গৃহবধূ যখন সেলিব্রিটি! পর্ব ১১

গৃহবধূ যখন সেলিব্রিটি! পর্ব ১০

আমাকে দেখে ভুত দেখার মতন করে চমকে উঠে বাবা আর রত্না আণ্টি একে অপরকে ছেড়ে উঠে পড়ে। চট জলদি কাপড় চোপর ঠিক করে নিয়ে বাবা আমাকে গম্ভীর গলায় ” তুই এইসময় বাড়িতে? স্কুলের কি হলো।” প্রশ্ন করলে আমি স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যাওয়ার আসল কারণ বাক্ত করি। আমার উত্তর শুনে বাবা বেশ কিছুক্ষনের জন্য চুপ করে যায়। পাসে বাবাকে আমার উপস্থিতির কারণে প্রথম বার বেশ বিরক্ত মনে হয়। তার শার্টের কলারে লিপস্টিক এর মার্ক এর দিকে আমার চোখ গিয়েছিল। বাবা ওটা লোকাতে ভুলে গেছিল। অন্যদিকে রত্না আণ্টি বাবার অবস্থা মুচকি মুচকি হাসছিল নিজের পার্স জাতীয় ছোট ব্যাগ খুলে ছোট আয়না মুখের সামনে ধরে একই সঙ্গে একটা লিপস্টিক বার করে ঠোঁটের রং ঠিক করছিল।

বাবার শার্টের কলার এর লিপস্টিক মার্ক টা কোথা থেকে আসল সেটা বুঝতে আমার আর বাকি রইলো না । আমি মিনিট পাঁচেক ওখানেই দাড়িয়ে ছিলাম।।তারপর বাবা বেশ কড়া গলায় আমাকে আদেশ দেয়, ” এখানে আর দাড়িয়ে থাকতে হবে না। এসেছ যখন সোজা নিজের ঘরে চলে যাও, ড্রেস ছেড়ে হাতে মুখে জল দিয়ে নতুন কেনা গল্পের বই গুলো চোখ বোলাও। আর একটা কথা দুই ঘণ্টার আগে নিজের ঘর থেকে একেবারে বেরিয় না। বুঝতে পেরেছো? ”

আমি মাথা নেড়ে সোজা বাবার আদেশ পালন করতে স্কুল ব্যাগ নিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে যাই। ঘরে যেতে যেতে শুনি রত্না আণ্টি বাবার গলা জড়িয়ে বলছে, ” কি গো আজ বুঝি তোমার ঠান্ডা হতে দু ঘণ্টা সময় লাগবে। হা হা হা হা….” বাবা কোনো জবাব দেয় না। রত্না আণ্টি বলে ” চলো আমরা তোমার বেডরুমে যাই, তোমার ছেলে রাহুল কোনো দরকার পড়লে আবার এখানে চলে আসলে তুমি ফের ওর সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়বে। ঘরে গিয়ে করলে আমাদের কেউ বিরক্ত করবে না।” বাবা বললো, ” তাই চলো। আমি আর পারছি না। অনেক কষ্ট অনেক যন্ত্রণা জমে উঠেছে বুকের ভেতরে, তোমাকে পেয়ে একটু একটু করে মনের সব জ্বালা মেটাবো” ।

বাবা দুই ঘণ্টা সময় দিয়েছিল, তিনঘন্টা নিজের ঘরে কাটিয়ে আমি কোনো শব্দ না পেয়ে দুরু দুরু বুকে বাইরে এসেছিলাম। বাবার ঘরের দরজা আধ খোলা রয়েছে দেখে এগিয়ে গেলাম। আর বাবার রুমের সামনে যেতেই একটা চমকপ্রদ দৃশ্য আমার চোখে পড়লো। বাবা বিছানায় আধ শোওয়া টপলেস অবস্থায় বসে ড্রিঙ্ক করছে। তার পায়ের দিক কোমরের নিচে বেড শিট জড়ানো ছিল, প্যান্ট পরা আছে কি নেই সেটা বুঝতে পারলাম না। এমত অবস্থায় কয়েক মুহূর্তে র মধ্যে বাবার সামনে রত্না আণ্টি স্নান সেরে একটা টাওয়েল জড়িয়ে এসে বাবার সামনে এসে দাড়ালো।

বাবার খালি হয়ে আসা মদের গ্লাসে নিজেই বোতল এর ছিপি খুলে মদ ঢেলে দিল। ড্রিংকে জল মেশাল না। অর্ধেক টা খেয়ে বাবা ঐ নিজের এটো করা গ্লাস টা রত্না আন্টির দিকে এগিয়ে দিল। রত্না আণ্টি বাবার দেওয়া গ্লাসে একটা ছোট চুমুক দিয়ে বাবাকে গ্লাস টা ফেরত দিয়ে তার কোলের কাছে বসে বাবার মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো, ” কি গো আজ রাত টা থেকে যাই তোমার এখানে। ”

বাবা গ্লাসের পাণীয় টে চুমুক দিয়ে মাথা নেড়ে রত্না আন্টি র আবদারে সম্মতি দিল। আমি আর দাড়ালাম না। নিজের ঘরে ফেরত চলে আসলাম। রত্না আন্টি বাবার জীবনে আসার পর রাত আমার বাবাও একটু একটু করে নৈতিক অধঃপতনের দিকে এগিয়ে যায়। এরপর থেকেই রত্না আন্টির বাবার শারীরিক আর মানষিক চাহিদা মেটাতে আমাদের বাড়িতে রাত কাটানো একটা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়। অন্যদিকে মার মুম্বাই এর অ্যাকট্রেস মডেল লাইফ স্টাইল আপন গতিতে চলছিল।

তিন চার মাস যখন মার থেকে কোনো ফোন কল লেটার, বা খবর আসলো না। আমরা বুঝতে পারলাম মা আমাদের কে নিজের জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলতে উদ্যত হয়েছে। মুম্বাই টে সাত আট মাস কাটানোর পর থেকে মার আর্থিক দাবি সব সময় হাই রেঞ্জের হাওয়ার ফলে সব সংস্থা মা লম্বা চুক্তি সাইন করতে অফার করছিল। মাও এই সব অফার পেয়ে প্রলুব্ধ হচ্ছিল। রুচিকা আণ্টি দের মতন মার সহচর জোটায় মা সবকিছুর উপর টাকা র মূল্য তাই প্রধান বিচার্য বিষয় করে ফেলেছিল।

নতুন কন্ত্রাক গুলো সই করার সময় তাড়াতাড়ি মোটা অঙ্কের সাইনিং আমৌন্ট পাবার লোভে অন্ধ হয়ে কন্ট্রাক্ট পেপার গুলো ভালো করে চেক না করেই , শুধুমাত্র রূচিকা আণ্টি দের প্ররোচনায় ঐ সব কোম্পানির রিপ্রেজেন্ট টাটিভ দের মুখের কথা বিশ্বাস করে একটার পর একটা কন্ট্রাক্ট এ সাইন করছিল। তারফলে ওতে যেসব আপত্তিকর শর্ত গুলো ছিল সেগুলো মা কে পর পর মুখ বুজে মেনে চলতে হচ্ছিল। মার ব্যাক্তিগত জীবন ও এই সব কোম্পানি ওনার দের নাগালের বাইরে ছিল না। এই চুক্তি গুলো সই করার ফলে তাদের কর্পোরেট পার্টি টে মার যাওয়া, তারপর ঐ সব কোম্পানির মেজর শেয়ার। স্টক হোল্ডার দের সঙ্গে ক্লাবে অথবা পাবে গিয়ে ওঠা বসা মার ব্যাস্ত জীবনে স্বাভাবিক রুটিন বনে গেলো।

মা যত তাড়াতাড়ি উপরে উঠছিল ততই তার অ্যাপীয়রেন্স মানি বাড়ছিল। রেভ পার্টির ছবি লিক হবার পরেও মার এইসব নৈশ পার্টির প্রতি আকর্ষণ মোহ কোনোটাই কমলো না। বরংচ বেড়েই চললো। এমন সব মানুষের পার্টি টে মা যাওয়া আরম্ভ করলো যেখানে সাধারণত কোনো ভদ্র বাড়ির মেয়েরা যায় না।

নিশা রুচিকা আন্টিরা ভালো চড়া আপিয়ারেন্স মানির বিনিময়ে মা কে এক উচ্ছিংখল শ্রেণীর হাই প্রোফাইল মানুষের হাই ক্লাস নাইট পার্টি টে নিয়ে যাওয়া শুরু করেছিল। ঐ সব পার্টি টে পোশাক আশাক এর কোনো বাধ বিচার ছিল না। বরং চ যত শরীর দেখানো পোশাক পড়ে পার্টি টে উপস্থিত বড়ো মানুষ দের গায়ে পরে মনোরঞ্জন করতে তত বেশি পেমেন্ট পাওয়া যাবে এটাই ছিল এই পার্টি আপেয়ারেনস এর সূত্র। সেরকম উচু লেভেল মালদার ব্যাক্তির পার্টি হলে, চার পাঁচ ঘণ্টা পার্টি টে উপস্থিত থেকে পার্টির উত্তাপ আর শোভা বাড়ানোর জন্য এক লাখ টাকা রোজগার করাও কোনো ব্যাপার ছিল না।

এছাড়া হাই ক্লাস বিয়ের ফাংশনে ড্যান্স ট্রুপের সঙ্গে নাচ এর শো টে পারফর্ম করা, কর্পোরেট প্রোগ্রাম হোস্ট করা ছিল মায়ের জন্য অর্গানাইজার দের অন্যতম পছন্দের কাজ। আরো এক মাস বাদে, রুচিকা আন্টিদের সৌজন্যে মার আর্থিক চাহিদা আর কাজের মানসিকতা দুটোই পালটে গেছিল। শর্ট কাট পথে কিভাবে বেশি টাকা রোজগার করা যায় মা সেই দিকেই নজর দিতে আরম্ভ করেছিল।

মুম্বাই এবং মুম্বাই এর আশে পাশে শহরতলী টে প্রচুর খোলা স্টেজের প্রোগ্রাম বছর ভর হতে দেখা যায়, সেখানকার ছোট বড়ো নানা অর্গানাইজার এর সঙ্গেও রুচিকা আন্টি দের সৌজন্যে মার সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপন হলো। মা প্রথমে এইসব খোলা স্টেজের প্রোগ্রাম এড়িয়ে গেলে,এক টা সময় আরোও বেশি টাকা রোজগার করার নেশা টে ঐ সব ছোট স্টেজ ও করতে শুরু করলো।

ঐ ধরনের যে ধরনের মহল থাকতো, যে ধরনের অশ্লীল আইটেম গানে র সাথে নাচ গান হতো টা মোটেই সুস্থ সংস্কৃতির বাহক ছিল না। ওখানে দর্শক দের ক্লাস ও ছিল বেশ নিম্ন বিকৃত মানের। কোনো কোনো দর্শক নেশা করে স্টেজের সামনে মায়ের মাত্র দুই হাতের মধ্যে চলে আসতো। মাঝে মধ্যেই দর্শক এত কাছে এসে মায়ের নোটিশ পাওয়ার জন্য তাকে উতপ্ত করার চেষ্টা করতো যে মায়ের নিরাপত্তা প্রশ্নের মধ্যে এসে যেত। মাও এই সব শো টে পারফর্ম করতে একেবারে পছন্দ করত না।

কিন্তু টাকার জন্য রুচিকা আন্টিদের কথায় এসে দিনের পর দিন ঐ সন্ধ্যা রাতে ঐ অসুস্থ পরিবেশে গিয়ে পারফর্ম করার অভ্যাস করতে হয়েছিল। নিজের নাচের কলা আপগ্রেড করার ব্যাপারে মা ভীষণ আগ্রহী ছিল। সেই জন্য গুরুজীর কাছে প্রশিক্ষণ ও নিয়েছিল। হাই ক্লাস পার্টির অনুষ্ঠানে মার নৃত্য শৈলী বার বার প্রশংসার মুখে পড়লেও, ঐ সব ছোট খাটো স্টেজ শো টে পারফর্ম করার কিছুদিনের মধ্যে মা ভালো করে বুঝতে পারলো। যে ঐ সব শোর দর্শক অর্গানাইজার রা কেউ তার নাচের কলা দেখতে তাকে কারি কারি নোট দিয়ে ভাড়া করে নিয়ে আসছে না, তারা চায় মশলাদার পারফরমেন্স, যাতে নৃত্য শৈলীর থেকে প্রতি মুহূর্তে শরীরী আবেদন বেশি থাকবে।

প্রথম দিকে এই লেভেলে দর্শক দের দাবি অনুযায়ী পারফর্ম করতে মার প্রতি মুহূর্তে অসুবিধার মুখে পড়লেও খুব দ্রুত আমার মা অরফে মিস মোহিনী এই ছোট বড় খোলা স্টেজে পারফর্ম করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়। এর জন্য অবশ্য মা নিজের রুচি বোধ কে অনেক টা নিচে নামাতে হয়েছিল। এই ভাবে অতিরিক্ত অর্থের জন্য স্টেজ শো করা শুরু করবার কয়েক সপ্তাহ কাটলো না আমার মা কে একটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হলো। একটা বিশেষ জায়গায় শো করতে গিয়ে মা দেখে যে স্টেজের মধ্যিখানে শাওয়ার ফিট করা হয়েছে।

শো এর উন্মাদনা বাড়াতে মা কে হট একটা ইন্দো ওয়েস্টার্ন কালেকশন এর আউটফিট পরে শাওয়ার এর মাঝে অবিরাম বারি ধারার মধ্যে দাড়িয়ে নাচ করতে হবে। মা প্রথমে খোলা অডিয়েন্সের সামনে অর্গানাইজার দাবি অনুযায়ী নাচতে অস্বীকার করে, এই নিয়ে মার সঙ্গে অর্গানাইজার দের ব্যাক স্টেজে ঝামেলা শুরু হয়ে যায়। মা কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না অ্যাডভান্স পর্যন্ত ফিরিয়ে দিচ্ছিল।

মা ওখান থেকে শো না করে বেরিয়ে আসতে যাবে কিন্তু একজন সমাজ বিরোধী হটাৎ দল বল নিয়ে মার চেঞ্জ রুমের ভেতর ঢুকে পড়ে, মায়ের ড্যান্স ট্রুপের অন্যান্য আর্টিস্ট যারা প্রস্তুতি করছিল তারা ভয় পেয়ে জরো সরো হয়ে পড়ে। ও ঐ সমাজ বিরোধী এলাকার দাদা হওয়ায় একেবারে মার সামনে চলে যায়, তাকে রিভলবার বার করে শাসায় যে অনুষ্ঠান দেখতে তার বন্ধু বান্ধব রা অনেক দূর থেকে এসেছে তাই শো না করে মা কিছুতেই এলাকা ছাড়তে পারবে না। তারপরেও যদি মা গোয়াতুর্মি করে শো না করে বেরোতে চায় তাহলে ওরা লাশ পর্যন্ত ফেলে দেবে।

মা ওদের কে বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু কোনো ফল হয় না। এর পর কার্যত বাধ্য হয়ে মা কে ওদের প্রস্তাব মেনে স্টেজে আসতে হয়। মা স্টেজে আসতেই মিউজিক আর শাওয়ার চালু হয় , আধ ঘন্টা কোনোভাবে ওখানে সেন্টার স্টেজে শাওয়ার এর নিচে ভিজে অবস্থায় কাটিয়ে মা ব্যাক স্টেজে পালিয়ে আসে। দুই ঘণ্টা স্টেজে থেকে দর্শক দের মনোরঞ্জন করার কন্ট্রাক এ এসেছিল।

আধ ঘন্টায় দর্শক দের সিটি অসাব্য ভাষায় আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে ব্যাক স্টেজে চলে আসায় আবার গন্ডগোল শুরু হয়। মা তখন তার সঙ্গে ম্যানেজার হিসেবে রুচিকা আন্টি কে বলে, ” এটা কোথায় নিয়ে আসলে আমায় ? ভালো করে খোজ খবর নিয়ে বুকিং নেবে তো।” রুচিকা আন্টি বললো, ভালো পেমেন্ট দিয়েছে, তাই তো কনফার্ম করলাম। তুমি এসব ওপেন স্টেজে করো নি তাই এরকম লাগছে।”

মা বিরক্ত হয়ে, ” রাখো তোমার পেমেন্ট, এরকম বেইজ্জত জীবনে হই নি। পুলিশে এ খবর দাও আমি আর কন্টিনিউ করেতে পারবো না। আমাকে বের করে নিয়ে যাক” রুচিকা আন্টি: পাগল নাকি পুলিশ কে involved করলে উল্টে আমরাই কেস খেয়ে যাবো। এই সব প্রাইভেট শো র আয় এর কোনো ইনকাম tax হিসাব থাকে না। আর এইধরনের শো অ্যারেঞ্জ করাও বেআইনি। পুলিশ এলে প্রেস ও আসবে, তোমার ই ব্র্যান্ড ইমেজ খারাপ হয়ে যাবে। তার চেয়ে মাথা ঠান্ডা করে শো টা শেষ করে নাও। এই ব্র্যান্ডি টা খেয়ে নাও সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। না হলে ভেজা শরীরে না হয় ঠান্ডা লেগে যাবে, সামনে লম্বা শুটিং এর সিডিউল আছে।”

এই ভাবে রুচিকা আন্টি মা কে ড্রিঙ্ক করিয়ে স্টেজে তুলে দিলো। স্টেজে সেদিন মা ওঠার পর এমন নাচ নেচেছিল্ যে যারা তাকে শাসিয়েছিল তারাই কাধে তুলে নাচতে নাচতে মা কে ব্যাক স্টেজে পৌঁছে দিয়ে গেলো। এই সময় মা আর একটা শর্ট ফিল্ম এ বিশেষ চরিত্রে অ্যাক্টিং করেছিল। যার মধ্যে একটা বেড সিন ও ছিল যেটা সে সময় বেশ পপুলার হয়ে গেছিল। ঐ ফিল্ম টা রিলিস করার পর আমার বাবা তো ঘৃণার চোটে মার নাম নেওয়াই বন্ধ করে দিল।

আমার খুব কষ্ট হতো কিন্তু ঐ বয়েসেই বুঝতে পেরেছিলাম এই ভাবে দিনের পর দিন মাসের পর মাস আমাদের ছেড়ে আলাদা থাকতে থাকতে মার মধ্যে আমাদের প্রতি টান টা কমে গেছিল। হয়তো মা মনে মনে আগের জীবনে ফেরার জন্য আফসোস করত কিন্তু তার চারপাশের রুপোলি পর্দার মায়াবী জগৎ মা কে আষ্ঠে পৃষ্টে এমন ভাবে বেধে ফেলেছিল, যে তার আগের শান্তি ময় জীবনে ফেরার কোনো রাস্তাই বাকি ছিল না।

মা র রূপ লাবণ্য আর জনপ্রিয়তা কে কেন্দ্র করে লাখ লাখ টাকার ইনভেস্টমেন্ট হয়েছিল, সেসব ফেলে বেরিয়ে আসা খুব সহজ ছিল না। তার ই মাঝে অরবিন্দ এর মতন প্রভাবশালী সেলেব সুন্দর দেখতে পুরুষ এর মিষ্টি মিষ্টি কথায় ফেঁসে মা তাকে এত বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছিল। যে তার জন্য মা মুম্বাই এ থাকার এক বছর দুই মাস এর মধ্যেই প্রেগনেন্ট হয়ে পড়ে। তাদের এই বাচ্চাটা কে বাঁচানোর জন্য মা লুকিয়ে অরবিন্দ কে বিয়ে করে নেয়। সুপ্রিয়া মালাকার এর অস্তিত্ব নিজের হাতে শেষ করে দেয়। রু চিকা আন্টি র সহযোগিতায় আর অরবিন্দ এর প্রভাব খাটিয়ে এমন সব পেপার তৈরি করে ফেলে যাতে পরিষ্কার প্রমাণ করে দেওয়া হয় সুপ্রিয়া মালাকার দুই বছর আগে একটা কার অ্যাকসিডেন্ট এ মৃত।

বাবা এই প্রবঞ্চনা প্রথমে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারে নি। সমস্ত ইগো বিসর্জন দিয়ে , মান অভিমান ভুলে সে মার সঙ্গে ঐ সেলিব্রিটি আর্টিস্ট এর বিয়ের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে মুম্বাই ছুটে যায়। বাবা মার সামনাসামনি এসে দাড়ায় হ
কিন্তু মা তখন বাবাকে ছেড়ে নিজের স্বপ্নের পুরুষ কে পেয়ে গেছে। তাই বাবা র সাথে ফিরে এসে আগের মতন হাউস ওয়াইফ লাইফ বাঁচার জন্য কোনো উৎসাহ দেখায় না। তখন মার মুম্বাই যাওয়ার এক বছর তিন মাস কেটে গেছে, মা তখন আর আগের সুপ্রিয়া নয় যে বাবা কে বলে সব সিদ্ধান্ত নেবে, সে তখন একেবারে অন্য ট্রান্সফর্মড নারী। সে সরাসরি আমার জন্য বাবা কে এক কালীন অনেক টাকা অফার করলো।

অরবিন্দ বলেছিল, আমার বাবা যদি চায় ওরা আমাকে এডপ্ট ও করতে পারে। কিন্তু বাবা ওদের প্রস্তাবে রাজি হয় নি। মা কে বেবি বাম্প নিয়ে অরবিন্দ এর সঙ্গে খুশি টে নিজেদের স্টার লাইফ এঞ্জয় করতে দেখে , মা কে তার স্বপ্নের পিছনে ধাওয়া করতে ছেড়ে দেয়। এত বড়ো আত্ম ত্যাগ বাবার পক্ষেই সম্ভব ছিল। মা কে বাবা এটাও বলে আসে দেখো সুপ্রিয়া এই জীবনের পথে খুব জোরে ছুটটে গিয়ে যদি কোনো দিন দেখো তুমি উপর থেকে মাটিতে পড়ে গেছো। আর তোমার সুসময়ের বন্ধুরা তোমাকে স্বার্থপরের মতন ত্যাগ করেছে, তাহলে সংকোচ করো না। আমি একদিন তোমাকে এই জীবন বেছে নেওয়ার জন্য বলে ছিলাম সেই আমিই বলছি, দুঃসময়ে জানবে সব সময়ের জন্য আমাদের বাড়ির দরজা তোমার জন্য খোলা। চলি তা হলে, ভালো থেকো সুপ্রিয়া।” এই কথা বলে বাবার বিদায়ের সময় মার চোখের কোণেও কেনো জানি না জল চলে এসেছিল। সে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু অরবিন্দ তাকে বাবার পিছনে আসবার সুযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি ভেতরে নিয়ে যায়।

মার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওখানেই একটা দীর্ঘ সময় কালের জন্য বিচ্ছেদ পড়ে। মার বাচ্চা তার কোনো খোজ পাওয়া যায় না। শোনা যায় , সম্ভবত প্রেগনেন্ট অবস্থায় ও নিয়মিত পার্টি করার ফলে ডেলিভারির সময় মিস কেরেজ হয়ে যায়। বাচ্চা তাকে হারানোর দুঃখ ভুলতে মা নিজেকে সব সময়ই কাজে আর নেশায় ডুবিয়ে রাখতে শুরু করে। প্রথমে ডিসিপ্লিন দ লাইফ আর পরে চূড়ান্ত বোহেমিয়ান লাইফ স্টাইল বাঁচার পরেও মা ৭ বছর একটানা প্রথম সারির টেলিভিশন নায়িকা রূপে কাজ করতে পেরেছিল।

বাবার সঙ্গে সেই অন্তিম সাক্ষাতের ৫ -৬ বছর মা নিজের স্টার্দমের তুঙ্গে বিরাজ করে, বেশ কয়েকটা হিট সিরিয়াল এ ব্যাক টু ব্যাক অভিনয় করে। অনেক গুলো শর্ট ফিল্ম অসংখ্য কমার্শিয়াল অ্যাড এ কাজ করে প্রচুর টাকা রোজগার করে তার পর হঠাৎ করে নেশার পরিমাণ বাড়তেই তার শরীর জবাব দিতে শুরু করে। সাথে সাথে তার কেরিয়ার এর পতন ও শুরু হয়। পার্টি টে ড্রাগ চালান করবার কাণ্ডে জড়িত থাকার কন্তভার্সি সামনে আসতেই মুম্বাই এর কোনো প্রোডাকশন হাউস মার সঙ্গে কাজের আগ্রহ হারায়।

অরবিন্দ এর সঙ্গে মনোমালিন্যের জোরে ডিভোর্স হয়। এই বিচ্ছেদের পেছনে পর ক্রিয়ার ও প্রভাব ছিল। অরবিন্দ এর সঙ্গে এক টা ড্রাগ রেকেটের সরাসরি যোগাযোগ প্রমাণিত হতেই তার জেল হয়ে যায়, সাথে অরবিন্দের বিবাহিত সঙ্গিনী হিসেবে মা কেও কম হুজ্জত পোহাতে হয় নি। স্টার্দম পর্তির দিকে সেই সময় একদিন হঠাৎ নিজের বিলাস বহুল বাংলো, সব ঐশ্বর্য , কাজ কারবার সব কিছু ফেলে উধাও হয়ে যায়।

শেষে শোনা যায় এক বিদেশি ধনকুবের এর সঙ্গে বিদেশে চলে যায়। আর সেখানে গিয়ে ড্রাগে র রিহ্যাব এ যোগ দেয়। মা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, অরবিন্দ আইনি লড়াই চালানোর এর মার অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে দেয়। মার নিজের হাতে সাজানো মুম্বাই এর বাসস্থান খালি হবার সময় মার ব্যবহৃত কিছু জিনিষ পত্র লোকের মারফত বাবার হাতেও পৌঁছয়। তার মধ্যে মার মুম্বাই আসার পর প্রথম কয়েক মাসের ডায়েরি ছিল।

আমার ১৮ বছরের জন্মদিনের আগের রাতে বাবা আমার মা সম্পর্কে ভালো করে জানবার জন্য ঐ ডায়েরি টি আমার হাতে তুলে দেয়। তাই নিজের চোখে দেখা কানে শোনা ঘট না ছেড়ে এবার মার নিজের জবানিতে তার আমাদের কে ছেড়ে মুম্বাই আসার পর প্রথম কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা আমি পরবর্তী পর্ব গুলোয় তুলে দেওয়ার চেষ্টা করবো। তার পরে একই সাথে আমাদের এই নাটকীয় গল্পের শেষ টাও বলবো।
চলবে…