বিরাজের জীবন কথা – ২০

গত পর্বের পরে –

আমিঃ আবার সোয়ামী!

স্মৃতিঃ আমিতো সোয়ামীই ডাকবো!

আমি মুখ কালো করে ভাবির দিকে তাকালাম! ভাবি আমায় ইশারায় ঠিক করে দিবে বললো।

ভাবির আম্মু আগেই চলে গেলো, আমি আর মিশু ভাবি রিনি আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিলাম।

দুপুরের গোসল সেরে খাবার খেয়ে ভাবির আম্মু, ভাবি আর আমি, ভাবির রুমে বসে কথা বলতে বলতে জানতে পারলাম তিনদিন পর বিকালে ভাবি আর স্মৃতি আপু তাদের বান্ধবীর বিয়েতে যাবে। চারদিন পর বিকালে হলুদ, পরের দিন বিয়ে, তারপর বৌভাত তারপরের দিন আরে কিসের পার্ট।

তার মধ্যেই স্মৃতি আপু আর তার আম্মি ( রিনি আন্টি ) এসে যোগ দিলো৷ আমি দেখে হাত নাড়িয়ে খুশি মনে হাই করলাম। স্মৃতি আপুও হাই করলো কিন্তু তার চোখ মারাটার কারণ আমি বুঝে গেছি। আপু আবার আমার সাথে বিয়ে বিয়ে সোয়ামী সোয়ামী বলে মজা করবে। আমি ভাবির পাশে বসে আছি, আর স্মৃতি আপু এসে আমার অপর পাশে আমার একহাত তার দুইহাতের তালুতে নিয়ে বসে কথা বলতে লাগলো। সবাই লক্ষ্য করেছে কিন্তু কিছু বললো না। স্বাভাবিক ব্যাপার!

আমি ভাবছি দুপাশে দুই পাখির মাঝে আমি! কিন্তু আমার চোখ স্মৃতি আপুর হাতের ফুলো ফুলো আঙুল গুলোর দিকে। ভীষণ কিউট স্মৃতি আপুর হাতের শেপ গুলো।

তারা সবাই মিলে বান্ধবীর বিয়েতে গিফট কি দিবে ঠিক করলো, কবে শপিং করতে যাবে তাও ঠিক করলো, কিন্তু বিয়েতে কবে যাবে তাতে সবাই অমত! ভাবি আর স্মৃতি আপু বিকেলে হলুদের সময় যেতে চায়! কিন্তু ভাবির আম্মু মিলি আর স্মৃতি আপুর আম্মি রিনি আন্টি তাদেরকে হলুদে যেতে দিবেনা!

এখানেও রেলস্টেশনের মতোই কাহিনি! তারা ভয় পায় রাতের বেলা মেয়ে দুটোকে বাইরে পাঠাতে। কুকর্মীরতো অভাব নেই দুনিয়াতে। ভয়টাই স্বাভাবিক!

চায় যাই হয়ে যাক, রাতে তারা বাইরে যাবেনা! এটাই দুই মায়ের শেষ কথা! একদম অনড় হয়ে গেছে রিনি আর মিলি আন্টি।

ভাবি আর স্মৃতি আপুর মন খারাপ করে ফেললো, ভাবি চুপচাপ বসে আছে, বিয়ের জন্যইতো ঢাকায় এসেছে! স্মৃতি আপু আমার হাতের তালুতে চিমটি ধরার চেষ্টা করছে, মুখ ঘোমরা, দুই আন্টিও চিন্তিত!

শেষ মেষ মিলি আন্টি নয়ন ভাইয়াকে কল করলো ভাবিকে বুঝাতে যে তাকে রাতের বেলায় বাইরে না যেতে, কিন্তু ভাইয়াকে ভাবি শুধু না “না” বলেই চুপ করিয়ে দিলো। ভাইয়াও প্রেমিকার ভয়ে কিছু বললোই না।

ভাবি কয়েকবার একা আমার কাছে থাকতে সময় আমাকেও বিয়েতে নিয়ে যাবে বলেছিল, কিন্তু আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেই আমি সাথে সাথে না করে দিলাম।

আজকেও যখন যখন বললো- তুমিও চলো, তাহলে এই দুই মহারাণী আর টেনশন নিবে না।

আমিঃ না আমি তোমাকে আগেই বলেছি যাবোনা বিয়েতে ভাবি! এসব আমার পছন্দ না! তুমিতো সবই জানো আমি বাইরে যাইনা।

স্মৃতিঃ কেন সোয়ামী! বিয়ে পছন্দ না! আমিতো আরো আমাদের বিয়েতে বড় করে অনুষ্ঠান করবো ভাবলাম।

মিলি আর রিনি আন্টি অবাক!

স্মৃতিঃ আরে বিরাজতো মুন্নি আন্টির ছেলে!

মিলি আন্টিঃ তো?

রিনি আন্টিঃ ওওও! আরে মিলি, হা হা আমিও ভুলেই গেলাম। বিরাজ মুন্নির ছেলে, মনে নেই তোর মিলি মিশুর বিয়ের সময় মুন্নি স্মৃতিকে বৌ বানিয়ে নিয়ে যাবে বলেছিল। তাই মনে হয় মজা করছে!

মিলি আন্টিঃ ও হা হা! হুম মনে পড়েছে!

ভাবিঃ আরে বুঝনা কেন তোমরা, আমরা না গেলে লাবণ্য আর কথা বলবে না। আমরা দুজনই না গেলে আর কে আছে! আমরা তিনজনইতো ছিলাম সারাজীবন বেস্ট ফ্রেন্ড।

রিনিঃ কিন্তু মা তোমাদেরকে তো আর একা ছাড়া যাবেনা। যাই বলো কারণটাতো আর নতুন করে বলার কিছু নেই।

ভাবিঃ আমন্ত্রণ সবাই পেলাম, তোমরা গেলে সমস্যা কোথায়?

মিলি আন্টিঃ আমিতো যাবো বললাম কিন্তু তোর রিনি আন্টিকে কে বুঝাবে! ও যাবেই না!

স্মৃতিঃ আটত্রিশ বছরের হয়েছো দুজনে এখনো একসাথে, একসাথে করো কেন?

রিনি আন্টিঃ একটা কাজ কর তোমরা! মিশু, স্মৃতি আর মিলি চলে যা। আর বিরাজ আমার কাছে থাকবে! আমিও কোম্পানি পেয়ে যাবো।

সবাই রাজি হলো! কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম দুইদিন একা একা থাকতে হবে। স্মৃতি আপু তা লক্ষ্য করলো।

স্মৃতিঃ আরে তুমিও চলো বাবু! মজা হবে অনেক!

ভাবিঃ চলো না বাবু!

আমিঃ না!

স্মৃতিঃ ঠিক আছে তাহলে! মুখ ঘোমরা করা লাগবেনা! তুমি আমার রুমে থাকবে সেই দুইদিন। গেম খেলে সময় কাটিয়ে নিবে। না হলে আমি কাউকে দেখি অনলাইনে পাই কিনা যে তোমার সাথে খেলবে!

ভাবিঃ রাজিতো বাবু!

আমিঃ হুম!

বাকি সবাইকেও ভাবি জিজ্ঞেস করে নিলো। সবাই হ্যাঁ করে দিলো।

গিফট আর শপিং করতে ঠিক করা হলো বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স। যাবো সবাই!

স্মৃতিঃ আরে ভালোই হবে, অপরিচিতার সাথে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারবে। ও ওখানের পাশের এলাকায় থাকে!

ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ভেঙচি কেটে মুচকি হাসি দিল। আমি আবার লজ্জা পেলাম।

স্মৃতিঃ কিন্তু তার নাম্বারতো নাই কারো কাছে!

ভাবিঃ যার কাছে থাকা দরকার তার কাছে থাকলেই চলবে! চিন্তা করা লাগবেনা!

স্মৃতিঃ মানে!

ভাবিঃ নাম্বার পেয়ে যাবি। চিন্তা নিস না!

মিলি আর রিনি আন্টি রুম থেকে চলে গেলো।

স্মৃতি আপুঃ তোর কাছে নাম্বার থাকলে ভালোই হলো। যা করেছে আমাদের জন্য অপরিচিতা আসলে তাকেও একটা গিফট দেয়া দরকার৷ কি বলিস!

ভাবিঃ হ্যাঁ অবশ্যই! কি বলো বাবু, কি দেয়া যায় অপ…রিচিতা…..কে! ( অপরিচিতা শব্দ ভাবি এমন ভাবে নিল যেন আমাকে ঠোক মারার জন্য বলছে। )

সেইদিনের বাকিটা সাধারণই কাটলো৷ ভাবির ইচ্ছে ছিলোনা তাই রাতে কিছু হলোনা। তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। ভাবিকে জোর বা অনস্বীকার্যতে কাছে পাওয়া আমার পছন্দমতো নয়। তাই জড়িয়ে ধরে ঘুমানোটাই আমি বেশি পছন্দ করতাম। পরের দিনটাও পুরোটা আমি স্মৃতি আপুর কাছেই ছিলাম খেলতে গিয়ে। আপু খেলতে অনেক পছন্দ করে। এই দুই দিনে আমার সাথে স্মৃতি আপুর ঘন বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। একদম ঘরের ভাইবোনের মতো সম্পর্ক। রিনি আন্টিও অনেক ভালো। তিনিও অনেক আদর করেছেন। মজার মজার রেসিপি তৈরি করে খাইয়েছেন। তিনিও খুব মিশুক।