নতুন জীবন – ৭৪

This story is part of the নতুন জীবন series

    সাগ্নিকের সাথে কথা বলতে বলতে পাওলা ভাবনার অতলে গহ্বরে তলিয়ে গেলো। কথাগুলো মিথ্যে নয় একদম। মাতালেরা মাতাল সঙ্গ পছন্দ করে। নিজের বাবাকে দেখেছিলো সে, যখন তার বাবা মদ ধরলো, তখন থেকে তার বন্ধু-বান্ধব পালটে গিয়েছিলো। বাপ্পা তাকে মাঝে মাঝেই ভীষণ জোরাজুরি করে ড্রিংক করার জন্য, যা সে তৎক্ষনাৎ নাকচ করে দেয়।

    আর নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ নিয়ে সাগ্নিক যেটা বললো, সেটাও তো বাস্তব। আজ বাজারে কোনো সব্জীর দাম বাড়লে আমরা যতটা গসিপ করি, বা পাড়ায় কেউ ভালো রেজাল্ট করলে আমরা যতটা গসিপ করি, বা কেউ অসুস্থ হলে আমরা যতটা গসিপ করি, তার চেয়ে বেশী গসিপ করি কারও বর/বউ পালালে বা কারও গোপন পরকিয়ার খবর সামনে আসলে। কারণ সেটা করে আমরা আনন্দ পাই, একটা অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করি সেই টপিকগুলোর প্রতি। কারণ সেগুলো বেশ নিষিদ্ধ জিনিস। আজ বাপ্পাও হয়তো রিতুর কাছে সেই নিষিদ্ধতার টানেই যাচ্ছে। এতোদিন পাওলা রিমিকার বাড়িতে ছিলো। রিমিকার কর্মজীবনের তুলনায় রিমিকার সপ্তাহান্তের সেক্স লাইফ নিয়ে পাওলা বেশী ইন্টারেস্টেড ছিলো। কারণ সেটা নিষিদ্ধ জিনিস। রিমিকার কথা মনে পরতে পাওলা একটু অশান্ত হয়ে উঠলো, কারণ রিমিকা সাগ্নিককে নিয়ে বেশ থ্রিলড আর সেই সাগ্নিক এখন রাত দুটো নাগাদ তার সামনে বসে আছে। তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে। কিন্তু কেনো দিচ্ছে? শুধুই কি সাগ্নিক কেয়ারিং বলে? নাকি এর পেছনে সাগ্নিকের নিষিদ্ধ উদ্দেশ্য রয়েছে? এই যে সাগ্নিক বললো সে রিতুর চেয়ে শতগুণ বেশী হট, সেটা কি সাগ্নিক ফিল করে? সাগ্নিক কি তাকে হট অ্যান্ড সেক্সি ভাবে? নাকি শুধুই আনুগত্য? একটা ব্যাপারে তো পাওলা নিশ্চিত যে সাগ্নিক ভীষণ সক্ষম একজন পুরুষ। নইলে বহ্নিতা এতোটা উত্তাল হতো না সাগ্নিকের জন্য। আর রিমিকাও সাগ্নিকের ব্যাপারে ভীষণ কনফিডেন্ট। না চাইলেও পাওলার শরীর যেন হঠাৎ একটু কেমন কেমন করতে লাগলো। প্রথমবার, জীবনে প্রথমবার হঠাৎ পাওলার বাপ্পা ছাড়া অন্য পুরুষের জন্য হঠাৎ যেন মনের মধ্যে একটু দুর্বলতা তৈরী হলো। পাটনা যাবার সময় ঘুমের ঘোরে সাগ্নিকের বুকে মাথা চলে গিয়েছিল। এক অদ্ভুত শান্তি আর নিশ্চয়তা অনুভব করেছিলো সেদিন কেন জানি।
    সাগ্নিক তার জন্য রিস্ক নিয়ে প্রমাণ জোগাড় করেছে বাপ্পাদার বিরুদ্ধে। কেনো? এসব প্রশ্নের পাওলা কোনো উত্তর খুঁজে পায় না। মন অশান্ত হয়ে ওঠে পাওলার। মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবার হোয়াটসঅ্যাপটা খোলে। সামনেই বাপ্পার ভিডিওটা। কি উত্তাল যৌনতায় মগ্ন বাপ্পা। উপভোগ যে করছে সে, তা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে। এতোকাল ধরে এতো ভালোবেসে আসার পরেও শুধুমাত্র শরীরের জন্য বাপ্পা তার সাথে এরকম করবে এটা ভাবেনি কোনোদিন পাওলা। এই তো তার চোখের সামনে নগ্ন রিতু। কোনো পুরুষ মানুষের প্রশংসার চেয়েও যেটা বেশী ইম্পর্ট্যান্ট তা হলো পাওলা নিজেই বুঝতে পারে রিতুর চেয়ে তার শারীরিক গঠন অনেক ভালো। অথচ……
    রাস্তাঘাটে পুরুষদের লোভী দৃষ্টি কি সে পায় না? পায়! কিন্তু পাওলা সেগুলো পাত্তা দেয় না। মনের মধ্যে পাপী চিন্তাকে কখনও প্রশ্রয় দেয়নি সে।

    সাগ্নিক সিঙ্গেল সোফাটায় বসে হেলান দিয়ে একমনে মোবাইল খোঁচাচ্ছে। পাওলা গভীর চিন্তায় মগ্ন বুঝতে পেরেই হয়তো কথা বলছে না। সাগ্নিককে দেখে অবাক হয় পাওলা। এত্তো কেয়ারিং একটা ছেলে। যদিও বা শুধু শরীরের জন্যই সে এসব করে তবুও তো বলতে হবে শুধুমাত্র শরীরের জন্য কেউ এতো করে না বোধহয়। কিন্তু পাওলা এটাও জানে যে, সাগ্নিক তার ভীষণ অনুগত। নিজে থেকে কোনোদিন সাগ্নিক তাকে অ্যাপ্রোচ করবে না। সে ভীষণ শ্রদ্ধাও করে পাওলাকে, সেটা পাওলা যেমন জানে, তেমনই ফিলও করতে পারে। একমনে তাকিয়ে থাকে পাওলা সাগ্নিকের দিকে। যে ছেলেটা তার জন্য এতো কিছু করতে পারে, সে আর যাই হোক, ঠকাবে না কোনোদিন। অবশ্য বাপ্পাও একটা সময় এরকমই ছিলো। তাই সাগ্নিককে বিশ্বাস করতে ভয় হয়। আবার সাগ্নিক ছাড়া তার এখন পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই।

    “এরকম একটা ডেডিকেটেড পুরুষ তোর পাশে আছে, আর তুই বাপ্পাদার জন্য কাঁদিস? কামার্ত পুরুষেরা নষ্ট মেয়ে মানুষ পছন্দ করে বা তারা মেয়েদের নষ্ট করতে পছন্দ করে। বাপ্পাদা ওই মেয়েটার কাছে ওই জন্যই যায়। তার চেয়ে নিজে নষ্ট হয়ে যা। সেদিন দেখবি হয় বাপ্পাদা ফিরে আসবে, নয়তো একেবারে দূরে চলে যাবে। মাঝখানে ঝুলে থাকবি না। কেনো নিজের লাইফটাকে অন্যকে কন্ট্রোল করতে দিচ্ছিস পাওলা?” রিমিকার এই কথাগুলো ভীষণ কানের কাছে বাজছে আজ। সত্যিই তো বাপ্পার তাকে নিয়ে মাথাব্যথা নেই। অথচ সে সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য দিনরাত খেটে মরছে।
    পাওলা- তুমি বাড়ি ফিরবে না সাগ্নিক?
    সাগ্নিক- না। আজ রাত অনেক হয়েছে। তাছাড়া রাতে মানুষ বেশী অসুস্থ হয়। তোমার আবার ওরকম হলে কে নিয়ে যাবে ডাক্তারের কাছে?
    পাওলা- হবে না।
    সাগ্নিক- না হলেই ভালো। তবে হতেও তো পারে। ডাক্তারবাবু বলেছেন ২৪ ঘন্টা নজর রাখতে।
    পাওলা- তার মানে তুমি ২৪ ঘন্টা বসে থাকবে?
    সাগ্নিক- থাকতে হলে থাকতে হবে বৌদি।
    পাওলা- তুমি ভীষণ কেয়ারিং। তাহলে তুমি ঘুমিয়ে পরো এখানেই।
    সাগ্নিক- তুমি ঘুমাবে না?
    পাওলা- না। আজ আর ঘুম পাবে না।
    সাগ্নিক- তাহলে আমারও পাবে না।
    পাওলা- পাগলামো কোরো না।
    সাগ্নিক- পাগলামো করছি না তো৷ অসুস্থ মানুষকে রেখে কেয়ারটেকার ঘুমাতে পারে কখনও?
    পাওলা- ছি! নিজেকে কেয়ারটেকার বলছো কেনো? তুমি আমার সবকিছু এখন। স্বামীর দায়িত্ব, বন্ধুর দায়িত্ব সব তো তুমিই পালন করছো।
    সাগ্নিক- তাই তো কেয়ারটেকার।
    পাওলা- ছ্যাবলামো করছো। ঘুমাবে না যখন, তখন কফি করবো?
    সাগ্নিক- মন্দ হয় না। কিন্তু তোমার ঘুমানো উচিত। শরীরটা ভালো লাগতো।
    পাওলা- আসবে না। আজ আর আসবে না। আর রিমিকার বাড়িতে কত বিনিদ্র রাত্রি কাটিয়েছি। এখন অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।

    পাওলা উঠে গিয়ে কফি করতে লাগলো। সাগ্নিক তাকিয়ে রইলো পাওলার দিকে। কফি করে নিয়ে এসে পাওলা সোফায় বসলো।
    পাওলা- আমার সোফাটায় চলে এসো।
    সাগ্নিক বসে কাপটা নিলো।
    পাওলা- আড়চোখে কি দেখছিলে?
    সাগ্নিক- তোমাকে।
    পাওলা- কেনো?
    সাগ্নিক- দেখছিলাম এমনিই। কত ঝড় বয়ে যাচ্ছে তোমার ওপর দিয়ে। সব সহ্য করেও মিষ্টি করে হাসতে পারো তুমি। তুমি একটা ইন্সপিরেশন বৌদি।
    পাওলা- হা হা হা। তোষামোদ করছো?
    সাগ্নিক- স্বভাবে নেই। যা মন থেকে ফিল করি, তাই বলি।
    পাওলা- আচ্ছা আচ্ছা। তুমি বিয়ে করবে না?
    সাগ্নিক- ঠিকঠাক মেয়ে পেলে করবো।
    পাওলা- রিমিকা তোমাকে খুব পছন্দ করে।
    সাগ্নিক- কেনো?
    সাগ্নিক- যে কারণে বহ্নিতা পছন্দ করে।
    সাগ্নিক- ধ্যাৎ! তুমি রিমিকাকে বলেছো নাকি বহ্নিতা বৌদির কথা?
    পাওলা- বললে কি আর এমনিই এমনিই ছেড়ে দিতো?
    সাগ্নিক- আচ্ছা। তার মানে তোমার বান্ধবীরা যথেষ্টই ডেসপারেট সবাই।
    পাওলা- হ্যাঁ। তাই তো দেখছি।

    তারপর দু’জনে চুপচাপ কফি চুমুক দিতে লাগলো। পাওলা এক অদ্ভুত দোলাচলে ভুগছে। সে কি আস্তে আস্তে সাগ্নিককে বেশী প্রশ্রয় দিয়ে ফেলছে? বেশী ঢলে পরছে? ছি! ছি! সাগ্নিক ওকে কি ভাববে? কিন্তু রিমিকা বা বহ্নিতাই বা খারাপ কি করছে? রিমি না হয় একা থাকে। কিন্তু বহ্নি? সে জলজ্যান্ত হাসব্যান্ডকে ঠকিয়ে দিব্যি সংসার করছে। আর বাপ্পা? তার কথা তো যত কম বলা যায়, ততই মঙ্গল। পাওলা আড়চোখে সাগ্নিকের দিকে তাকাতে লাগলো। একদম পেটানো চেহারা সাগ্নিকের। বহ্নিতা একবার বলেছিলো, “সাগ্নিককে একবার নিলে আর কোনো পুরুষকে পছন্দ হবে না।” সত্যিই কি তাই? বাপ্পা যদি পরনারী সম্ভোগ করতে পারে, সে কেনো পারবে না? বাপ্পার একার ক্ষিদে আছে? তার নেই? বরং তারই বেশী। বাপ্পা এতো ভালো সেক্স করতো আর ভালোবাসতো বলেই না পাওলা নিজের বাবা-মা ছেড়ে এককথায় বাপ্পার সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো। তাহলে? বাপ্পা কি ভাবে? পাওলা বুড়ি হয়ে গিয়েছে? না কি পাওলার সেই ক্ষিদেটা নেই? নাকি পাওলা আর আগের মতো সুখ দিতে পারে না? কোনোটাই না। পাওলা এখনও পাওলাই আছে। বরং বলা যায় সব মধ্য তিরিশের মহিলাদের মতো সেও ভীষণ ক্ষুদার্ত। ভীষণ।
    পাওলা- সাগ্নিক।
    সাগ্নিক মোবাইল খোঁচাতে খোঁচাতে উত্তর দিলো, ‘হম, বলো’।
    পাওলা- কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
    সাগ্নিক মোবাইলটা রেখে ঘুরলো পাওলার দিকে, ‘একটা কেনো? হাজারটা বলো।’
    পাওলা- পাটনা যাবার সময় যখন বাসে ঘুমাচ্ছিলাম। তখন ঘুমের ঘোরে তোমার বুকে মাথা চলে গিয়েছিল।
    সাগ্নিক- হ্যাঁ। এখন তার জন্য গিলটি ফিল করছো, তাই তো?
    পাওলা- সে তো গিলটি ফিল হচ্ছিলোই। কিন্তু কি এক অদ্ভুত শান্তি পেয়েছিলাম জানো তো৷ একটা অ্যাসুরেন্স। যে তুমি সবসময় পাশে থাকবে।
    সাগ্নিক- আমি এমনিতেই পাশে আছি।

    পাওলা সাগ্নিকের দিকে সরে বসলো।
    পাওলা- তুমি হয়তো খারাপ পেতে পারো বা অন্য কিছু। কিন্তু আজ আমি সেই অ্যাসুরেন্সটা চাই। ভীষণ একা লাগছে আমার। একটু তোমার কাঁধে হেলান দিয়ে শুতে চাই।
    সাগ্নিক- ইটস ওকে বৌদি। তোমার যা ভালো লাগে। আমি তোমার পাশে সবসময় আছি।

    পাওলা সমস্ত দ্বিধা, লজ্জা ত্যাগ করে সাগ্নিকের কাঁধে মাথা দিলো। শুধু মাথা। আর কিছু না। সাগ্নিক নিজেও ইতস্তত করছে পাওলার শরীরে হাত দিতে। কিন্তু ইচ্ছে করছে। পাওলা মিনিট দুয়েক পর মাথাটা আরেকটু ঠেলে দিতে সাগ্নিক একটু কনফিডেন্স পেলো। ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে পাওলার কাঁধে রাখলো। পাওলা শিউরে উঠলো। কেঁপে উঠলো সারা শরীর।

    পাওলা- তোমার অসুবিধা হচ্ছে না তো সাগ্নিক?
    সাগ্নিক- না৷ তোমার কাঁধ খুব নরম।
    পাওলা- ধ্যাৎ! ইতর ছেলে একটা আমি বহ্নিতা নই, ঠিক আছে?
    সাগ্নিক- আচ্ছা।
    পাওলা- আহহহ! কি অদ্ভুত শান্ত তুমি।

    পাওলা সাহস করে, বাপ্পার ওপর প্রতিশোধ নিতে, লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে দুহাত বাড়িয়ে সাগ্নিকের গলা জড়িয়ে ধরলো। সাগ্নিকের গলা জড়িয়ে ধরতেই সাগ্নিকের ডান দিকে তার শরীরটা সেঁটে গেলো। তার নরম শরীর, ভরাট বুক সব সেঁটে গেলো সাগ্নিকের বুকের পাশে। সাগ্নিক তার হাত আস্তে আস্তে নামিয়ে দিলো কোমরের কাছে। পাওলা কেঁপে উঠলো আবার।
    সাগ্নিক- কি হলো?
    পাওলা- না কিছু না।
    সাগ্নিক- হাতটা সরাবো?
    পাওলা- না। ভালো লাগছে।

    সাগ্নিক একথা শুনে পেটের পাশটা খামচে ধরলো। পাওলা আরও চেপে ধরলো সাগ্নিককে। দু’জন ওভাবেই বসে রইলো অনেকক্ষণ। কারও মুখে কোনো কথা নেই। শুধু দুজন দু’জনের শরীরের উষ্ণতা উপভোগ করছে।
    সাগ্নিক- তোমার শরীর ভীষণ নরম বৌদি।
    পাওলা- ধ্যাৎ।
    সাগ্নিক- সত্যি বলছি।
    পাওলা- আর তুমি ভীষণ স্ট্রং।
    সাগ্নিক- থ্যাংক ইউ।
    পাওলা- বহ্নিতার থেকেও নরম?
    সাগ্নিক- হ্যাঁ।
    পাওলা- রিতুর চেয়েও?
    সাগ্নিক- সবার চেয়ে।
    পাওলা- অসভ্য।
    সাগ্নিক- আচ্ছা বাবা স্যরি।
    পাওলা- বহ্নিতা খুব মিস করে তোমাকে।
    সাগ্নিক- তাই? বলেছে তোমাকে?
    পাওলা- হ্যাঁ।
    সাগ্নিক- আর তুমি মিস করো না?
    পাওলা- করি। পার্টনার হিসেবে। তবে আজ থেকে তোমার কাঁধের শান্তিটাও মিস করবো।
    দু’জনে আবার চুপচাপ হয়ে গেলো।

    চলবে….

    কোনো অভাব, অভিযোগ, মতামত থাকলে [email protected] এই ঠিকানায় মেইল বা হ্যাংআউট বা গুগল চ্যাট করে জানাবেন।