কর্পোরেট জগৎ – নবম পর্ব

This story is part of the কর্পোরেট জগৎ series

    কর্পোরেট জগৎ
    —————————

    ===
    ফাঁদ
    ===

    সকাল বেলায় উঠে মাথাটা একটু ঝিম ধরে ছিল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অফিসের দিকে রওনা হলাম। ফ্লোরে ঢুকার মুখে সায়মা আপুর সাথে দেখা। সাদা ঢোলা কুর্তির সাথে চুড়িদার পড়েছে আজকে। দুধগুলো ওড়না দিয়ে ঢেকে মাথায় হিজাবের মতো করে দিয়েছে। খানকি। মনে মনে গালি দিলাম।
    -“হ্যালো অয়ন!” বলে পাশ দিয়ে চলে গেল। রেন্ডি মাগীটা যেন কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব করলো।
    -” হাই সায়মা আপু।ভাবলেশহীন উত্তর দিলাম আমি।

    আমার ডেস্কে গিয়ে দেখি ঋতু আপুর ইমেইল। ওনার কথা মতো রুমন ভাইয়ের সব হাঁড়ির খবর লিখে প্রমান সহ ওনাকে ইমেইল করলাম। বিস্তারিত লিখলাম কিভাবে আমাকে দিয়ে পুরোনো ডেটা সরিয়ে ফেলেছে। ব্যাকআপ থেকে ডেটা নিয়ে সব বিস্তারিত অ্যানালাইসিস করে দেখলাম। সাথে পুরোনো ইমেল থেকে রুমন ভাই আর জুয়েল ভাইএর সব কীর্তিকলাপ পয়েন্ট আকারে লিখে বিকালের মধ্যে ইমেইল করে দিলাম। ঋতু আপু শুধুওকে, নোটেডলিখে রিপ্লাই দিলেন। আমাদের সিইও সেই ইমেইলের কপিতে ছিলেন। মনটা ভালো নাই। ফারিয়ার সাথেও আজকে আর কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। কিন্তু ফারিয়াই টেক্সট করলো,
    -“কই? ব্যস্ত?”
    -“নাহ, একটা কাজ শেষ করলাম মাত্র, বাসায় চলে যাব। টায়ার্ড।
    -“মন খারাপ?”
    -“কিছুটা, ভাল্লাগছেনা কিছুই।
    -“তুমি বের হও, ক্রিমসন কাপে গিয়ে বসো, আমি আসছি।
    -“তোমার কাজ নেই?”
    -“শেষ করে দিব এখনই। তুমি যাও, ১৫ মিনিটের মধ্যে আমি আসছি।
    -“হুমম।
    -“হুমম না, এখনই বের হও।
    -“আচ্ছা।

    চিন্তা করে দেখলাম, ফারিয়াকে আমার বিপদের কথাটা শেয়ার করবো। আসলে কোনো কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না। চাকরিটা থাকে কিনা বুঝতে পারছি না। এর উপর থানা পুলিশের ভয় নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে, ভাবতেই নিজের মধ্যে একটা ভয় কাজ করতে লাগলো। ক্রিমসন কাপে গিয়ে ভেতরের দিকে একটা টেবিলে বসলাম। কফিশপটা বিকালে এখন প্রায় খালি। সন্ধ্যার পর লোকজন আসে এখানে বেশি। প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ফারিয়া এলো। হলুদ রংয়ের আঁটসাঁট মিডিয়াম কামিজের সাথে ঢেউ ঢেউ খেলানো ঢোলা পাঞ্জাবী স্যালোয়ার। হালকা ম্যাজেন্টা জর্জেটের ওড়নাটা গলার কাছে তুলে রেখেছে। উন্মুক্ত হয়ে থাকা সুউচ্চ স্তনযুগলের থেকে ওর পাছার ঢেউটা দেখতে বেশি ভালো লাগছে। আমার দিকে মিটিমিটি হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে। মেয়েটাকে দেখে হঠাৎ ওর প্রেমে পড়ে গেলাম। জানিনা ফারিয়া আমাকে ওর মন থেকে চায় কিনা।

    ফারিয়া টেবিলে ব্যাগ রেখে বসতে বসতে বললো,
    -“কি ব্যাপার? তোমার চোখ মুখ এতো শুকনা আর মনমরা দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে বলোতো, শুনি। আমার ঠিক পাশের চেয়ারটা টেনে বসলো। ওর শরীর থেকে গুচি পারফিউমের একটা মিষ্টি ফুলের কড়া সুঘ্রাণ আসছে।
    -“এমনি, কিছুনা।
    -“কিছুনা মানে কি? আমি তো বুঝতে পারছি কিছু একটা।
    -“আমাকে একটা কথা বলবে?” ওর বাম হাতটা টেনে নিলাম আমার দুই হাতের মাঝে। বাচ্চাদের মতো তুলতুলে নরম হাত।
    -“কি হয়েছে তোমার অয়ন, আমাকে বলোতো। আরেক হাত দিয়ে আমার দুই হাত চেপে ধরলো।
    -“তুমি কি আমাকে ভালোবাসবে?” ওর চোখে চোখ রেখে বললাম আমি।
    -“আরে ভ্যামনা, তোমাকে তো আমি ভালোবাসিই। শুধু তুমি কবে মুখ ফুটে বলো সেই অপেক্ষাতেই ছিলাম। আই লাভ ইউ অয়ন।আশে পাশে দেখে নিয়ে আমার ঠোঁটে ওর জিভ ছুঁইয়ে একটা ফ্রেঞ্চ কিস দিল।
    -“আমি তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছি ফারিয়া। আই লাভ ইউ।
    -“আই লাভ ইউ টু! অয়ন অ্যান্ড কুট্টুস সোনা!” খিল খিল করে হেসে দিল ফারিয়া।

    আমার মাথায় দ্রুত চিন্তা চলতে লাগলো। ফারিয়ার সাথে প্রেমের অভিনয় করে হলেও আমাকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। ফারিয়াকে দিয়ে আমি আমার শেষ রক্ষা করতে চাইলাম,
    -“আমাকে একজন একটা বিপদে ফেলে দিয়েছে।
    -“কে? কি হয়েছে খুলে বলোতো।ফারিয়া হঠাৎ সিরিয়াস হয়ে গেলো।
    -“বিপদটা এমন একটা বিপদ, যেখানে আমার জেলও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেটা কি তোমাকে বলতে পারবো না। তুমি কি আমাকে একটু আঙ্কেলের সাথে কথা বলিয়ে দিতে পারবে?”
    -“আচ্ছা, কি হয়েছে না বললে আমি বাপিকে কি বলবো? আর কিসের জেল ফেলের কথা বলছো?”
    -“আমাকে ফাঁসিয়েছে। একটা ট্র্যাপে ফেলে দিয়েছে। সত্যি বলছি! আমার কোনো দোষ নেই। আমাকে দাবার ঘুঁটি বানিয়ে একজন কার্য সিদ্ধি করে নিচ্ছে। কিন্তু ব্ল্যাকমেলটা সারা জীবন তাড়িয়ে বেড়াবে আমাকে। আমি এর থেকে উদ্ধার পেতে চাই।এক নিঃস্বাসে কথাগুলো বলে ফেললাম আমি।

    ফারিয়া কিছুক্ষন টেবিলের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
    -“বাপি যদি তোমাকে বাঁচাতে পারে, আমি অবশ্যই বাপিকে বলবো। কিন্তু কি হয়েছে আমাকে না বললে আমি বাপিকে বলবোটা কি? আমাকে অন্ততঃ বলো!”
    -“ফারিয়া, ঋতু আপু আমাকে একটা ট্র্যাপে ফেলেছে।
    -“ঋতু আপু? আমাদের এইচ আর হেড? কি ট্র্যাপ?”
    -“হুমম। উনি রুমন ভাই আর জুয়েল ভাইএর পিছনে লেগেছে। আমাকে ওনাদের সাথে একসাথে দোষী করতে চাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করো ফারিয়া আমি নিজে কিছুই করিনি। ওনাদের বড় মানুষদের গেমের মাঝে আমাকে প্যাঁচে ফেলে দিয়েছে। চাকরি তো যাবেই, সাথে জেল হতে পারে, টাকা পয়সার মামলা।সায়মা আপুর বিষয়টা এড়িয়ে গেলাম।
    -“ওকে, তুমি একদম চিন্তা কোরোনা, আমি বাপিকে ম্যানেজ করছি। ঋতু আপুকে সাইজ করতে হবে, এই তো?”
    -“সাইজ না, ওনার উইক পয়েন্ট খুঁজে বের করে দিতে হবে। ওনার কাছে আমার বিরুদ্ধে কিছু এভিডেন্স আছে। তুমি আংকেলকে শুধু বলবা, ওনার অনলাইন একাউন্টে আমার একটা ফাইল আছে, সেটা মুছে ফেলতে হবে।
    -“তুমি জানো সেটা কোথায় আছে?”
    -“হুমম, ফাইলটার লিংক আমার কাছে আছে। ড্রপ বক্সের একটা ফাইল।
    -“ওকে, তুমি একদম চিন্তা করোনা তো। আমি দেখছি। আমার অয়ন সোনাটার মুখটা কেমন শুকিয়ে রেখেছে! দেখেই মায়া লাগছে।গালে একটা চুমু দিয়ে বললো ফারিয়া।

    টিং করে আমার ফোনে একটা টেক্সট আসলো। ঋতু আপু। ধানমন্ডির একটা ঠিকানা দিয়েছে, এখুনি যেতে বলছে। লাগলে গাড়ি পাঠাবেন। আমি উত্তর দিলাম যে, গাড়ি লাগবে না, আসছি। আমি ফারিয়াকে বললাম,
    -“আমাকে এখন ধানমন্ডি যেতে হবে।
    -“ধানমন্ডি কই যাবা?”
    -“ঋতু আপু একটা কাজের জন্য ডেকেছেন।
    -“অফিস আওয়ার এর পরে আবার কি কাজ?”
    -“ফারিয়া, আমি অস্থির হয়ে যাচ্ছি। উনি আমাকে যখন তখন কাজ দিচ্ছেন। আমাকে মুখ বুঝে করে যেতে হচ্ছে। উনি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন।ওকে আর বললাম না আমাকে উনি জিগালো বানিয়েছেন।
    -“হুমম। তোমার তো তাহলে ঠেলা বের হয়ে যাচ্ছে। ওকে, যাও।আমার ঠোঁটে চুমু এঁকে দিয়ে বললো।

    (চলবে…)