বিরাজের জীবন কথা – ২৮

গত পর্বের পরে-

আমিঃ খুবই কিউট লাভ স্টোরি তোমাদের।

ভাবিঃ হুম আমি জানি!

কথাগুলো শুনতে শুনতে আমার বুকের ভেতর প্রচন্ড বোঝা বাঁধতে শুরু করলাে। নয়ন ভাইয়া আর আমার পরীর এত সুন্দর লাভ স্টোরি, এত সুন্দর লাইফ তাহলে কি আমি ধ্বংস করতে যাচ্ছি? যাই হোক, যতই ভালবাসি আমি তাকে, কিন্তু আমার আর ভাবির সম্পর্কতো অজাচার। নিষিদ্ধ সম্পর্ক আমাদের।

মুহুর্তের মধ্যেই আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে নিজেকে দোষ দিতে দিতে।

আমি ভাবিকে অবাক করে দিয়ে কাঁদতে লাগলাম। ভাবিও এই আচমকা কান্নার বৃষ্টিতে পুরো বেকুব হয়ে গেল। আমার চোখ দিয়ে গড়গড় করে বৃষ্টি নামছে, মন চাইছে জোরে জোরে চিৎকার করতে করতে কান্না করি।

ভাবিঃ কি হয়েছে, কি হয়েছে সোনা! কাঁদছো কেন?

আমার কান্নাই বন্ধ হচ্ছে না।

ভাবি আমার কোল থেকে নেমে আমাকে টেনে রুমে নিয়ে গেল। আমাকে বুকে নিয়ে মালশি জড়িয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলো। ভাবি ঠিক বুঝতে পারছেনা আমি কাঁদছি কেন!

ভাবি ধমক দিতেই আমার কান্না বন্ধ হয়ে গেলো। ” চুপ! একদম চুপ ”

ভাবিঃ কি হয়েছে আচমকা কান্নাকাটি কেন?

আমিঃ ভাবি আমরা অনেক বড় অপরাধ করছি!

ভাবিঃ আমরা অপরাধ করছি মানে! কি অপরাধ করছি আমরা?

” তোমাকে পাবার জন্য ভাইয়া কত কষ্ট করেছে, তোমাকে ভাইয়া তার জীবন থেকেও বেশি ভালবাসে। আর আমি তোমার সাথে….. না না সরি ভাবি আমার মনে হয় আমরা অনেক বড় ভুল করছি। আমি চাইনা আমার কারণে তোমার জীবনে কোন দুঃখের দিন আসুক। ”

ভাবি কোন কথা বলতে পারলোনা।

দুই মিনিট আকাশ পাতাল সব চুপ-চাপ।

ভাবিঃ তুমি সিওর তো?

আমিঃ হুম, আমি আগেই বলেছি আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমার শরীরকে না। আমি তোমার সাথে সাধারণ ভাবেও থাকতে পারবো। আমি আমার পরীকে এসবের জন্য হারাতে চাইনা।

ভাবিঃ আচ্ছা ঠিক আছে! উঠো যা হবার হয়ে গেছে, এবার তারাতারি কাপড় পরে নাও।

আমরা নিজ নিজ কাপড় পরে নিলাম। ভাবি আমাকে হাতে নিয়ে চুপচাপ স্মৃতি আপুর রুমে গেলো। গিয়ে আমাকে বিছানায় যেতে ইশারা করলো। তারপর লাইট অন করে স্মৃতিকে ঢেকে তুললো।

ভাবিঃ এই স্মৃতি উঠতো।

স্মৃতি ঘুমের ঘোরেঃ হ্যাঁ বল কি হয়েছে!

ভাবিঃ আরে উঠতো বাবু কান্না করছে।

স্মৃতি আপু উঠে আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো আমার চোখ মুখ ফুলে গেছে। আর চোখে পানিও আছে কিছু।

স্মৃতি আপুঃ কি হয়েছে বাবু, এতরাতে কান্না করছো কেন?

ভাবিঃ আরে দেখনা ওর আম্মুর জন্য কাঁদছে।

স্মৃতি আপু মোবাইলে সময় দেখে বললো- মিশু রাতের বাজে চারটা। কল করে কথা বলে দে। আমি এখন ঘুমাই প্লিজ।

ভাবিঃ আরে তুই ঘুমা আমি ছাদে গিয়ে কথা বলিয়ে আসি!

স্মৃতিঃ এতো রাতে ছাদে যেতে হবে কেন। বারান্দায় কথা বলে নে!

ভাবিঃ আমি তোকে জিজ্ঞেস করছি না, বলছি ছাদে যাচ্ছি।

স্মৃতিঃ বাইরে দিয়ে লক করে চলে যা।

ভাবি মোবাইল আর আমাকে হাতে নিয়ে ছাদে উঠে এলো। ছাদে গিয়ে ভিতর দিয়ে ছাদের গেইট লক করে দিল।

নিজেকে সামলিয়ে নিলো ভাবি। মোবাইলে কি জানি করলো। তারপর!

“এবার বলো কি হয়েছে? ”

” পরী, ভাইয়া আমাদের সম্পর্কে জানতে পারলে কত দুঃখ পাবে ভেবে দেখ!”

” তাতে তোমার কি? তোমার কাছে তোমার পরী আছে আর কি চাই? তোমার ভাইয়ার চিন্তা করা লাগবেনা। ওর চিন্তা তুমি কেন করছো? ”

“ঠিক আছে তুমি আছ আমার কাছে কিন্তু যদি আমার জন্য ভাইয়া আর তোমার জীবন নষ্ট হয়ে যায়? ”

“আর কিছু বলবে? ”

” মানে? ”

” অ্যাঃ তোমরা দুই ভাই মিলে আমাকে পাগল করে ছাড়বে। দুই পাগলের পাল্লায় পড়ে শেষ হয়ে যাবো। ” ভাবি অলমোস্ট মাথা গরম করে কথাটা বললো।

” এই নাও কথা বল ” ভাবি ফোন এগিয়ে দিল।

” কে? ”

” তোমার পুঞ্জনীয় নয়ন ভাইয়া ”

আমি পুরো অবাক। আসলেই ভাইয়া লাইনে….

আমি কাঁপা হাতে ফোনটা নিয়ে কানে লাগালাম।

” হ্যালো ভাইয়া ”

” কি হয়েছে বিরাজ? ”

” কই কিছু হয়নি তো ভাইয়া। ”

“তাহলে আমি শুনলাম যে তুই তোর পরীর সাথে ঝগড়া করছিস? ”

“নাঃ নাঃ আসলে তেমন কিছু না! ” আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম।

“তাহলে রাতের চারটা বাজে মিশু আমাকে মেসেজ করছে কেন তোর জন্য। তুই নাকি হুট করে কাঁদতে বসে গেলি?”

“ও… ও…. ভাইয়া আই…ম আই….ম সরি ভাইয়া.. আসলে…. আসলে আমি ভাবি….. ভাবি মানে… ইয়ে… ”

” জানি আমি! ”

” মা…..মানে? ”

“এত কিছু তোর জানা লাগবে না! তোর কাজ তোর ভাবিকে সময় দেয়া! এখনই গিয়ে ওকে সরি বলে ফেল! রাগ করলে কি করবি? মানাতে পারবি? খুব ভালবাসে তোকে তোর পরী! যা গিয়ে সরি বল! ফোন রাখি এখন ঠিক আছে। বায় ”

” বা…বায় ”

ভাইয়া কল কেটে দিলো। আমি ক্ষনিকের কথা গুলো ক্লিয়ার করার চেষ্টা করছি। সব মিলিয়ে কথা ক্লিয়ার, ভাইয়া সব জানে আমাদের সম্পর্কে আর এতে তার কোন সমস্যা নাই! তাদের জীবনে আমার জন্য খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে না।

আমি ভাবির দিকে তাকালাম। ভাবি এক কোনে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।

“স..সরি ভাবি, আমার ভুল হয়ে গেছে, আসলে তোমার জন্য ভয় করে তো তাই এমনটা হয়ে গেল।………………….. প্লিজ মাফ করে দাও!…. প্লিজ!”

ভাবি আমার দিকে ফিরে হাসিমুখে আমাকে বুকে টেনে নিলো-“এ জন্যই তোদের দুই ভাইকে আমি এত ভালবাসি”

ফাস্ট ফরওয়ার্ড- আমাকে বলা হলো অন্য কেউ যেন না জানে। শুধু আমি ভাবি আর ভাইয়া! আমরা নিচে এসে স্মৃতির সাথে ঘুমিয়ে পড়লাম। এভাবেই ঢাকা শহরে চতুর্থ দিন শেষ হলো।

এই পর্বের জন্য এতটুকুই। আমি জানি ছোট কিন্তু এইটাই শেষ ছোট। ডায়েরি থেকে মিলাতে গিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। তারপর থেকে আবার একটু বড় করেই দেয়া হবে। আর কিছু নির্দিষ্ট পর্বে আমি ভুল করে দুইজনের নাম লেখে দিয়েছি। তাই একটু সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। তবে যদি মনে হয় আপলোড করা যায় তাহলে সামনে আবার পাবলিশ করবো। তবে কমেন্ট করে ভালো পার্টটা লিখে দিও। বায়