এই কাহিনীর চরিত্র এবং ঘটনাবলী কাল্পনিক নয়; ঘোর বাস্তব। তাই প্রিয় পাঠক, নিজেকে সামলে পড়তে শুরু করবেন। এই ঘটনা কল্পনার জগতে নয়, ঘটেছে এবং এখনও ঘটছে খাস কলকাতার বুকে।
গল্পে যে সাবমিসিভ চরিত্রটি রয়েছে, সে আমার বন্ধু। তারই মুখ থেকে শোনা কথাগুলো আমি লিখছি গল্পের আকারে। আমি শুধু privacy এবং safety বজায় রাখতে চরিত্রগুলির নাম বদল করলাম। শুরু করছি…
২০২২ সাল, অগাস্ট মাস। জলপাইগুড়ি শহরের একটু দূরে ময়নাগুড়ি থেকে অয়ন কলকাতা শহরে এলো এক বুক স্বপ্ন নিয়ে। B.A. Honors in English literature; রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। তার ইচ্ছে, সে এই পড়াশোনা সেরে Mass Comm. পড়বে, সাংবাদিক হবে।
কলকাতায় এসে আপাতত একটা পিজি তে রুম ভাড়া নিল অয়ন, ওর বাবা এসে সব ঠিকঠাক করে গুছিয়ে দিয়ে ময়নাগুড়ি ফিরে গেলেন। শুরু হলো ক্লাস। অয়ন নিয়মিত ক্লাসে যায় আসে।
একটা ব্যাপার আগেও হতো ওর সাথে, ও নিজে খুব আমল দেয় নি। অয়নের নিজের হাইট ৫’৪”; শ্যামবর্ণ; মোটামুটি রোগা বলা চলে। ব্যাপারটা এই যে, বয়ঃসন্ধির সময় থেকে অয়ন লক্ষ্য করেছে ওর রাস্তাঘাটে মেয়ে এবং ছেলে উভয়কেই দেখতে ভালো লাগে; দ্যাখে ও। পরের দিকে আরো বুঝলো যদি ওর সামনে একটি দুর্দান্ত সেক্সি মেয়ে এবং একজন লম্বা চেহারার জিম করা সুঠামদেহ পুরুষ আসে তাহলে অয়ন এর দৃষ্টি মেয়েটিকে ছেড়ে ছেলেটিকেই দ্যাখে। বোঝে অয়ন। কিন্তু ময়নাগুড়ি মফঃস্বল। সেখানে LGBTQ এর কোনো আলো এখনও এসে পৌঁছোয়নি।
এই অয়নের জীবনটা কলকাতায় আসার পর আরো একটু রঙিন হলো, কলকাতায় পাড়ায় পাড়ায় জিম। রোজ সকালে ব্রেকফাস্ট করতে রাস্তার দোকানে গিয়ে অয়ন দেখে বড়ো বড়ো চেহারার ‘দাদা’রা সুবিশাল ছাতি, পেশীবহুল হাত, গাছের গুঁড়ির মতো চওড়া থাই আর বালিশের মতো বড়ো কিন্তু সুঠাম পাছা নিয়ে compression tshirt এবং Tights বা shorts পরে জিম আসে, ওর সামনে দিয়েই বাইক নিয়ে এসে থামে। ওর প্রায় মুখের সামনে দিয়ে পা তুলে বাইক থেকে নামে এবং জিমে ঢোকে। এদের দেখতেই সকাল সকাল অয়ন হাজির হয় পাড়ার ওই জিমের পাশের চায়ের দোকানটায়। এই চক্করে একটা ভালো জিনিস হলো এই যে অয়ন এর আর Breakfast বাদ পড়ে না! এদের চিন্তা করে করেই কী ও মাস্টারবেইট করে ? কী জানি!
যাই হোক, অয়ন রোজ ইউনিভার্সিটি যায়; ক্লাস করে। কয়েকজন নতুন বন্ধুও হয়েছে এরমধ্যেই। সবাই ওরই মতো কেউ মালদা কেউ মেদিনীপুর কেউবা বীরভুম থেকে এসেছে কলকাতায় পড়তে।
ওরা ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা দেয়, হাসে, গায়। ভালোই চলছিল। এরই মধ্যে একদিন কেউ এসে খবর দিলো সিনিয়র দাদা দিদিরা ইন্ট্রো নেবে, সবাইকে আজ দোতলার হলঘরে আসতে বলেছে ক্লাস শেষের পর। ওরা প্রথমটা একটু চমকালো, তারপর ভাবলো, এখানে তো র্যাগিং হয় না! জাস্ট ইন্ট্রো হবে।
ওরা বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো ক্লাস শেষ করে হলঘরে গিয়ে সীটে বসে পড়লো। কিছুক্ষণের অপেক্ষা। হঠাত একসময় বাইরের করিডর গমগম করে উঠলো কয়েকটা ভারি পুরুষ কন্ঠ ও একটু রিনরিনে মহিলা কন্ঠে; ঘরে সবাই চুপ। এরপর ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকে এলো সাতজন। চারটে ছেলে, দুটো মেয়ে। ওদের মধ্যে একজন এসেই রাজার মতো একটা চেয়ার টেনে ঘরের কোণে চুপচাপ গিয়ে বসলো; তার পরনে কালো জামা, ব্লু জিন্স, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। সিনিয়ররা ইন্ট্রো নেওয়া শুরু করার আগে নিজেদের পরিচয় দিয়েই শুরু করলো। সেই সূত্রেই সবাই জানলো ঐ চেয়ারে রাজার মতো বসা সিনিয়রের নাম, রুদ্র, রুদ্র সেন; M.A. শেষ করে M.Phil. শুরু করেছে।
ইন্ট্রো একটা মজার বিষয়, সিনিয়ররা মজা করে, লেগপুল করে, আস্তে আস্তে বন্ধু হয়ে যায়। পরে জুনিয়রদের বিপদ আপদে এই দাদা দিদিরাই সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। অন্তত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাইই হয়। অয়নদের ব্যাচের সবাই বেশ মজা পেতে থাকলো ইন্ট্রোতে। শুধু কেউ দেখলো না, অয়নের চোখ সরছে না; একজনকেই একদৃষ্টে দেখছে সে, ওই পায়ের ওপর পা তুলে বসা রুদ্র’দা কে। আসলে এতক্ষণ বলা হয়নি। রুদ্রর চেহারা যে কোনো গড় বাঙালী ছেলের কাছে ঈর্ষণীয়। আদপে বাঙালী হলেও ওর চেহারা দেখে প্রথম দেখায় অনেকেই পাঞ্জাবী বা হরিয়ানবি ভাবে। রুদ্র লম্বায় ৬ ফুট, ছোটবেলা থেকে ফুটবল, সাঁতার আর ষোলো বছর বয়স থেকে জিম, ওয়েইট ট্রেইনিং এর ফলে তার চেহারাটা ওদের চেয়েও অনেক তাগড়াই যাদের দেখতে অয়ন রোজ ব্রেকফাস্ট করতে যায় আজকাল।
অয়ন শুধু একদৃষ্টে দেখছে না, নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে রুদ্রকে কাছে পাওয়ার প্রার্থনা করছে। একটা আদিম প্রবৃত্তি ওকে গিলে খাচ্ছে, ও আর নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। ও দেখছে রুদ্রর হালকা কোঁকড়ানো চুল, গালের ওপর চাপা দাড়ি, ভীষণ মাস্কিউলার বুক আর হাত। ট্রাইসেপস যে কী ভয়ঙ্কর বানিয়েছে ছেলেটা! এই জামার হাতার ভেতর থেকেও বুঝিয়ে দিচ্ছে! অয়নের চোখ চলে যায় বুকের বোতাম খোলা রুদ্র’র জামায়, সেখান থেকে পৌরুষ ঠিকরে বেরোচ্ছে, দামাল, জেদী, ডমিন্যান্ট। চোখ নীচের দিকে নামায় অয়ন, তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা সুগঠিত পুরুষ দেহের লোয়ার বডি। এই ব্লু জিন্সটা যা ঢেকে রেখেছে তা অয়ন এর আজকাল রোজ রাতের ফ্যান্টাসির একটা আস্ত জগত। হ্যাঁ, আজকাল অয়ন একটা ফেক ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট খুলে বেশ কিছু male fitness model দের ফলো করে রেখেছে, তাদের আন্ডারওয়্যার পরে তোলা ছবি দেখলে অয়ন নিজেকে খুব কষ্টে সামলায়, কখনো বা সামলাতে না পেরে বাথরুমে যায়। অপেক্ষা করে সকাল হওয়ার, আর ফ্যান্টাসির জগতের পুরুষগুলোকে বাস্তবে সামনে দেখার। আজকাল কি একটু বদলে যাচ্ছে অয়ন? কই আগে তো এমন হতো না! আজকাল কোনো লম্বা চওড়া মাসকিউলার কাউকে দেখলে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়তে ইচ্ছে হয় কেন অয়নের? এটাকেই কি সাবমিসিভ নেচার বলে? ময়নাগুড়িই ভালো ছিল! যত গণ্ডগোল হলো কলকাতায় এসে। ওখানে বেশী করে আশেপাশে এমন দেখতে পাওয়া যেত না আর বেশীক্ষণ ফোন ঘাঁটলে মা এসে ধমক দিতো।
রুদ্র এতক্ষণ পায়ের ওপর এক পা তুলে বসে ছিল, হঠাত পা নামিয়ে দু পা ছড়িয়ে ফাঁক করে বসলো, আর অয়ন ততক্ষণে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে রুদ্র’র দুটো পুরুষালী এবং পেশীবহুল থাই। ইন্সটা মডেল দের ভিডিওতে অয়ন শিখেছে কোয়াডস, হ্যামস্ট্রিংস আর গ্লুটস মাসল এর নাম। রুদ্র’র এই মাসল গুলো যেন প্রকৃতি নিজে হাতে বানিয়েছে।
অয়ন দেখতে পেলো না, ওর দেখার কথাও নয় যে রুদ্র’ও অয়নকে দেখছে।
সেইদিন ইন্ট্রো শেষে ওরা বাড়ি ফিরলো। অয়নের ঘোর লেগেই আছে। বিকেলে পিজিতে ফেরার সময়ও পাড়ার ঐ জিমের সামনে দিয়েই ফিরলো অয়ন, তখনও ওই ছেলেরা জিমে ঢুকছে বেরোচ্ছে। কিন্তু অয়নের চেতনা, শরীর, মন সবকিছুকে একটা নাম দখল করে নিয়েছে এতক্ষণে, রুদ্র দা। বুকের ভেতরে হার্ট রেট অসম্ভব বেড়ে যাচ্ছে রুদ্র’দার কথা ভাবলে, বুঝলো অয়ন। ঠিক করে ফেললো কী করবে। ঘরে ফিরে ল্যাপটপ খুলেই ঐ ফেক ইন্সটা একাউন্টটা খুলে ফেললো সে, রুদ্রকে খুঁজে পেতে কষ্ট করতে হলো না। আর খুঁজে পেতেই অয়নের এতক্ষণের স্বপ্নের দুনিয়া বাস্তব রূপ নিলো। রুদ্র’র প্রোফাইল লক করা নেই! এবং, সে প্রায় রোজই ঐ মডেলদের মতোই জিমে ওয়ার্কআউট শেষে পোস্ট ওয়ার্কআউট ছবি দেয়। না, আন্ডারওয়্যার পরে ছবি দেয় না রুদ্র, তবে জিম শর্টস পরে ছবি তোলে, শুধু লেগ ডে তে শর্টস একটু ওপরে তুলে নেয়। মশগুল হয়ে দেখতে থাকে অয়ন, রুদ্র দা’র ঐ বটগাছের মতো থাই, ভয়ঙ্কর শক্তিশালী হাত আর বুক। আর অসম্ভব পুরুষালী পোজ দিয়ে তোলা ছবি। তার ভেতরে এক আদিম ইচ্ছে চাগাড় দিয়ে উপরে উঠতে থাকলো প্রস্রবন এর মতো…
পরদিনের ঘটনাগুলো ঘটলো একটু দ্রুত। ক্লাসে গিয়ে অয়ন আনমনে থাকে, ক্যান্টিনের আড্ডায় ওর আর সেভাবে মন নেই। বন্ধুরা বুঝতে পারে। আর এর কারণ হল অয়ন আজ কোথাও রুদ্র দা’কে দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু এই কথা যাকে তাকে বললে ভুল বুঝতে পারে। দিনকাল অন্যরকম, অয়ন ক্লাসের কাউকে জানতে দিতে চায় না তার মনের এইসব কথা, সবাই তাকে “গে” বলুক, চায় না অয়ন।
কিন্তু এই দামাল ইচ্ছেকেই বা চেপে রাখে কী করে?? অবশেষে একটা সাংঘাতিক কাণ্ড করে ফেললো সে। ক্যান্টিন থেকে বেরোনোর সময় সে দেখলো সেইদিনের ঐ সাতজন দাদা-দিদিদেরই তিনজন মাঠে গোল করে বসে আড্ডা দিচ্ছে। হঠাৎ সব ভুলে ধাঁ করে অয়ন গিয়ে হাজির হলো তাদের কাছে। ওদের একজন অয়নকে তাদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে যেতে দেখলো, বললো, “কী রে ভাই? তুই বি এ ফার্স্ট সেম না?”
অয়ন- হ্যাঁ দাদা।
সিনিয়র- কিছু হয়েছে নাকি? কিছু বলবি?
অয়ন- না, মানে। ওই আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম……
সিনিয়র- হ্যাঁ বাঁড়া যাচ্ছিলি তো কি?!
অয়ন- না দাদা, সরি।
সিনিয়র- আবাল নাকি তুই? কী বলতে এসেছিস ভুলে গেলি?
অয়ন- দাদা বলছিলাম যে, রুদ্র দা আসে নি? (প্রশ্নটা করে দিয়েই বুক ঢিপঢিপ শুরু হয়ে গেল অয়নের)
সিনিয়র- ও এই কথা! না রে, ও তো আমাদেরও সিনিয়র। এম ফিলের স্টুডেন্ট দের রোজ আসতে হয় না।
মনটা দমে গেলো অয়নের। কিছু কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বিদায় নিলো ওখান থেকে।
সেইদিন সন্ধ্যেয় এসে মনটা ছটফট করতে লাগলো তার। কিছুতেই স্বস্তি নেই। সেই ইন্সটা খুলে চলে গেল রুদ্রর প্রোফাইলে, নিজের বশে নেই ও আর। প্রায় ঘোরের মধ্যে এক এক করে সবকটা ছবিতে রিয়্যাক্ট দিতে থাকলো সে। কিছুক্ষণ এই করে সে বসে পড়লো বিছানায়।
টিং করে একটা শব্দে ঘুমটা ভাঙল আর সে বুঝলো ঐভাবেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল। শব্দটা এসেছে ল্যাপটপ থেকে। কিন্তু স্ক্রীনের দিকে তাকিয়েই অয়ন প্রায় অজ্ঞান! এ কী দেখছে সে!
ইন্সটা মেসেঞ্জারে একটা টেক্সট…আর সেটা পাঠিয়েছে… রুদ্র!!!
সবে শুরু করলাম। পাঠকদের প্রতিক্রিয়া পেলে পরের পার্ট দেবো। ধন্যবাদ।