কিছু না বলা কথাঃ দেহরক্ষী; পর্ব- ৩

আগের পর্ব

কানের কাছে আচমকা আসা নারী কন্ঠস্বরটি শুনে যেন কিছুটা চমকে উঠে রক্তিম। এরপর তড়িৎ বেগে চেয়ার থেকে উঠে হতচকিত অবস্থাতেই মাথা ঘুরিয়ে দেখে তাঁর কানের পাশে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। মেয়েটি যেন ইচ্ছে করেই কিছুটা দুষ্টুমির ভঙ্গীতে রক্তিমের কানের কাছে ঝুঁকে কথাটি বলেছিল; তবে রক্তিমকে অমনভাবে চমকে উঠে দাঁড়াতে দেখে সেও সোজা হয়ে দাঁড়ায়। রক্তিম দেখে মেয়েটি তাঁর কাজল টানা হরিণের মতন চোখ দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তারই দিকে। এর সাথে তাঁর লিপ্সিক রাঙা গোলাপী ঠোঁটে খেলা করছে একটি দুষ্টুমি মেশানো মিষ্টি হাঁসি। মেয়েটি যেন আচমকা রক্তিমকে পেছন থেকে চমকে দিয়ে বেশ মজা পেয়েছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি যে আর কেও না বরং তাঁর এবং বর্তমান সময়ে সকল ছেলেদের ছোকরাদের একমাত্র ক্রাশ বিখ্যাত হবু তারকা আহেলি সান্যাল, তা বিশ্বাস করতে কিছুটা সময় নেয় রক্তিম।

এতদিনের প্রতীক্ষার পর আজ আহেলিকে সামনা সামনি দেখতে পেয়ে যেন চোখ সরাতে পারে না সে। এতদিন সে তাঁকে মোবাইল আর টিভিতেই দেখে এসেছে, তবে আজ যেন মোবাইলের স্ক্রিন ফুরে সে এসে দাঁড়িয়েছে তাঁর সামনে। রক্তিম এক মুহূর্তের জন্য তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেনা। এতদিন টিভির স্ক্রিনে দেখা আহেলিকে আজ যেন সামনের থেকে দেখে আরও অবিশ্বাস্যরকম সুন্দরী লাগে রক্তিমের। আহেলির দিকে নিষ্ফল দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাঁর রুপের মোহে আবিষ্ট হতে পরছে, এমন রক্তিমের চোখের সামনে হাত হিলিয়ে আহেলি বলে ওঠে- “হ্যালো মিস্টার! ভয় পেয়েছিলেন বুঝি?” এই বলে মুখে হাত চাপা দিয়ে খিলখিলিয়ে হেঁসে ওঠে সেই উনিশ বছর বয়সী তরুণী।

মুখ হাত চাপা দিয়ে হেঁসে ওঠায় ঝুন ঝুন শব্দে বেজে ওঠে আহেলির ডান হাতের চুড়িগুলি। রক্তিম দেখে আহেলীর পরনে একটি সুন্দর জরীর কাজ করা ঘাগরা ও চোলির পোশাক। সোনালি বর্ণের সেই পোশাকটি যেন বেশ নিখুঁত রাজস্থানি ভঙ্গীতে পরেছে সে। এদিকে ব্লাউসের ন্যায়ে ছোট করে বানানো তার ঊর্ধাঙ্গের চলিটি যেন তাঁর সুডোল স্তনদুটিকে ধরে রাখতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে। পুরুষদের নজর বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করার জন্যই সে সেটিকে এমন বিশেষ ভাবে বানানো, সেটি বুঝতে পারে রক্তিম। এর সাথে তাঁর গলায় ঝুলছে একটি দামী পাঁচ নলীর সোনার হাড়। সোনার প্রতিটি নলীর মাঝ বরাবর ঝুলছিল একটি করে উজ্জল লাল রঙের পাথর, তবে শেষ নলীর পাথরটি যেন তলীয়ে গিয়েছিল আহেলির সুডোল স্তনজোড়ার খাঁজের মাঝে। যেই হাড় পড়ে বিশেষত নাড়ীরা নিজেদের শোভা বাড়ায়, সেই হাড়কেই যেন আজ আহেলির নিজের বক্ষে স্থান দিয়ে উলটো হাড়ের শোভা বারিয়েছে।

এদিকে সেই সোনালি জরির কাজ করা চোলির নিচে উন্মুক্ত রয়েছে আহেলির মেধহীন পেট। সেই পেটে আবার জোড়ান একটি দামী সোনার কোমর বদ্ধনী, যার ওপর দিয়ে পেটের ঠিক মাঝ বরাবর উঁকি মারছে আহেলির নিখুদ ও সুগভীর নাভি। সেই নাভির নিচ বরাবর আবার শক্ত করে গোজা তাঁর খাগড়ার কোঁচ। যেটি তাঁর উলটনো কলশীর ন্যায়ে নিতম্ব বেয়ে বিসৃত হয়েছে তাঁর পায়ের গোড়ালি অব্ধি। সব মিলিয়ে সেই ঘাগরা ও চোলির পোষাকে তাঁকে যেন স্বর্গের থেকে নামা কোন অপ্সরার মতন লাগে রক্তিমের।

“তবে একি এটা তো সেই ঘাগরা যেটা দেড় বছর আগে ও প্রথম টিভিতে আহেলিকে পড়ে থাকতে দেখেছিল!” এই ভাবনাটি মাথায় আসতেই বিস্ময়ে সাথে কপালে দু’ভ্রুর মাঝে সামান্য ভাজ সৃষ্টি হয় রক্তিমের।

এদিকে রক্তিমের অমন নির্বাক প্রতিক্রিয়া দেখে এবার দুজনের মাঝের নীরবতা ভেঙ্গে আহেলি বলে ওঠে- “হ্যালো! মিস্টার? কি দেখছেন বলুন তো? আমি আপনার সাথে কথা বলছি।” এটি বলে কোমরের দু’পাশে হাত রাখে সে।

আহেলির কথাটি কানে যেতেই এবার যেন হুস ফিরে পায় রক্তিম। আহেলির দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে দেখায় কিছুটা লজ্জিত হয় সে। এরপর নিজেকে কিছুটা ধাতস্ত করে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে ওঠে,- “না কিছু না। আমি ভাবছিলাম এতো গরমে আপনি এমন ভারী পোশাক ও গয়না পড়ে এসেছেন।”

এটি শুনে আহেলি নিজের দিকে এক বার তাকিয়ে মুখে আবার আগের মতন মিষ্টি হাঁসি ফিরিয়ে এনে বলে ওঠে,- “ওহহ্‌ তাই বলুন। আমি তো ভাবলাম আমাকে দেখে বোধয় আপনার স্ত্রীয়ের কথা মনে পরে গেল। সে যাই হোক, আমি আহেলি সান্যাল।” নিজের পরিচয় দিয়ে হ্যান্ডশেকের জন্য রক্তিমের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় আহেলি। [তবে সেই পরিচয়ের খুব একটি দরকার ছিল না]

এদিকে রক্তিমও প্রতিক্রিয়া স্বরূপ নিজের ডান হাত বাড়িয়ে আহেলির নরম হাত স্পর্শ করে এবং স্পর্শ করা মাত্রই যেন একটা প্রবল বৈদ্যুতিক শিহরণ খেলে যায় তাঁর সমগ্র শরীর জুড়ে। তবে সেটি বুঝতে না দিয়ে নিজের কন্ঠস্বর কিছুটা ভারী করে রক্তিম বলে ওঠে- “নমস্কার আমি রক্তিম, রক্তিম বাগচী। আপনার সাময়িক দেহরক্ষী।”

এরপর তাঁদের করমর্দনের প্রক্রিয়া শেষ হলে আহেলি লাস্যময়ী ভঙ্গীতে হেঁসে বলে ওঠে, -“তো মিস্টার! কার কথা ভাবা হচ্ছিল শুনি, প্রেমিকা না স্ত্রী? তাঁর জন্য মন খারাপ করছে নিশ্চয়ই!”

-“ক্ষমা করবেন, আমি বিবাহিত নই। এছাড়াও প্রেম টেমের বিষয়ে আমি নেই। সুতরাং মন খারাপের প্রশ্নই এসে না।” স্পষ্ট ভাষায় বলে ওঠে রক্তিম।

-“যা…আপনাকে দেখে তো খুব সিরিয়াস মনে হচ্ছে।[একটি দীর্ঘ বিরতি নিয়ে] সে যাই হোক, গার্লফ্রেন্ড-ট্রালফ্রেন্ড থাকলে একটু কষ্ট হত বৈ কি। তবে নেই যেহেতু, তবে তো বেশ ভালো কথা। কারণ [আবারও একটু বিরতি নিয়ে মুখে দুষ্টুমির হাঁসি এনে চাপা স্বরে বলে ওঠে] আগামী একমাস আমি আপনার পথ ছাড়ছি না।” আহেলি এতটুকু বলে উঠতেই দুটি নিল কোর্ট পরিহিত লোক এসে হাজির হয় তাঁদের মাঝে। রক্তিম দেখে তাঁদের দু’হাতে বেশ বড় আঁকারের লাগেজ ব্যাগ। রক্তিমকে বিস্ময়ের সাথে তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহেলি বলে ওঠে, -“এরা হচ্ছে আমার সহকারী। এদের নাম রফিক ও ইমরান।”

এটি বলতেই লোক দুটি নিজের পকেট থেকে আইডি বের করে বাড়িয়ে দেয় রক্তিমের দিকে। তবে রক্তিম হাত নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় এসবের দরকার নেই। এরপর আহেলি রক্তিমকে আসতে বলে পা বাঁড়ায় সামনে বিমানবন্দরের চেকিং সেক্টরের দিকে। পেছন পেছন রক্তিমও তাঁকে অনুসরণ করতে থাকে, তবে তাঁর চোখ নিবদ্ধ থাকে আহেলির গোল নিতম্বের দিকে। তাঁর চলার প্রতি পদক্ষেপে পায়ের তোড়ার খুঞ্ঝুন শব্দের সাথে যেন কেঁপে কেঁপে উঠছিল আহেলির ভরাট নিতম্ব।

এরপর চেকিং সেক্টরের কাছে যেতে একজন ব্যক্তি রক্তিমের হাতে থাকা স্যুটকেস দুটি নিজের কাছে চাওয়ায় রক্তিমের মনোযোগ ফিরে। তাঁর পোশাক দেখে রক্তিম বোঝে সে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষী। সুতরাং বিমানবন্দরের নিয়ম অনুযায়ী রক্তিম তাঁর হাতে ধরা সুটকেস দুটি ধরিয়ে দেয় সেই লোকটির হাতে।

এরপর বেশ কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সমস্ত ব্যাগের পরীক্ষা হয়। তবে সেগুলির মাঝে রক্তিম লক্ষ্য করে একটি ব্যাগ যেন কোন রকম পরীক্ষা ছারাই আগে এগিয়ে যায় সকলের চোখের সামনে। যে ব্যাগটি বিনা চেকিং-এ বেরিয়ে যায় সেটি ছিল আহেলির। তবে বিষয়টি সকলের চোখের সামনে ঘটায় সে নিয়ে আর বেশী মাথা ঘামাল না রক্তিম।

ব্যাগদুটির মধ্যে সুটকেসটি হাতে পেতেই এবার রক্তিমকে আহেলির সহকারীরা নির্দেশ দেয় প্লেনে গিয়ে বসতে। তবে যাওয়ার আগে রক্তিম দেখে আহেলি যেন ফোনে কার সাথে কথা বলছে। ফোনের ওপাশের লোকটির জন্য বোধয় সে বেশ বিরক্ত। তবে সে দিকে আর মন নিয়ে সে পা বাঁড়ায় সামনে বিমানের দিকে। তাঁর কাজ তো শুধু তাঁকে সুরক্ষা প্রদান করা, আহেলির ব্যক্তিগত বিষয়ে মাথা ঘামানো তো নয়।

এরপর গ্রীসের চরা রোদকে খানিকক্ষণের জন্যে মাথায় নিয়ে রানওয়ে পেরিয়ে রক্তিম প্রবেশ করে প্রাইভেট বিমানটির ভেতরে। বিমানটিতে প্রবেশ করেই সে প্রথমে এগিয়ে যায় পাইলট কেবিনের দিকে। পাইলটকে ইতিমধ্যেই সেখানে বসে থাকতে দেখে রক্তিম তাঁকে জিজ্ঞাসা করে যে তাঁদের এই প্যারিস পর্যন্ত যাত্রাকাল কতক্ষণের হবে। এরপর পাইলটের কথা অনুসারে সে যা বোঝে তা হল, একভাবে চলতে থাকলে তাঁদের যাত্রা ৯ থেকে ১০ ঘন্টার হবে। এরপর পাইলট এও বুঝিয়ে দেয় যে তাঁরা আহেলির ম্যানেজারের বিমানে না ওঠা পর্যন্ত বিমানটি ছাড়তে পারবে না। এমন সময়ে আহেলির সেই কর্মচারীদের মধ্যে একজন এসে রক্তিমকে ডেকে দেখিয়ে দেয় তাঁর জন্য বরাদ্দ করা ঘর। ঘটিতে ঢুকেই রক্তিম দেখে তাঁর লাগেজটি যেন ইতিমধ্যে তাঁরও আগে সেখানে পৌঁছে অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য।

ঘরটি যেন কোন ফাইভ স্টার হোটেলের ঘরের চেয়ে কোন অংশে কম যায় না। বিমানে তাঁর জন্য বরাদ্দ সেই ঘরটি সাজানো রয়েছে বিভিন্ন নামি-দামী বিলাস বহুল জিনিস দিয়ে। দরজা দিয়ে ঢুকেই তাঁর ডান পাশে রয়েছে একটি রাজকীয় পালঙ্ক। পালঙ্কের ডানপাশে চারজিং পয়েন্ট সহ একটি ল্যাম্প ও ল্যাপটপ বা ফোন রাখার জন্য একটি ছোট্ট টেবিল। এছাড়াও পালঙ্কের ঠিক মাথার ওপরের দেওয়ালটিতে রয়েছে “বার্থ অফ ভেনাস” এর একটি নগ্ন পেন্টিং এবং তাঁর ঠিক বিপরীত দিকে অর্থাৎ দরজার বাম পাশে রয়েছে একটি ৭২’’ইঞ্চির কার্ভড প্লাজমা টিভি।

ঘরটিতে ধুকেই রক্তিমের মনে পরে যায় যে এটি সেই ঘর যেটি কয়েক মাস আগেই আহেলি নিজে টিভি রিপোর্টারের আঙ্কারের ন্যায়ে নিজের হাতে মাইক ধরে খবরের চ্যানেল ও নিজের অফিসিয়াল ফ্যান পেজে লাইভ পরিদর্শন করিয়েছিল সকলকে। এটি মনে পরার সাথে তাঁর মুখ দিয়ে আপনা থেকেই একটি কথা বেরিয়ে এসে,-
“ধনী বাপের মেয়ে হবার এটাই সুবিধা” এবং এটি বলার সাথে সে গিয়ে বসে সামনের সেই রাজকীয় নরম পালকটির ওপরে। এরপর সে পালঙ্কের হলুদ চাদরটির ওপর হাত বুলিয়ে কল্পনা করতে থাকে আজকের দেখা তার সুন্দরী রমণীটিকে। তাঁর মনে পরে সেদিন নিউস চ্যানেলে এই ঘরটির প্রশংসা করতে করতে আহেলি লাস্যময়ী ভঙ্গীতে খানিকক্ষণের জন্য নিজের শরীরটিকে এলিয়ে দিয়েছিল এই পালঙ্কটির ওপরে। রক্তিমের মনে হয় চাদরটির ওপর নাক ঠেকালে হয়তো এখনও সে পাবে আহেলির শরীরের মিষ্টি সুভাষ।

এই ভেবে সামান্য ঝুঁকে যেই না সে বিছানার চাদরে নিজের নাক ঠেকাতে যাবে ঠিক সেই সময়ে যেন দরজার কাছে একটি পদধ্বনি শুনতে পায় রক্তিম। অকস্মাৎ আসা সেই শব্দে প্রশিক্ষণের প্রতিটি বিষয় তৎক্ষণাৎ মাথা চারা দিয়ে ওঠে রক্তিমের। এবং সেরই সাথে তাঁর ডান হাতটিও দ্রুত চলে যায় তাঁর বেল্টের কাছে এবং কোমরের হোলস্টার থেকে বন্দুকটি টেনে বের করে দরজার দিকে দৌড়ে যায় সে।

[এখনও পর্যন্ত গল্পটি ভালো লেগে থাকলে চোখ রাখুন আমার আনা এই নতুন উদ্যোগ কিছু না বলা কথার দেহরক্ষী পর্বগুলি]

চলবে…

লেখিকা- স্নেহা মুখার্জি