পিঞ্জর – প্রথম অধ্যায় – পর্ব ২

This story is part of the পিঞ্জর – প্রথম অধ্যায় series

    পুলিশ অফিসারকে বললো.. দেখুন আমার স্বামী একজন ইনকাম ট্যাক্স অফিসার ৷ আমিও একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের গৃহবধু ৷ আর সুজয়কে দেখিয়ে বলে..ওর বাবা মানে আমার প্রতিবেশী ও দাদা শ্রী নিখিল দত্ত একজন অ্যাডভোকেট ৷ আমি ভাইপোর মিউজিক শুনতেই আজ ওর কর্মক্ষেত্রে এসেছিলাম ৷ সেখানে কতো গুলো লুম্পেন আমাদের হেনস্থা করলো ৷ আর আপনার পুলিশ কনস্টেবলটি তাদের কিছু না বলে আমাদের এখানে নিয়ে এলো ৷

    গোপা আজ একটা গোলাপি স্লীভলেস ব্লাউজ আর গোলাপি একটা শিফন এর শাড়ি পরেছে। একদম ‘কামদেবী রতি যেন ‘লাগছিল গোপাকে ৷

    অফিসার একবার গোপার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন…সরি,সরি, ম্যাডাম ৷ তারপর কনস্টেবলকে ধমকে বলেন..আপনার কতোবছর চাকরি করছেন,হ্যাঁ কে রেন্ডি আর কে রেক্সপেক্টেবেল ঘরের মেয়ে বোঝেন না ৷
    কনস্টেবলটি দেঁতো হাসি দিয়ে বলে..স্যার,চাকরির বাইশবছর হোলো ৷ আগে কে রেন্ডি আর কে নয় চেনা যেত ৷ এখনতো স্যার এনাদেরমতো মেয়েছেলেরাও হাত খরচ জোগাতে লাইনে আসছে ৷ গোপার দিকে তাকিয়ে বলে ৷ গোপা লজ্জিতা বোধ করে ৷

    তখন অফিসার আবার ধমকে বলেন..ঠিক আছে,
    ঠিক আছে..আপনি আসুন এখন ৷ তারপর গোপাকে বলেন..আপনি এখন কোথায় যাবেন? বাপের বাড়ি ? না নিজের বাড়ি ?

    গোপা বলে..দুটোই সমান দুরে ৷ তবে এতো রাতে আর বাপের বাড়ি যাবো না ৷ নিজের বাড়িতেই ফিরবো ? সুজয়ের বাইক আছে ৷

    অফিসার বলেন..এতো রাতে আপনি আর এই ছোট ছেলেটির বাইক নিয়ে হাইওয়ে ধরে যাওয়ার রিস্ক আছে ম্যাডাম ! আর ওতো দেখছি একটু চোট পেয়েছে ৷

    গোপা তাকিয়ে দেখে সুজয় মাথার একটা পাশ রুমাল চেপে বসে আছে ৷ তবুও বলে..কিন্তু উপায়ও তো নেই ৷
    অফিসার আবার বলেন..দেখুন আপনার বক্তব্য শুনে বলছি – এক কাজ করুন আমার পরিচিত একটি ভালো হোটেলে আছে ‘পার্ক ভিউ ইন’

    ওখানকার ম্যানেজার রন্টু পাইক আমাদের ঘরের লোক ৷ আপনারা ওখানে রাতটা কাটিয়ে ভোরভোর বেরিয়ে যাবেন ৷ আমি ওর ট্রিটমেন্ট করতে লোক ডেকেছি ৷ আপনাদের থানার গাড়িতে করে হোটেলে পৌঁছে দেবে ৷

    গোপা চিন্তা করে মিহির জানে ও গানের জলসা দেখতে শহরে এসেছে ৷ এবং দেরি হলে বা না ফিরলে যেন চিন্তা না করে ৷ কারণ সুজয়ের অনুরোধে ওর সাথে হোটেলে রাত কাটানোর প্ল্যানইতো ছিল ৷ এইসব চিন্তা করে ও বলে.. ঠিক আছে ৷ ৷ পুলিশের জানাশোনা হোটেলে মানে খারাপ হবে না ৷ তখন ও বলে..ঠিক আছে দাদা না সরি স্যার ওই ব্যবস্থাটা দেখে দিন ৷ কাইন্ডলি আপনি দেখুন ৷

    অফিসার হেসে বলেন..থানায় বসে পুলিশকে এই প্রথম কাউকে দাদা বলতে শুনলাম ৷ সরি হবার কারণ নেই গোপাদেবী ৷ তারপর কাউকে একটা ফোন করেন ৷ গোপা হোটেলের নামটা শুনে বোঝে ওদের নিয়ে কথা বলছেন অফিসার ৷
    ..হ্যালো,রন্টুবাবু আমি পুলিশ ইন্সপেক্টর পাকড়াশী বলছি..আমি দুজন গেস্ট পাঠাচ্ছি ৷ বিপদে পড়ে আজকের রাতটা থাকবেন ৷ একটা ডি.বি রাখবেন ৷
    ওটা আমি পড়ে দেখছি..আপনার চিন্তা নেই..৷
    ফোন রেখে বলেন..যান,বলে দিয়েছি ৷ কোনো সমস্যা নেই ৷

    ইতিমধ্যেই একজন নার্স এসে সুজয়ের মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে ৷ সামান্যই জখম স্টিচের দরকার নেই ৷ পেনকিলায দিলাম শোবার আগেই খাইয়ে দেবেন ৷ আর দু দিন ড্রেসংটা পাল্টে নেবেন ৷ বলে চলে যান ৷
    গাড়িটা হোটেলে যখন ঢুকল ঘড়িতে এগারোটা বাজে ৷ একজন কনস্টেবল বাইকটা ভিতরে ঢুকিয়ে চাবিটা সুজয় কে দিয়ে চলে যায় ৷ ওদের দেখে হোটেলে ম্যানেজার রন্টু পাইক এগিয়ে এসে বলেন…
    আপনি ম্যাডাম পাকড়াশী স্যারের গেস্ট, ৷

    গোপা একটা হাই তুলে বলে..হ্যাঁ,আপনি ম্যানেজার সাহেব ৷
    রন্টু পাইক জিভ কামড়ে বলে..ম্যানেজার সাহেব ,
    আবার কি ? ওই হোটেলের কর্মচারী ৷ পাকড়াশী স্যার ছাড়াও পুলিশের বড়বড় অফিসার,গেসটরা আমাদের হোটেলেই ওঠেন ৷
    গোপা বলে..প্লিজ,আমাদের রুমটা যদি কাইন্ডলি দেখিয়ে দেন ৷

    রন্টু সঙ্গে সঙ্গে বলে..ওসব রেডিই আছে ৷ কেবল এই রেজিস্টারে আপনার নাম,ফোন নম্বরটা লিখে দিন ৷
    জাস্ট ফর্মালিটি ম্যাডাম ৷ আমরা অনৈতিক ভাবে হোটেলে চালাই না ৷ সন্মানীয় লোকজনই আমাদের কাস্টমার ৷
    গোপা আর কথা না বাড়িয়ে রন্টুর বাড়িয়ে দেওয়া খাতায় নাম,ফোননম্বর লিখে দিতেই ৷ রন্টু ওদের লিফটে চড়িয়ে তিনতলায় তিনশো তিন নম্বর লেখা রুমের দরজার লক খুলে আলো জ্বেলে বলে..স্যারের ফোন পেয়েই আমি বেয়ারা দিয়ে রুম রেডি করে রেখেছি ৷ কেমন পছন্দ ৷ তারপর বাথরুমের দরজা খুল দেয় ৷

    গোপা আগে বাথরুমটা দেখে এবং পরিস্কার পরিচ্ছনতা দেখে খুশিই হয় ৷ তারপর ঘরটার চারদিকে নজর বুলিয়ে নেয় ৷ ঘরটার মাঝখান জুড়ে বেশ বড় বিছানা ৷ তাতে সাদা চাদর ও দুটিকরে বালিশ রয়েছে ৷ পায়ের কাছে দুটি কম্বল ৷ পায়র দিক দেয়ালে জুড়ে বেশ বড়ো আয়না ও তার সামনে বাডিতি জায়গায় দু থাকের ড্রেসিং টেবিলের ধাচে করা ৷ একপাশে ছোট ফ্রিজও আছে একটা ৷ একটা বেডসাইড টেবিলে ফুলদানি আছে ৷কিন্তু তাতে ফুল নেই ৷ ঘরের একপাশে একটা ওয়ার্ডড্রোব আছে ৷

    রন্টু বলে..ফ্রিজে জল,কোল্ডড্রিংক্স,আইসক্রিম আছে ৷ আর ওয়ার্ডড্রোবএ নুতন টাওয়েল আছে ৷ ওয়াশরুমে ব্রাশ,পেস্ট,সাবান,শ্যাম্পু সব রাখা আছে ম্যাডাম ৷ নিন রেস্ট করুন ৷

    গোপার একটু অস্বস্তি বোধহয় ৷ এতো দামী হোটেলে এসেছে ৷ কিন্তু এর একরাতের ভাড়ার পয়সা দেবার ক্ষমতা ওর নেই ৷ আর সুজয়ের কাছেও বোধহয় হবেনা ৷ তখন বলে..আচ্ছা,আমাদের কতো রেন্ট পে করতে হবে যদি একটু বলেন ৷ টাকার ব্যবস্থা করতে হবে ৷ কারণ যা বুঝতে পারছি আমার সামর্থ্যের বাইরের হবে ৷

    ম্যানেজার রন্টু পাইক জিভ কামড়ে বলে..ছিঃছিঃ ম্যাডাম,আপনার স্যারের গেস্ট ৷ আপনার থেকে তো হোটেল পেমেন্ট নেবে না ৷

    গোপা ভাড়া জানার আগ্রাহে বলে..তবু,শুনি কতো ?

    রন্টু বলে..পাঁচ হাজার প্লাস ট্যাক্স ৷ আরো আছে তবে আপনি ছাড়ুন ৷ তারপর গুডনাইট.. বলে দরজা টেনে চলে যায় ৷
    গোপা আকাশ থেকে পড়ে ৷ সত্যিই এতো লাক্সারী হোটেলে রাত্রি বাস ওর স্বপ্ন ছিল ৷ যদি ওর নিজস্ব আয়ের পথ থাকতো ৷ যাক এক রাতের জন্য হলেও তার স্বপ্ন পূরণ হোলো ৷ এই ভেবে নিজেকে স্বান্তনা দেয় ৷ সুজয়ের সাথে ওর বারে ওর বাজনা শুনতে আসা ৷ তারপর বাইরে বেরিয়ে কিছু মদ্যপের সাথে ওকে নিয়ে সুজয়ের মারামারি ৷ সেখান থেকে পুলিশ কনস্টেবলের ওকে রেন্ডি ও সুজয়কে কাস্টমার ভেবে থানায় নিয়ে যাওয়ার বিপদ থেকে বৌদির দাদার পুলিশের চাকরির সুবাদে অফিসার পাকড়াশী’র বদান্যতা কে মনে মনে ধণ্যবাদ জানায় ৷

    সুজয় জামা-প্যান্ট খুলে কেবল একটা জাঙিয়া পড়েই ঘুমিয়ে পড়েছে ৷ আজ ওকে গোপার জন্য মাতালদের সঙ্গে লড়তে দেখে ওর প্রতি মায়া বাড়ে গোপার ৷ ছেলেটা দিনদিন ওকে আশ্চর্য করে তুলেছে ৷ অথচ প্রথম দিন পনেরো ওকে চিনতেই পারেনি যে সুজয় বাবা-মা সহ ফুল্লরা আবাসনের মুখোমুখি ফ্ল্যাটেই থাকে ৷

    গোপা একটা টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে যায় ৷ তারপর প্রথমে কালো শার্টটা খোলে ৷ এরপর জিন্সের প্যান্ট..কালো ব্রা-কাম গেঞ্জি ও শেষে প্যান্টি টা খুলে ওঢয়াশরুমের ভিতরে রাখা হ্যাঙারে মেলে দেয় ৷ চুলটা খোপা করে বাধে ৷ তারপর বেসিনের কল খুলে হালকা হালকা জল নিয়ে মুখ,হাত,পা ধুয়ে নেয় ৷ ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের নগ্ন শরীরটা দেখে ভাবে ..আচ্ছা,ওই সুজয়ের বারের বাইরের লোকগুলো বা কনস্টেবল দুজন ওকে রেন্ডি ভাবলো কেন ? রেন্ডি বা লাইনের মেয়ে নামাটা ওর কানে এসেছে ৷ পরিবর্তনের আমোদপুরে এরা নাকি ধীরে ধীরে আসছে ৷ আমোদপুরের উড়ন্ত পয়সাকে নিজেদের ব্যাগে ভরে নিচ্ছে ৷ ছেলে তীর্থ’র সহপাঠী রিতমের মা ও সেইসুত্রে বান্ধবী হয়ে ওঠা এষার কাছে শোনে ৷ এষার বর ওষুধের দোকানের মালিক ৷ বিস্তর পয়সার মালিক ৷ এস্বত্বেও এষার নিজের আয় করবার আগ্রহ খুব ৷ কিন্তু মাধ্যমিক পাশ এষা নিরুপায় ৷ তাই ওইসব খবরের পিছনে ছোঁটে আর স্বপ্ন দেখে ৷ এষা যদি জানে গোপার আজকের এই হোটেলে বাসের কথা ৷ তাতে কার সঙ্গে? কি করতে ? কি করলো রাতে ? এসব ছেড়ে কেবল খোঁচাবে হোটেলের ভাড়া দিল কি করে ? না,এষা দত্ত’কে এইসব বলবে না ? আর ও একান্ত নিজস্ব একটা পয়সা উর্পাজনের উপায় খুঁজবে এবং কাল থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন ভাবে তত্ত্বতলাশ শুরু করবে বলে ‘ওথ’ নেয় ৷
    নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আয়নার মধ্যে দিয়ে দেখতে দেখতে এইসব ভাবে গোপা ৷ সত্যি পয়সা ছাড়া জীবনের আনন্দ উপভোগ করা অসম্ভব ৷

    এরপর গা মুছে নেয় গোপা ৷ টাওয়েলটা বুকের উপর ঘুরিয়ে বেঁধে নেয় ৷

    গোপার ওয়াশরুমে কাটানো সময়টুকুতে অজান্তেই একটা বিষাক্তকীট জীবনে প্রবেশ করে তা অজ্ঞাতই থেকে যায় ৷
    গোপা বেডরুমে ঢুকে..খাটে উঠে চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ মোবাইল টা চার্জে বসায় ৷ তারপর একবার সুজয়ের কপালে হাত বুলিয়ে দেয় ৷ পেনকিলার খাবার ফলে গভীর ঘুমে মগ্ন সুজয় একটু কেবল গুঙিয়ে ওঠে ৷

    গোপা বেড সুইচ টিপে বড় লাইট অফ করে ৷ একটা হালকা নীল আলোয় রুমটা আবছা হয় ৷ শুয়ে পড়ে গোপা ৷
    কিন্তু এই ঐশ্বর্যপূর্ণ হোটেলের রুমে শুয়েও ঘুম আসেনা ৷ ও সুজয়ের দিকে পাশ ফিরে শুয়ে ওকে দেখতে থাকে ৷ আর ভাবতে থাকে ৷ আজ এই দুর্ঘটনা না ঘটলে ভাইয়ের বয়সী সুজয় ওকে হোটেলের বদ্ধ রুমে একলা পেয়ে কেমন নাজেহাল করতো ৷ প্ল্যান ভেস্তে যাওয়াতে গোপাও মনক্ষুণ্ণ হয় ৷

    কারণ গোপার থেকে প্রায় দশ বছরের ছোট এই কবি কবি চেহারার অথচ স্পষ্টবাক ও গোয়াড় টাইপ বাচ্চা
    ছেলেই বলা যায় ৷ এই সুজয়ইতো গোপার গানের প্রতি টান ৷ গোপার সুপ্ত কামনা-বাসনা ৷ গোপার জীবনে তার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি কে চিনিয়েছে, জানিয়েছে,ভাবিয়েছে ৷

    এইসবের মাঝেই গোপা ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে যায় ৷ ওর স্বপ্নে ফিরে আসে দুরন্ত দস্যি সুজয় কীভাবে ওকে ভালোবাসার মোহে জড়িয়ে নেয়…

    চলবে…

    **পাঠক/বিশেষ করে পাঠিকারা গোপার মনের দ্বিধাধন্ধ নিয়ে ওর করণীয় কর্তব্য সর্ম্পকে কি ভাবছেন মতামত দিন..কাহিনীর কমেন্ট বক্সে ও রেকমেন্ড করুন এবং TG ID তে জানান @RTR09..