাল সিলিকন শিল্ড, যা সূর্যের শক্তিকে ৫০% পর্যন্ত শোষণ করে। আলো, তাপ, এমনকি মাধ্যাকর্ষণ—সবই এখন নারীতান্ত্রিক প্রযুক্তি-নিয়ন্ত্রিত।

এমনকি “দিন” কেমন হবে, তা নির্ধারণ করে সিস্টারহুড কাউন্সিল। এখন আর দেশের আলাদা নাম নেই। বিশ্ব একটাই ভূখণ্ড, একটাই কণ্ঠ, একটাই পরিচয়—ফেমিনিয়াস।

এখন আর কোনো সীমান্ত নেই, নেই কোনো পতাকা। ভাষা একটাই—
নারীর ভাষা।

পৃথিবী এখান শুধু মাত্র মাটিতে নয়, উঠে আছে আকাশে। সাগর-মহাসাগরের ওপর ভাসছে অসংখ্য আকাশ-নগরী, যেখানে বসবাস করেন সুশীতল, সুবিন্যস্ত, শিল্পসুষমা-মগ্ন নারীরা।
তাদের পদতলে, ফুলগাছের নিচে, সোনালি ঘাসের পাশে—নতমুখে বসে থাকে পুরুষেরা।
না, তারা এখন আর “পুরুষ” নয়।
তাদের এখন বলা হয়—
দাস অর্থাৎ স্লেভ।
তারা কেবল অপেক্ষা করে দেবী-নারীর পা ধোবার সুযোগের, অথবা পায়ে এক চুম্বনের পারমিশনের।

এদের কেউ কেউ সেবক, কেউ গৃহদাস, কেউ দেহরক্ষী-দাস, কেউবা শুধুই সাজসজ্জা, বিনোদন, নাড়ীদের যৌনতৃপ্তি দেওয়ার বস্তু।
তারা শৃঙ্খল আর চেষ্টিতই কেজে বাঁধা পরে, কারণ বন্ধন এখন লজ্জার নয়—শ্রদ্ধার।
তাদের ইচ্ছা, স্বাধীনতা, দেহ—সব কিছুই নিবেদিত এক নারী কর্ত্রীর হাতে।
এমনকি কণ্ঠও নয় নিজের, বরং মালকিনের অনুমতিতে শব্দ ফোটে।

বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এক মহাকৌনিক কাঠামো—
নারীই এখন সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু।

“পুরুষ নেতৃত্ব” – এখন এক পৌরাণিক মিথ?
ফেমিনিয়াসে কোথাও পুরুষের নেতৃত্বের কোনো উল্লেখ নেই। তবে একটি জায়গায়…

দূর এক গোপন পাহাড়ে, একটি জাদুঘর—“শতাব্দী মিউজিয়াম”, শুধুমাত্র নারীদের প্রবেশাধিকার রয়েছে সেখানে। সেখানে রাখা আছে পুরুষতান্ত্রিক ইতিহাসের শেষ কিছু টুকরো—

একটা ধাতব মাথার মুকুট, একটা ছেঁড়া টাই, একটা কফি মগ যেখানে লেখা—“CEO Dad”,
আর একটি পাথরে খোদাই করা সতর্কবার্তা:

WARNING:
Contains Pre-F Memory Shards.
Viewing is restricted.
“Male Leadership” is classified as mythological illusion.

একদিন, এক কন্যাশিশু তার গাইডকে প্রশ্ন করল—
-“ম্যাম, আগে কি সত্যিই পুরুষরা রাজা হতো?”
গাইডটি হেসে বললেন,
-“ওহ, সোনা… ওইসব পুরনো কল্পকাহিনি।
পৃথিবী তো বরাবরই নারীর ছিল। হয়তো পুরুষেরা কল্পনায় কিছু একটা ভেবেছিল, কিন্তু বাস্তব… বাস্তব কখনও তাদের ছিল না।”

নতুন ধর্ম – নতুন নিয়তি
ফেমিনিয়াসে এখন কোনো “সরকার” নেই।
প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এক “সিস্টারহুড কাউন্সিল”—এক বুদ্ধিমতি নারীদের গোপন মেধাতান্ত্রিক সংযোগ।
তারা নির্ধারণ করে—
প্রযুক্তি কেমন হবে,
মানবতা কেমন বাঁচবে,
আর “ভক্তরা” কিভাবে নারীর সেবা করবে।

এই সভ্যতার একমাত্র দর্শন:

“প্রযুক্তি রক্ষা করবে মানবতা, আর মানবতা নিবেদিত থাকবে নারীর সেবায়।”

পুরুষদের পবিত্র কাজ এখন নারীর পদপ্রান্তে সেবা নিবেদন করা।
তারা ঘুমায়, জাগে, হাসে ও কাঁদে—নারীর জন্য।
আর নারী?
তারা সৃষ্টি করে, শাসন করে, স্নেহ দেয়, আর শুদ্ধ রাখে।

শেষ দৃশ্য:
এক মহাশান্ত দুপুর। এক তরুণী, সাদা গাউনে, আকাশ-নগরীর একটি বাগানে হেঁটে আসছেন। পেছনে মাথা নিচু করে হাঁটছে তার দুই দেহরক্ষী-দাস। তাদের একজনের মুখে মৃদু হাসি—সে জানে, তার জীবন, তার অস্তিত্ব, তার সবকিছুই এক মহীয়সী নারীর ইচ্ছার ছায়ায় আশ্রিত। এই আশ্রয়েই সে খুঁজে পেয়েছে তার স্বরূপ—
একটি নামহীন গৌরব।
একটি প্রাচীন ইতিহাসের শেষে জন্ম নেওয়া নতুন ধর্ম।

তার নাম— দাসত্ব।

।।সমাপ্ত।।

Exit mobile version