Site icon Bangla Choti Kahini

প্রতিহিংসা – রাজেশ্বরী পর্ব ১

গভীর সবুজ অরণ্যে ঘেরা একটি লোকালয়। চারিদিকে আগাছার ঝোপঝাড় আর বড় বড় বৃক্ষ। তার পাশ কেটে চলে গেছে ছোট্ট একটা নদী। ছোটো হলেও বেজায় স্রোত সেই নদীতে। গ্রামের মানুষের কাছে নদীটি মায়ের মত। তাদের পানীয় জলের একমাত্র সম্বল। বনের ফল, ফুল, কাঠ, সংগ্রহ করা এবং পশু শিকার করা ছিল তাদের প্রধান জীবিকা। সেসব কেবল করত পুরুষেরা। তারা সকালে দল বেঁধে বনের গভীরে চলে যেত আর সূর্য্য ডোবার আগে ফিরত। ঘরের মেয়েরা ঘরেই থাকত। ঘরের যাবতীয় কাজ করত। দুপুরে তারা নদীতে স্নান করতে যেত এবং ফেরবার পথে কলসী ভরে খাবার জল নিয়ে ফিরত।

সেদিন গ্রামের সবথেকে দুই সুন্দরী যুবতী কন্যা যখন নদীর জল থেকে জলদেবীর মত পাড়ে উঠে এলো, ঝোপঝাড়ের আশেপাশে চোখ পরতে রাজেশ্বরীর চোখের ভ্রু কুঁচকে গেলো। পাশ থেকে মিষ্টি গলায় প্রশ্ন ভেসে এলো,
__ কিরে বোন থামলি কেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে । তাড়াতাড়ি চল…

রাজেশ্বরী কিছু উত্তর দিলো না। দিদির কথামত দুই বোন দ্রুত ফেরার পথ ধরলো। দু বোন বেজায় রূপবতী। দুজনই ভেজা সুতির সাদা শাড়ি পরে আছে। নীচ থেকে অপর পর্যন্ত একটি বস্ত্রয় আবৃত। শঙ্খের মত উচু সাদা দুধ দুটো ভেজা আঁচলে লুকোনো। যদিও লুকাবার কিছুই নেই, ভেজা কাপড়টি শরীরে তাদের এমন ভাবে মিশে গেছে কাপড়টির দেখার কিছুই থাকে নেই। দুজনেরই দুধের গঠন বেশ বড়। পশ্চাদের মাংস দুটো বেজায় ভারি।

চলার সাথে সাথে এপাশ ও পাশ দোলনার মত দুলছে। পেটের নাভি গভীর বন মাঝে তারার মত আলো ছড়াচ্ছে। ঠোঁট দুজনেরই প্রচণ্ড লাল। টানা চোখ। দুজনের দুধের বোঁটা ভেজা আঁচলের মধ্য থেকে ফুলের কড়ির মত শক্ত হয়ে আছে। কিছু দূরে গিয়ে রাজেশ্বরী হটাৎ আশ্চর্যের মত পথে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। সে বুঝতে পারলো কেউ তাদের কে পেছন থেকে অনুসরণ করে আসছে। কিছুদিন থেকেই বনের ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে কেউ দুজন কে অনুসরন করে চলেছে। রাজেশ্বরীর তীক্ষ্ম বুদ্ধি সেটা আগেই আন্দাজ করেছে। আর সেই ব্যক্তিটাও যে কে সেটাও অনুমান করতে তার বাকি নেই।

__ কি হলো থামলি কেন
__ দিদি তুই বাড়ি যা, আমি এখনি আসছি।
__ কেন কি হলো তোর?
__ ওই যে আমগাছ, কটা আম পারবো
__ মা শুনলে কিন্তু
__ কি করবে কাকিমা বকবে, মারবে? সেতো রোজই করে!
বলেই ছুট দিলো পেছনের দিকে।
__ এই রাজেশ্বরী, শোন যাসনা, বাড়ি চল, চল রে

বারেবারে ডেকেও যখন কোনো লাভ হলনা বড়দিদি কি করবে বুঝে না পেয়ে হতভম্বের মত ধীরে ধীরে বাড়ির পথে পা বাড়ালো। দূরে পথের বাঁকে দিদি মিলিয়ে যাবার পর পাশের এক মোটা আমগাছের তলায় এসে রাজেশ্বরী দাঁড়িয়ে গম্ভীর সুরে বললো,
__ এই কে আড়ালে, সামনে এসো

গাছের আবডালে লুকিয়ে থাকা ব্যক্তিটি ঠিক কি করবে বুঝে পেলোনা। আবার ডাক এলো
__ এই যে শুনছো, কি করতে এসেছো তুমি? গাছের এপাশে কি আসবে? কি দরকার আমাকে বলো দেখি আমি তোমায় সাহায্য করতে পারি কিনা?

এবার একটু ঝটকা লাগলো লোকটির মাথায় । এ সুর তো অন্যরকম। ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেলো সে। ঝোঁপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে বললো,
__ আমার নাম পোল্লাদ
__ হ্যাঁ গো চিনি তোমায়, ও পাড়ায় তোমার একটা মুদির ছোটো দোকান আছে। তা কি চাই কেন আমাদের দু বনের পিছু কেন নিয়েছ?
কথাগুলো পল্লাদের কানে একটুও রাগের মনে হলোনা। সে বুঝতে পারলো মেয়েটি তার চোখের ইঙ্গিতে অন্যকিছু ইশারা করাচ্ছে
__ আমি যা চাই তা দিতে পারো?
__ দিতে পারি বৈকি, বলই না? আমি এ বনের বনদেবী। মন খুলে যা চাইবে তাই পাবে!

শয়তানি হাসিতে ভরা মিষ্টি মেয়েটির রসিকতা পোল্লাদকে ভারী মুগ্ধ করলো।
__ তুমি যদি দিতে পারো যা চাবে তাই পাবে। সোনা, গয়নাগাটি, অট্টালিকা সব।

রাজেশ্বরীর সারা শরীরে তখনো চুইয়ে চুইয়ে জলের ধারা মাটিতে পরছে। নদীর জল এখনো তার কোমল শরিরের ভাঁজ গুলিতে কামড় বসাচ্ছে। কোমড় পর্যন্ত দোল খাওয়া ভেজা চুলেগুলো হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে সুন্দরী কিছুটা জল ঝরিয়ে নিলো। ভ্রু আবার কুচকে শয়তানি চোখে যুবতী জানতে চাইলো
__ কি চাই?
সে যা আশা করেছিল উত্তরে সেটিই এলো
__ তোমার বড় দিদিটিকে

রাজেশ্বরী দেখতে সাধারণ নয়। তার যেমন রূপ তেমনি গুণ। তার হলুদ ফর্সা গায়ের বর্ণ দেখলেই পুরুষের মনে অস্থিরতা তৈরি হয়। সে কোমড় যেভাবে দোল খাওয়াতে জানে তেমনি ভাবে তার নরম ঠোঁটের মিষ্টি কথায় মানুষকে কামনার উত্তেজনায় পাগল করতে পারে। তবুও সে যখন তার দিদির পাশে এসে দাঁড়ায়, তার রূপের গোলাপী আভায় রাজেশ্বরীর উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। দিদির মনোহর হাসিতে তার হাসি অম্লান হয়ে পরে। দিদির অমন অভাবনীয় রূপের কারণে তার প্রশংসা কোথাও শোনা যায়না। রূপ নিয়ে সারাজীবনই নারীদের মনে ঈর্ষা তৈরি হয়। তার উপর রাজেশ্বরীর মনের ভেতরে রয়েছে গভির কষ্টের ক্ষত। দুঃখ বেদনা মানুষকে মানুষ থেকে হিংস্র করে তোলে। রাজেশ্বরী তার বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ছিল। খুব আদরে তাকে মানুষ করত। তার বাবা মা খুব ভালোবাসত তাকে। কিন্তু একদিন সব ভালোবাসা শেষ হয়ে যায়।

রাজেশ্বরী তখনো বেশ ছোট, তার বাবা একদিন পশু শিকার করতে গিয়ে বন্য হাতির পদতলে মারা যায়। মা সেই শোক নিতে পারেনি। কদিন প্রচণ্ড জ্বরে ভোগার পর সেও পরলোকে চলে যায়। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রাজেশ্বরীর কাকা সূবর্ণ লোকলজ্জার মুখ থেকে বাঁচতে তাকে নিজের বাড়ি নিয়ে তোলে। কাকিমা তাকে ঝিঁ এর মত খাটায়। খুঁটিনাটি ভুল হলেই মা বাবা তুলে বিশ্রী ভাষায় নানা রকম অপমান করে। সময় অসময় কাকা কাকিমা তাকে মারধর করে। দিনের পর দিন অত্যাচারিত রাজেশ্বরী এই জ্বালা বুকের ভেতরে সযত্নে পুষে রেখেছিল। সে কখনো কাদেনা, শুধু অপেক্ষা করে চলে কবে উপযুক্ত বদলা নেওয়া যাবে। আর আজ সেই সুযোগ আপনা থেকে তার সামনে উপস্থিত হয়েছে। এ সুযোগ হাতছাড়া হতে দেওয়া চলে না।

রাজেশ্বরী উৎফুল্ল নয়নে পল্লাদদের মুখে আরও শুনতে থাকে, সব পুরুষের চোখ দিদির উপর। বিশেষ করে গ্রামের এই গরীব মাদি পোল্লাদেরও। এত দারিদ্র্যতা আর তার সহ্য করতে হচ্ছেনা। বড়লোক হবার প্রচুর লোভ তার মনে। তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটি এক ইংরেজ নীলকর সাহেবের দেহরক্ষী। তার বন্ধুটির মুখেই শোনা ইংরেজ সাহেবের নানান রোমাঞ্চকর রঙিন কাহিনী। সে সর্বদা দুটি জিনিসের প্রতি পাগল, এক মদ দুই নারী। বিশেষ করে যুবতী নারীদের সর্বনাশ করে সে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায়।

নানান কৌশলে গরীব ঘরের যুবতীদের রাতের অন্ধকারে জোর করে তুলে আনে। নিজের পালঙ্ক রজনীগন্ধা, গোলাপে ভরিয়ে দেয়। যুবতীদের পশুর মত দিনের পর দিন তাকে নিংড়ে খায়। তারপর আশ মিটে গেলে সেই যুবতীর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়না। সেই সাহেব কে কেউ যদি কোনো অবিবাহিত সুন্দরী যুবতী উপহার দিয়ে খুশি করতে পারে তার টাকা সম্পত্তির কোনো সীমা থাকেনা। পল্লাদ তাই ফন্দি আটতে থাকে। যোগ দেয় তার বন্ধুও। সুবর্ণর মেয়ের মত এত রূপসী আর কেউ হতে পারেনা। তারা দুজনেই জানতো টাকা, ধণ জহরতে তাদের দুজনকে মুড়ে দেবে সাহেব। পল্লাদ তাই এতদিন নিজে নজর রাখতে থাকে। রাজেশ্বরীর ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। এই তো বদলা নেবার সুযোগ। এটাই তো চাইতো সে এতদিন।

দিদি তখন ভেজা শরীরে স্বর্গের অপ্সরা। সে এসবের কিছুই জানলো না। তার রূপের আগুন যেন ছড়িয়ে পরছে গোটা বনে। সামনে থেকে একটা ঘোড়া ছুটে আসছিল, কিন্তু দিদি তখন বোনের অদ্ভুত আচরনে আনমনা। ঘোড়ার চালক সুন্দরীকে দেখে এক পলকে মুগ্ধ হয়ে গেলো। আপনা থেকেই ঘোড়াটি তার মালিক কে নিয়ে পথের সামনে থেমে গেলো। ঘোড়ার তীব্র চিৎকারে সুন্দরী হকচকিয়ে গেলো।

উপরে তাকাতে দেখলো অতি সুন্দর এক যুবক সুসজ্জিত পরিধানে এক নজরে তার দিকে চেয়ে আছে। তার গলায় নানা রকমের মুক্তর মালা। কপালে চন্দন তিলক। কোমরে একটা তরবারি ঝুলছে। প্রথম চোখাচুখিতে দুজনেই ভারি লজ্জা পেয়ে গেলো। নয়নতারার ভেজা সুন্দর মুখটা লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল। যুবতটিও অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। সুন্দরী ভেজা আঁচল দিয়ে তার দেহে বেরিয়ে আসা লজ্জা কিছুটা ঢেকে নেবার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু চন্দ্রিমার মত উজ্জ্বল নাভিটা তখনো যুবকের চোখে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। রূপবতীর মুখেও মৃদু হাসির ছটা। চোখ নামিয়ে রেখেই নরম সুরে প্রশ্ন করলো,
__ কে তুমি, পথ কেন আটকালে এভাবে
__ পথ তো নিজে থেকেই আটকে গেলো

উত্তরটি শুনে লজ্জায় নারীর মুখ ঢাকবার আর জায়গা রইলনা। চুপ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো। যুবকটি ঘোড়া থেকে নেমে তার সামনে দাঁড়ালো। বললো,
__ আমার নাম বিরম্বর। এই রাজ্যের ছোটো রাজপুত্র
শোনা মাত্রই সুন্দরী নিজের কানকে নিজে বিশ্বাস করতে পারলো না। রাজার ছেলে? রাজ্যের রাজপুত্র? তার সামনে? অবিশ্বাস্য! সুন্দরী কন্যার মনে হতে লাগলো সে কোনো স্বপ্ন দেখছে।
__ বিশ্বাস হচ্ছেনা? তবে এই দেখ…
বলেই যুবকটি নিজের গলায় ঝুলতে থাকা রাজ লকেটটি হাতে ধরে দেখালো। এবার আর অবিশ্বাসের জায়গা নেই। সুন্দরী হতভম্বের মত নিজের মুখে হাত রেখে অস্ফুট আওয়াজ করে উঠলো। কোমরের জল ভর্তি মাটির কলসীটা হাত থেকে খসে ভেঙে গেলো। স্বশরীরের বিরম্বরের পায়ে এসে পরলো। দু চোখ দিয়ে তার জল চুঁইয়ে পরছে
__ আমাকে ক্ষমা করবেন রাজপুত্র। আমি নয়নতারা, গায়ের মেয়ে। মূর্খ মানুষ। তাই আপনাকে চিনতে পারিনি। আমার অপরাধ ক্ষমা করবেন।

রাজপুত্র নিচু হয়ে স্নেহভরে নয়নতারার গায়ে হাত রাখলো। নিজের হাতে নয়নতারার চোখ মুছে দিলো।
__ তোমার এত সুন্দর মুখটিতে চোখের জল মানায় না। পশু শিকারে রাজ্যের এদিকে আসা। বনের মধ্যে নিজের রক্ষীদের হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু কে জানত পথ হারিয়ে এত সুন্দর একটা গন্তব্য আমি পাবো।

নয়নতারা মুখ ফিরিয়ে রাজপুত্রের পানে চাইলো। প্রেমের কি অপরূপ টান। রাজপুত্রের চোখেও জল ভরে এসেছে।
__ রাজপুত্র এই দাসী যদি গন্তব্যের পরিবর্তে আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে বসে?
__ তবে এখানেই হারিয়ে যাব আমি সারাজীবনের মত।
বিরম্বর নয়নতারাকে বুকে জড়িয়ে নিলো। নয়নতারার যৌবনেও প্রথম ছোঁয়া এসে লাগার সাথে সাথে আবেগে সেও কোনকিছু না ভেবে রাজপুত্রকে পথের মাঝে জড়িয়ে ধরলো।

কাটা ঘায়ে নুনে ছিটে দেবার জন্য এটুকুই রাজেশ্বরীর কাছে যথেষ্ট ছিল। রাজেশ্বরী বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেলো। সে এতক্ষন ভাবছিল বাড়ি গেলেই কাকিমার কাছে গালমন্দ শুনবে। কিন্তু নিজেদের আঙিনায় এসে পৌঁছাতেই তার পায়ের মাটি কেঁপে উঠলো। চারিদিকে শুধু অস্ত্রধারী সুসজ্জিত সেনারা ঘোরাঘুরি করছে। জানা গেলো আগামী সপ্তাহেই রাজ্যের সবচেয়ে ছোটো রাজপুত্রের সঙ্গে নয়নতারার বিবাহের দিন স্থির হয়েছে।

বিরম্বর কে এখন ঝলক দেখতেই বাড়ির অভাগী মেয়েটি পাগল হয়ে উঠল। কাকা কাকিমা, দিদি এবং গায়ের বাকি লোকদের আনন্দ দেখে হিংসায় মরে যেতে লাগলো। কাল নাগিনীর মত শিশিয়ে উঠলো ভেতরে ভেতরে। নয়নতারাই কেন? সে কেন নয়? দিনের শেষে বীরম্বর সহ তার সহচররাও গরীব কুঠি থেকে বিদায় নিল। যতই রাত গভীর হয়ে আসতে লাগলো রাজেশ্বরীর শয়তানী মন আরও প্রখর ভাবে বাসা বাঁধতে লাগলো।

শুয়ে শুয়ে নিজের বিছানায় ভাবতে লাগলো এখনো বেশ কিছুদিন সময় আছে। যা করতে হবে এরই মধ্যে। দুদিন পরে হঠাৎই কিসের কারণে সুবর্নের একমাত্র স্ত্রী খুবই অসুস্থ হয়ে পরলো। বেদ দেখানো অত্যাবশ্যক। আসে পাশে বলতে জঙ্গল শেষে দু গ্রাম পার করে একটা বৈদ্দি আছে। এখনি বেরোলেও কাল বেলা পেরোনোর আগে ফিরতে পারা যাবেনা। অতশত না ভেবে দুপুরের মধ্যেই দুই মেয়েকে বাড়িতে রেখে সুবর্ণ বউকে নিয়ে রওনা দিলো।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে দুপুরে ক্লান্ত নয়নতারা একটু ঘুমিয়ে পরেছিল। আচমকা ঘুম ভাঙতেই পাশের ঘরে গিয়ে দেখলো রাজেশ্বরী নেই। দুরন্ত মেয়েটাকে খুজতে ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোনে যেতেই ঝোপের পাশ থেকে আসা ফিসফিস শব্দে দাঁড়িয়ে পরল। রাজেশ্বরীর গলার সুর তার সঙ্গে একটা পুরুষের চাপা ভারি কন্ঠস্বর। কিন্তু ঝোপের আড়ালে শুধু রাজেশ্বরীকে দেখা যাচ্ছে। নয়নতারা কান পেতে ওদের কথা শুনতে লাগলো।
__ তারপর?
__ তারপর এই সাদা গুরোটা তোর দিদির খাবারে মিশিয়ে দিবি। একবার খেয়ে নিলেই ব্যাস। ঘুমিয়ে পরলেই বাইরে গিয়ে মশাল জ্বালাবি।

ইংরেজ সাহেবদের লোকেরা হাজির হয়ে যাবে।
__ আর তুমি?
__ আমি আসতে পারবোনা। বউটা আমার ভীষন দজ্জাল। মেরে ফেলে দেবে অত রাতে বেরোলে
__ ঘুমিয়ে পড়বে তো?
__ এক পোহরের আগে ও মাগীর হুস থাকবেনা। তাও মুখ, হাত, পা বেঁধে নিস কাপর দিয়ে।
__ এইবার নয়নতারা, তুমি বুঝবে মাগী অতিরিক্ত সুন্দরী হওয়াও কেমন দুর্ভাগ্যের। প্রতিরাতে বিছনায় ফেলে যখন বিদেশী সাহেব তোকে দিয়ে নিজের পিপাসা মেটাবে তখন আমার বুকের জ্বালা মিটবে…

ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে আসলো নয়নতারা। কি বলছে রাজেশ্বরী ওসব। নিজের কান চোখকে বিশ্বাস করা যাচ্ছেনা। নয়নতারা আর দাঁড়িয়ে থাকতে সাহস পেলোনা। নিঃশব্দে দ্রুত ঘরে চলে এলো। জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগলো। এত বড় শয়তান ওর বোন? এত বিষাক্ত? এতটা নীচ? নিজের একমাত্র দিদির এতবড় সর্বনাশ করতে চায়? মা, বাবা তাহলে ঠিকই বলে। ও একটা ডাইনি। নিজের মা বাবাকে খেয়েছে। যাকে পাবে তাকে খাবে। মুহূর্তে চমক খেলে গেলো নয়নতারার মাথার মধ্যে। মনেমনে বলতে লাগলো,
__ যতই ষড়যন্ত্র করিস বোন আমি তোর দিদি। ষড়যন্ত্র কাকে বলে তোকে আমিই শেখাব!

রাজেশ্বরী যখন ঘরে ফেরত আসলো এসে দেখলো তার দিদি তার ঘরে আগের মত ঘুমোচ্ছে। সে নিজের ঘরে গেলো। ফের বেরিয়ে এসে দিদিকে ডেকে তুললো,
__ দিদি এ দিদি, ওঠ, জল নেই ঘরে জল আনতে যেতে হবে
নয়নতারা ঘুমের ঘোরে বললো,
__ তুই একাই যা আমার ভালো লাগছেনা। এবার থেকে তোকে একাই আনতে হবে। আমি তো কদিনের অতিথি

অগত্যা উপায় না দেখে রাজেশ্বরী একাই কলসী কাখে নদীর দিকে বেরিয়ে গেলো। বেরিয়ে যেতেই নয়নতারা ধড়মড়িয়ে উঠে বসলো। তারপর বোনের ঘরের দিকে গেলো। তার লুকোনোর জায়গা নয়নতারা জানে। বিছানার নিচে হাত দিতেই কালো একটা কাপড়ের টুকরো পেলো। তার গিট খুলে দেখল সেটা সাদা লবণের মত দেখতে। ছুটে রান্নাঘরে গেলো। কাপড়ের থাকা সাদা গুড়োটা নিজের শাড়ির আঁচলে বেঁধে নিলো। কালো কাপড়টাতে একই পরিমাণ লবণ দিয়ে মুড়িয়ে ভালো করে আগের মত গিট বেঁধে দিল। তারপর রাজেশ্বরীর ঘরের যথাস্থানে আবার সেটাকে নয়নতারা রেখে আসলো।

রাতে যথা সময়ে দু বনের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে রাজেশ্বরী ঢুলুঢুলু চোখে নয়নতারার দিকে দেখতে লাগলো আর মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। কিন্তু নিজের চোখ বারেবারে ঘুমে বুজে সত্ত্বেও সে তখনো বুঝতে পারলোনা তার ওষুধ তার উপড়েই প্রয়োগ করা হয়েছে। শুধু বলতে লাগলো,
__ দিদি ঘুমাবিনা?
__ সামনে আমার বিয়ে, ঘুম কি আসে রে?
রাজেশ্বরী মুচকি হাসলো কিন্তু আর দাড়িয়ে থাকতে পারলোনা। ঢলে পরে গেলো মাটিতে।

Exit mobile version