অধ্যায় ১: ট্রেনের জানলার ধারে:
রাত তখন গড়িয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ বঙ্গের এক অজ পল্লী থেকে কলকাতার দিকে গুঁড়িগুঁড়ি চলেছে লোকাল ট্রেন। জানালার পাশের কাঠের বেঞ্চিতে বসে আছে মৃত্তিকা—ফাটা শাড়ির আঁচলে মোড়া, মুখে নিঃশেষ সিঁদুর, চোখে বিষাদ জমাট। তার শরীরের উপরের অংশটা কিছুটা ঝুঁকে পড়ে আছে, যেন সে নিজের ভিতরে গুটিয়ে যেতে চাইছে।
তার কোলে নেই সেই শিশুটি, যে এই শরীরের দুধের দাবি নিয়ে জন্মেছিল।
তিনদিন আগেই, নদীর জলোচ্ছ্বাসে হারিয়েছে স্বামী—মাছ ধরতে গিয়ে আর ফেরা হয়নি।
তারপর… দু’দিনও হয়নি, সদ্যোজাত পুত্র শিশুটিও নিঃশব্দে চলে গেছে ঠান্ডা রাতে—না বুকের দুধ খেয়েছে, না কোনো নাম রেখেছে কেউ।
তবু, মৃত্তিকার শরীর তা মানতে পারেনি।
তার বুক ফুলে উঠেছে দুধে—অপরিবাহিত, আটকে থাকা, যন্ত্রণাদায়ক এক উপচানো মাতৃত্বে।
সে জানে, লোকেরা তাকাচ্ছে তার বুকে পড়া স্যাঁতস্যাঁতে দাগের দিকে। লজ্জা, দুঃখ, রাগ—সব একসাথে খেলে যাচ্ছে তার চোখের পাতায়।
সামনের সিটে বসেছিল একজন ছেলেটি—ময়লা জিন্স, পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল, কাঁধে পুরনো ব্যাগ। নাম আদর। বছর কুড়ির মতো বয়স। শান্ত চোখে মৃত্তিকাকে লক্ষ করছিলো।
হঠাৎ এক স্টেশনে এসে ট্রেন দাঁড়াতেই মৃত্তিকার মাথা হেলে পড়ল। গলার নিচটা ঘামে ভিজে আছে, ঠোঁট শুকনো, আর শরীর ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।
ছেলেটি ঝাঁপিয়ে ধরল।
চারপাশের লোকজন তাকিয়ে, কৌতূহলে ভরা। কিন্তু আদরের চোখে ছিলো কিছু আলাদা—ভয় না, করুণা না, বরং যেন কোনো পুরনো ক্ষতের প্রতি শ্রদ্ধা।
একটা ছোট্ট স্টেশনের কাছের বিশ্রামাগারে তারা আশ্রয় নিল।
রাত তখন গভীর। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ, দূরে কাঁকড়া ডাকে। মৃত্তিকা বিছানায় আধা অচেতন। তার ভেজা বুকে দাগ ছড়িয়ে পড়ছে। বুকটা ফুলে উঠেছে—না খাওয়ানো দুধ জমে গেছে, ব্যথায় চোখ দিয়ে জল পড়ছে।
সে ফিসফিস করে বলে—
“ও বেরোচ্ছে… দুধ জমে গেছে… ব্যথা করছে…”
আদর জানে না কী করা উচিত।
সে এক মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয়।
“দিদি… আপনি যদি চান… আমি সাহায্য করতে পারি?”
মৃত্তিকা কিছু বলে না। তার চোখ বন্ধ, মুখ ফিরিয়ে নেয়।
আদর ধীরে ধীরে তার শাড়ির আঁচল সরায়। তার বুকে হাত রাখে না, কিন্তু ঠোঁট রাখে—নরম, ধীরে, সম্মানভরা। যেন কোনো প্রাচীন পূজার মতো।
প্রথম চোষায় মৃত্তিকা কেঁপে ওঠে। দ্বিতীয়টায় তার ঠোঁট থেকে চাপা এক শব্দ বেরিয়ে আসে—দুঃখ আর পরিত্রাণের মাঝামাঝি।
তার হাত চলে যায় ছেলেটার মাথায়। ঠেলে দেয় না। বরং চেপে রাখে।
সে রাতে আর কিছু হয়নি। কিন্তু সকালে, মৃত্তিকা চুপচাপ বলেছিল—
“ভাই ! তুমি থেকো , আমার সুস্থ হয়ে ওঠে অবধি …”
অধ্যায় ২: প্রথম স্পর্শ
বাইরে ঝরছে ভারী বৃষ্টি। পুরোনো লজের টিনের ছাদে শব্দগুলো একটানা কাঁদতে থাকা নদীর মতো। ঘরের বাতি কাঁপছে, আর মৃত্তিকা মেঝের বিছানায় শুয়ে আছে, জ্বরজ্বালা শরীর তার নিঃশব্দে লড়ছে।
বুকের কাছে তার হাত—দুধে ভরা, ভারি, যেন একটা পাথর বয়ে বেড়াচ্ছে। তার চোখ বুজে থাকলেও চোখের কোনা থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।
আদর মেঝেতে বসে। ঠোঁট কামড়ে চুপচাপ বসে আছে। এই কয়েক ঘন্টায় সে অনেক কিছু বুঝে ফেলেছে। মৃত্তিকা শুধু দুধভরা শরীর নয়—সে এক বন্ধ দরজা, যেটা খুললে সাঁতার কাটা যায় স্মৃতি, যন্ত্রণা, আর কামনার অচেনা জলে।
সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।
“আপনার গা কি খুব জ্বলছে?”
একটা কাঁপা, মৃদু প্রশ্ন।
মৃত্তিকা চোখ মেলল না। শুধু বলল,
“বুকটা ব্যথা করছে… ভেতরে সব আটকে আছে…”
আদর একটা কাপড় ভিজিয়ে এনে তার কপালে রাখল। তারপর বসে রইল তার পাশে। কিছু বলল না। শুধু তার নিঃশ্বাস শুনল।
মৃত্তিকা ধীরে ফিসফিস করে বলে উঠল—
“ও খেতে পারেনি… এক ফোঁটাও না…”
তার কণ্ঠে গলিত দুধের মত নরম দুঃখ।
আদর চুপ করে।
তারপর হঠাৎ যেন কিছু একটার অনুমতি চেয়ে নিয়ে, সে ধীরে ধীরে তার হাত রাখে মৃত্তিকার বুকের ওপর—not জোরে, একটুও নয়। এমনভাবে, যেন কোনো পবিত্র জিনিস স্পর্শ করছে।
মৃত্তিকার দেহ যেন জমে যায়। সে চোখ খোলে না, কিন্তু ঠোঁট কাপতে থাকে।
আদর ধীরে ধীরে মুখ নামিয়ে আনে। তার ঠোঁট ছোঁয় সেই ফুলে ওঠা স্তনে, যে জায়গাটায় দুধ জমে রয়েছে। চোষে সে, নরম করে, ধীরে… যেন ভাঙা পাত্র থেকে দুধ তুলে নিচ্ছে।
মৃত্তিকার গলা দিয়ে একটা শব্দ বের হয়। চাপা, দীর্ঘ, ভিতর থেকে আসা।
তাকে ছুঁয়ে দেওয়া হচ্ছে, এমনভাবে, যেন সে আবার জন্ম নিচ্ছে। যেন সেই দুধ এখন কারো কাজে লাগছে। যেন সে এখনো নারী—এখনো কামনার যোগ্য, ভালোবাসার উপযুক্ত।
পনেরো মিনিট কেটে যায়। বাতি নিভে যায় হঠাৎ। ঘরে শুধুই নিঃশ্বাসের শব্দ। আদর ধীরে ধীরে উঠে বসে।
মৃত্তিকা তার হাত ধরে ফেলে। ঠোঁটে কেঁপে ওঠা এক বাক্য:
“ভয় পেও না… আমি দুধ দিয়ে বাঁচতে চাই…”
সে রাতে, তারা একে অপরের পাশে ঘুমিয়ে পড়ে। কোনো যৌনতা ছিল না। কিন্তু তাদের দেহের মাঝখানে গড়ে ওঠে একটা প্রাচীন চুক্তি—যেখানে দুজনেই জানে, পরের স্পর্শ… আর শুধুই চিকিৎসা হবে না।
সেটা হবে কামনা।
স্মৃতি।
আরো গভীর ভালোবাসা।
অধ্যায় ৩: শরীরের ভাষা
“যে কথা মুখে বলা যায় না, তা কখনো শরীর বলে ফেলে। আবার, যা শরীর বলে—তা কোনো ভাষার মধ্যেও ধরা পড়ে না।”
রাত পেরিয়ে সকাল আসে। কিন্তু সেই ঘরের ভেতরে সময় যেন থেমে থাকে। টিনের ছাদে বৃষ্টির শব্দ এখন আর ভয়াবহ নয়—বরং ছন্দময়, শান্ত।
মৃত্তিকা জেগে ওঠে।
আলো এসে পড়ছে মুখে। তার শরীরটা হালকা। বুকের যন্ত্রণা নেই। বুকে হাত রাখে—নরম, কিন্তু খালি। এক ফোঁটাও নেই আর।
তার ঠোঁটে একটা হাসি ফুটে ওঠে—অনিচ্ছায়, অদ্ভুতভাবে।
“শেষমেশ কেউ দুধ খেল…”
চোখের কোণে একফোঁটা জল।
ঘরের কোণে বসে আদর তাকিয়ে আছে তার দিকে। চুলগুলো এলোমেলো, চোখে ঘুম নেই, কিন্তু মুখে শান্তি।
“আপনার জ্বর নেই আর,” সে ধীরে বলে।
“আপনি বেঁচে আছেন…”
মৃত্তিকা উঠে বসে, একটুও না লজ্জা পেয়ে। তার বুক খালি, ভেজা শাড়ির ভিতরেও শোভা পাচ্ছে নারীত্বের আত্মবিশ্বাস।
তারা চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। চোখের ভেতর জমে থাকা শব্দ ছাড়া, সব কিছু বলা হয়ে যায়।
আদর ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসে।
“আপনার ঠোঁট… খুব শুকিয়ে আছে,” সে বলে।
মৃত্তিকা প্রথমে চমকে ওঠে। কিন্তু কিছু বলে না। চুপ করে বসে থাকে।
আদর তার পাশে বসে, খুব ধীরে হাত বাড়িয়ে দেয়। মুখের কাছে আসে… মৃত্তিকার ঠোঁট ছুঁয়ে যায় তার ঠোঁট। প্রথম চুমু।
তেমন নাটকীয় কিছু নয়—কিন্তু ভেতরটা কাঁপিয়ে দেওয়া স্পর্শ।
নতুন নয়, অজানা নয়, কিন্তু… দীর্ঘদিন পর।
মৃত্তিকার শরীর সাড়া দেয়।
তার হাত চলে যায় আদরের ঘাড়ে। সে চায়… স্পর্শ, উষ্ণতা, পূর্ণতা।
চুমুটা গভীর হয়। দীর্ঘ হয়।
আদরের হাত ধীরে ধীরে তার পিঠে, কোমরে, তারপর… বুকের ওপরে।
মৃত্তিকা থামে না। সে এবার নিজে তার শাড়ির আঁচল সরায়।
এই প্রথম বার, সে নিজে তার শরীরকে তুলে দেয় কারো কাছে।
সেই বিকেলে, শরীর আর আত্মার মাঝখানে এক সেতু তৈরি হয়।
মৃত্তিকার কামনা—শুধু যৌনতা নয়, বরং পুনর্জন্ম।
আদরের ক্ষুধা—শুধু শরীর নয়, বরং আশ্রয়।
তারা একে অপরকে গিলে খায়, ধীরে, একাধিকবার।
ঘামের গন্ধ, স্তনের দুধ, ঠোঁটের কাঁপুনি—সব একসাথে।
একটা সময়ে, মৃত্তিকা বলে উঠল—
“এটা কি পাপ?”
আদর তার কানে ফিসফিস করে—
“যে কামনায় জীবন বাঁচে… সেটাই তো ঈশ্বর।”